Breaking News

কর ব্যবস্থায় জটিলতা




ব্যবসার পরিবেশের ১৮৯টি দেশের বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের নিচে আছে শুধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান। এর অন্যতম কারণ আমাদের জটিল কর ব্যবস্থাপনা হলেও বিভিন্ন সময় কর ব্যবস্থা সংস্কারে ব্যবসায়ীদের তাগিদ এতদিন আমলে নেয়নি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
আশার কথা, শেষ পর্যন্ত জটিল ব্যবস্থা ও অদক্ষ কর প্রশাসনের কারণে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়নি এটা স্বীকার করে নিয়ে ১৯৯১ সালের কর আইনের বিধিমালা সংস্কারের সুপারিশ করে অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে এনবিআর। মন্ত্রী সেটি অনুমোদনও করেছেন। আমরা মনে করি, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি, করজাল বাড়ানো এবং করদাতাদের উৎসাহিত করতে দ্রুত এটিকে অনলাইন উপযোগী করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া দরকার।
জানা যায়, প্রতিবছর সংশোধনী আনায় ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন জটিল আকার ধারণ করেছে। ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখে পড়ার ভয়ে নতুন করে কেউ করদাতা হতে উৎসাহিত হয় না। এ কারণেই দেশে লাখো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকার পরও মাত্র ৩২ হাজার প্রতিষ্ঠান সরকারকে ভ্যাট দেয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, করদাতা প্রতিষ্ঠান কম হওয়ায় প্রতিবছর নির্দিষ্ট করদাতাদের ওপর করের বাড়তি বোঝা যোগ হয়। এ জন্য তারা যে শুধু বিরক্ত তা-ই নয়, নতুন প্রতিষ্ঠান করদাতা হতেও ভয় পায়। অথচ সরকারের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে করজাল তথা করদাতা প্রতিষ্ঠান বাড়ানোর বিকল্প নেই। সহজ ও সংক্ষিপ্ত করবিধিমালা তৈরি করা গেলে সেটা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

এনবিআরের সুপারিশের সারসংক্ষেপে কর ব্যবস্থাকে অনলাইন করার ৬টি সুবিধার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থা থাকলে নিবন্ধিত হয়েও ভ্যাট না দেয়া প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা এবং মাসে অন্তত এক লাখ রিটার্ন সংগ্রহ করা কঠিন কিছু হবে না বলা হয়েছে। বিষয়টিতে নজর দেয়া দরকার। কারণ অনলাইন পদ্ধতিতে কর দেয়া সম্ভব হলে সময় বাঁচাতে এবং অহেতুক সরকারি অফিসে দৌড়ানো ও কর্মকর্তাদের বাড়তি ‘খবরদারি’ থেকে মুক্ত হতে ব্যবসায়ীরাও কর দিতে আগ্রহী হবেন বলে আশা করা যায়। কর ব্যবস্থা সংস্কার, বিশেষ করে অনলাইন উপযোগী করার পেছনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ অনেক অর্থ খরচ করেছে, এ ক্ষেত্রে তাদেরও ইতিবাচক ভূমিকা কাজে লাগাতে হবে।

ব্যবসায়ীদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে করদান পদ্ধতি সহজ করা, করহার কমিয়ে করদাতা বাড়ানো হলে দেশে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতির সঞ্চার হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, এমনকি গোটা অর্থনীতির জন্য তা সুফল বয়ে আনবে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বেশি সুযোগ-সুবিধা ও প্রাধান্য না দিয়ে দেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা দরকার। দেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দেখেই বিদেশিরা বিনিয়োগে এগিয়ে আসে, এটা সহজেই অনুমেয়। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের জন্য আরও যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা হল- ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে দ্রুত সব ইউটিলিটি সেবা প্রদান, অবকাঠামো উন্নয়ন ও ভূমি নিবন্ধনে জটিলতা দূর করা, দ্রুত ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ইত্যাদি। করবিধিমালা সংস্কারের পাশাপাশি বিনিয়োগ ও রাজস্বের স্বার্থে সরকার এসব ক্ষেত্রেও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

No comments