কেমন নির্বাচন চাই

প্রশাসনকে দেখতে চায় নিরপেক্ষ ও জনবান্ধব। সব দল ও মতের মানুষ যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে সে পরিবেশ চায় জনগণ। নির্বাচন কমিশন হবে সরকারের চাপমুক্ত, সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ। প্রশ্ন হল, বর্তমান নির্বাচন কমিশন কি তেমন একটি পরিবেশ তৈরি করবে? যদি করে, জনগণের কাছে ইসি চিরদিন প্রশংসিত হবে। ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে তাদের নাম। আর যদি সরকার ও ইসি তেমন পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশে নতুন করে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে। হানাহানি অস্থিরতার দিকে যাবে দেশ।অতীতের নির্বাচনগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যখন যে দল ক্ষমতায় ছিল সে দল নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছিল। এ বাস্তবতায় জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো বর্তমান সরকারকে আস্থায় আনতে পারছে না। কারণ তাদের শাসনে গত নির্বাচনে জনগণকে ভোট না দিয়েই কেন্দ্র থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। অনেক কেন্দ্রে আগেই ভোট দেয়া শেষ হয়ে গেছে। নির্বাচনের দায়িত্বে যারা ছিল, তারা পছন্দসই লোকদের দিয়ে ভোটবাক্স ভর্তি করে রেখেছে। এসব মাথায় রেখে বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে সামনে এগোতে হবে। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে সে নির্বাচন দেশ-বিদেশে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
নির্বাচন সামনে রেখে জনগণ চায় কালো টাকার দাপট বন্ধ হোক। দুর্নীতিবাজদের যেন প্রার্থী করা না হয়। সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, ফৌজদারি মামলার আসামিদের কোনো দলের প্রার্থী করা হোক, জনগণ তা চায় না। সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বাছাই করে মনোনয়ন দেয়া হলে জনগণ অবশ্যই তাদের নির্বাচিত করবে। অসৎ ব্যবসায়ী, ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারকারী, এমন ধরনের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলে জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করবে। এসব বিবেচনায় নিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর যেসব বিষয় সামনে আনা দরকার তা হল, যদি তারা নির্বাচিত হন তাহলে তারা কী করবেন, এলাকা ও দেশের মানুষের জন্য তা নির্ধারণ করতে হবে। প্রথমত, যেসব এলাকা নানা কারণে পিছিয়ে আছে, সেসব এলাকার সমস্যা চিহ্নিত করে এলাকাভিত্তিক উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ প্রার্থীকে জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। যেমন- পাহাড় রক্ষা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বেকার সমস্যার সমাধান, কর্মসংস্থান, বিধবা নারী-পুরুষের কল্যাণে প্রকল্প বাস্তবায়ন ইত্যাদি। জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন- হাটবাজার সংস্কার, নালা-নর্দমা পরিষ্কার করা, জলাবদ্ধতা নিরসন, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধসহ এলাকাভিত্তিক কর্মসূচি চায় জনগণ। সম্পদ আর টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন বিক্রি করা থেকে জাতীয় নেতৃত্বকে দূরে থাকতে হবে।
দল ও নেতাদের বলব, আগামী নির্বাচনে দেশপ্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত প্রার্থীদের খুঁজে বের করে তাদেরকে প্রার্থী হিসেবে সামনে আনুন। তাহলে আপনি ও আপনার দল ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবে। জনগণ আপনাদের পক্ষে রায় দিয়ে দেশ সেবায় সুযোগ দেবে।
মাহমুদুল হক আনসারী : সংগঠক ও গবেষক
No comments