আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বিপরীতে সাঈদীপুত্র

উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর-২ নির্বাচনী এলাকা। একটি পৌরসভা আর ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার ৭১৭। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে এখানেও জমে উঠতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জেপি (মঞ্জু)-জামায়াত এবং অন্যান্য দলের নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ। কারা আসছেন জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে তা নিয়ে দলের ভেতর ও বাইরে- এমনকি চায়ের দোকানগুলোতেও চলছে আলোচনা।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৪ দল প্রার্থী ইসাহাক আলী খান পান্না তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু একক প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এমপি হন। বৃহৎ দল হিসেবে আওয়ামী লীগ আগামীতে এখানে এককভাবে নির্বাচন করলে তার সঙ্গে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জেপি ও জামায়াতের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে সবার ধারণা। কারণ এ আসনের ইন্দুরকানি উপজেলা জামায়াতের ভোট ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এছাড়া কাউখালী আর ভাণ্ডারিয়া উপজেলায়ও রয়েছে তাদের যথেষ্ট প্রভাব। তাই পিরোজপুর-২ আসনের নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ নিয়ে কেন্দ্রীয় পর্যায়েও বিভিন্ন দলের মধ্যে চলছে বেশ তোড়জোড়। এ কারণে আসনটি ‘প্রেস্টিজ’ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন দলের নেতাদের জন্য।
৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের আগে হওয়া আসন পুনর্বিন্যাসে পিরোজপুর-১ আসনের ইন্দুরকানি উপজেলা (তৎকালীন জিয়ানগর) যোগ হয় পিরোজপুর-২ আসনের সঙ্গে। এর আগে পিরোজপুর-২ আসনের সঙ্গে থাকা নেছারাবাদ চলে যায় পিরোজপুর-১ আসনে। আগামী নির্বাচনে নতুন করে আসন পুনর্বিন্যাস না হলে পিরোজপুর-২ আসনে মর্যাদার লড়াইয়ে কোন দলের প্রার্থী বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে আনবেন সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি।
১৯৯৬ ও ২০০১’র সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত অ্যাডভোকেট সুধাংশু শেখর হালদার পর পর দু’বার হেরে যান জামায়াতের প্রার্থী যুদ্ধাপরাধ মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর কাছে। সাঈদীর নিজ বাড়ি ইন্দুরকানি উপজেলা জামায়াতের বেশ শক্ত ঘাঁটি। এখানে সাঈদীর বিপুল জনসমর্থন থাকার সুযোগে তার ছেলে মাসুদ সাঈদী সেখানকার উপজেলার চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছেন। এরকম পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে সাঈদীর ছেলে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী এখানে প্রার্র্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এরকম কিছু হলে বিষয়টি সুখকর হবে না বর্তমান এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু কিংবা অন্য দলগুলোর মনোনয়ন প্রার্থীদের জন্য। তাছাড়া আওয়ামী লীগ যেমন এখানে সবসময় ছাড় দেয় তাদের মহাজোটের অংশীদার দল জেপিকে (মঞ্জু) তেমনি বিএনপিও যে জামায়াতকে আসনটি ছেড়ে দেবে না তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। কেননা যুগ যুগ ধরে এখানে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আর জনসমর্থনে যেভাবে একক অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সেখানে মাসুদ সাঈদীর মতো নতুন ক্রেজ ছাড়া তাকে ঠেকানো যে মুশকিল সেটা বিএনপিও জানে। তাই হয়তো নিজ দলের কাউকে না দিয়ে মাসুদ সাঈদীকে দিয়েই তারা জমাতে চাইবে ভোট যুদ্ধের মাঠ।
এ আসনের বর্তমান এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তার নিজের দল জেপি থেকে অথবা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে ঐক্য অনুযায়ী মহাজোট থেকে যে আবারও প্রার্থী হবেন সেটা প্রায় নিশ্চিত। এখানে মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির সভাপতি গাজী নুরুজ্জামান বাবুল এবং বিএনপির সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের ছেলে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহমেদ সোহেল মনজুর সুমন। এছাড়া প্রার্থী হতে চাচ্ছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কাউখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি এসএম আহসান কবীর। বয়সে তরুণ হলেও এলাকার জনগণ তাকে দু’বার বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে। তবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতপন্থী কোনো নেতা বা সাঈদীর ছেলে নির্বাচনে এলে সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে নেবেন বলে জানান আহসান। এখানে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পরিবার কল্যাণবিষয়ক সহ-সম্পাদক এবং বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ড্যাব নেতা অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুল কবির লাবু। ভাণ্ডারিয়ায় শক্তিশালী পারিবারিক বলয় রয়েছে তার।
ভাণ্ডারিয়া উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান জেপির (মঞ্জু) প্রভাবশালী নেতা আতিকুল ইসলাম তালুকদার তার ছোট ভাই। তার মামা জেপির (মঞ্জু) আরেক প্রভাবশালী নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনি জমাদ্দার। তাছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এনায়েত খান তার মামাতো ভাই। দলীয় মনোনয়ন প্রার্র্থী হিসেবে তিনি বলেন, ‘দলের জন্য জান-প্রাণ দিয়ে কাজ করছি। বাকি সিদ্ধান্ত নেবে দল। দলের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।’
ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রার্থী হিসেবে এখানে এখন পর্যন্ত যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- আওয়ামী লীগের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ভাণ্ডারিয়ার সন্তান অ্যাডভোকেট এমএ হাকিম হাওলাদার, কাউখালী উপজেলার বাসিন্দা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ইসাহাক আলী খান পান্না, বাংলাদেশ আওয়ামী সমবায় লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি সভাপতি ভাণ্ডারিয়া পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আমিনুর রশিদ ছগির জোমাদ্দার, পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান এবং ভাণ্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম। এ ছাড়াও এখানে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অংশীদার বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
No comments