Breaking News

পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে হয়রানি

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর ‘পাসপোর্ট সেবায় সুশাসন : চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পাসপোর্ট সেবাগ্রহীতাদের ৫৫ দশমিক ২ শতাংশ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের শিকার হচ্ছেন। এর মধ্যে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ সেবাগ্রহীতা ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ দিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। প্রতিটি নতুন পাসপোর্টের জন্য একজন আবেদনকারীকে গড়ে ২ হাজার ২২১ টাকা ঘুষ দিতে হয়, যার মধ্যে ৭৫ দশমিক ৩ শতাংশ আবেদনকারীকে ভেরিফিকেশনের জন্য পুলিশের বিশেষ শাখাকে (এসবি) ঘুষ দিতে হয় ৭৯৭ টাকা। এ পরিপ্রেক্ষিতে পাসপোর্ট সেবায় সুশাসন নিশ্চিত করতে পাসপোর্ট আবেদনে পুলিশ ভেরিফিকেশন বিধান বাতিল, সব নাগরিকের জন্য বায়োমেট্রিক ডাটা ব্যাংক ও স্মার্টকার্ড তৈরি করাসহ ১২ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি।


পাসপোর্ট আবেদনকারীদের ভেরিফিকেশনের জন্য পুলিশের এসবিকে ঘুষ প্রদানের অভিযোগ নতুন নয়। ঘুষ প্রদান করা না হলে আবেদনকারীকে পাসপোর্ট পেতে হয়রানি ও সময়ক্ষেপণের শিকার হতে হয়। মানুষ প্রতিনিয়ত এ পরিস্থিতির শিকার হয়। এটি ঠিক, বর্তমানে পাসপোর্ট অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমেছে। তবে ভেরিফিকেশনের রিপোর্ট পেতে পুলিশকে ঘুষ প্রদান বন্ধ হয়নি। এটি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে অহেতুক আবেদনপত্রের ত্রুটি বের করার চেষ্টা, জঙ্গি কার্যক্রম ও অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন স্থানে ডেকে ঘুষ দাবি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে বলা হয়। এটি রীতিমতো অপরাধ। তবে অনেকে অজ্ঞতাবশত স্বপ্রণোদিত হয়েও এই ঘুষ প্রদান করে থাকে। এর মাধ্যমে দুর্নীতি উৎসাহিত হচ্ছে। বস্তুত পাসপোর্ট প্রাপ্তি প্রত্যেক ব্যক্তির নাগরিক অধিকার। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করলে নির্দিষ্ট সময়ে পাসপোর্ট পেতে কারও কোনো হয়রানির শিকার হওয়ার কথা নয়। কিন্তু কার্যত সেটিই ঘটছে। এজন্য ভেরিফিকেশনের পদ্ধতিটি তুলে দেয়াই শ্রেয়। পাসপোর্ট আবেদনকারীদের তথ্য সংগ্রহের জন্য বর্তমানে বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। নাগরিকদের তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ড রয়েছে। তাছাড়া বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতেও ডাটা ব্যাংক গড়ে তোলা যায়। সেক্ষেত্রে অহেতুক ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হয় না। আমরা মনে করি, পাসপোর্ট আবেদনকারীদের হয়রানি রোধে এ সংক্রান্ত টিআইবির সুপারিশটি আমলে নেয়া উচিত।

পাসপোর্ট সেবায় ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ এবং সেবার মান বৃদ্ধির জন্য টিআইবি যে ১২ দফা সুপারিশ দিয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল : পাসপোর্টের আবেদনপত্র পূরণ আরও ব্যবহারবান্ধব এবং ফি জমা দেয়ার ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অন্তর্ভুক্তি; আবেদনপত্র পূরণের নিয়মাবলি এবং সেবা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য নির্দেশিকা ও সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহের উত্তর অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং বিনামূল্যে বিতরণ; বিদ্যমান পুলিশ প্রতিবেদন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মাসিক ভিত্তিতে সমন্বয় সভা আয়োজন এবং পাসপোর্ট বিতরণে বিলম্ব এড়াতে নির্ধারিত তারিখের পূর্বে যৌক্তিক কারণসহ এসএমএসের মাধ্যমে অবহিতকরণ। এছাড়া পাসপোর্ট অফিস ও এসবি পুলিশের যেসব অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে দালালচক্র তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনা এবং দালালের সহযোগিতা নেয়ার বিরুদ্ধে প্রচারণা এবং পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীদের অফিস সময়ে নির্ধারিত পোশাকের ব্যবস্থা এবং পরিচয়পত্র ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা। টিআইবির এসব সুপারিশ আমলে নিয়ে সরকার নাগরিকের পাসপোর্ট সেবায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেবে, এটাই কাম্য।

No comments