ম্যাচ জেতানো স্পেল চান তাসকিন

লাস্ট টু কোয়েশ্চেনস’ বলেই হেসে উঠলেন তাসকিন আহমেদ। হেসে উঠল পুরো সংবাদ সম্মেলনকক্ষ। নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে বাংলাদেশ দলের পেসার নকল মিডিয়া ম্যানেজার হয়েছেন। আসল মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম বক্তার চেয়ারে।

অস্ট্রেলিয়া যে শেষ পর্যন্ত প্রস্তুতি ম্যাচটি খেলবে না, সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতেই তাঁদের এই চেয়ারবদল এবং মিনিটখানেকের জন্য তাসকিনের ‘মিডিয়া ম্যানেজার’ হয়ে যাওয়া। একটু আগে তাঁর সংবাদ সম্মেলনের শেষ ভাগে মিডিয়া ম্যানেজার সাংবাদিকদের উদ্দেশে যা বলেছিলেন, সেই ‘লাস্ট টু কোয়েশ্চেনস’ কথাটা তাসকিন বলে দিলেন এই পর্বের শুরুতেই।
বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে ঝলমলে তরুণ তাসকিন। কখনোই মলিন নন, কখনোই উদাসী নন। ফর্মের ওঠা-নামা, ভালো সময়-খারাপ সময়—একই রকম সব সময়। বদলায় খালি একটা জিনিস—হেয়ার স্টাইল। কখনো এদিক থেকে কাটেন, কখনো ওদিক থেকে। কখনো চুলের কালো রং বাদামি। কখনো বা জেলের ছোঁয়ায় তা শজারুর কাঁটা। ঠিক এই মুহূর্তে মিহি একটা সাদামাটা ‘কাট’ দিয়ে রেখেছেন মাথায়। সেটার নাম কী তাসকিনই ভালো বলতেপারবেন। তবে উদ্দেশ্যটা মূলত গরম থেকে বাঁচা। প্রেক্ষাপটে অস্ট্রেলিয়া সিরিজও অবশ্য আছে। চুল একটু অন্য রকম থাকলে মনোযোগও বারবার সেদিকে চলে যায়। এর চেয়ে কিছু না থাকাই ভালো।
তাসকিন আহমেদচুল, ফ্যাশন—সবকিছু থেকে সরে এসে এ মুহূর্তে সব মনোযোগ একটা জায়গায় কেন্দ্রীভূত করতে চান তাসকিন—অস্ট্রেলিয়া সিরিজ। দেশের মাটিতে নিজের প্রথম টেস্ট সিরিজ নিয়ে একটা লক্ষ্যও আছে তাঁর, ‘তাদের টপ অর্ডারে যারা আছে, সবাই খুব ভালো ফর্মে। অভিজ্ঞরা তো আছেই। নতুনরাও ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে। আমার স্বপ্নের উইকেট ওয়ার্নার-স্মিথ। আর সুযোগ পেলে একটা ম্যাচ উইনিং স্পেল করতে চাই।’
তবে ম্যাচ উইনিং স্পেল মানেই পাঁচ-সাতটা উইকেট নিয়ে নেওয়া নয়। পরিস্থিতির দাবি পূরণ করে এমন কিছু করা যা দলকে
জয়ের দিকে ঘুরিয়ে দেবে। এর সঙ্গে বাড়তি করতে চান পুরোনো বলে রিভার্স সুইং। এ নিয়ে নাকি বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে ব্যাপক কাজও হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে তাসকিনের আসা মানে সেখানে তাঁকে ছাপিয়ে সিরিজের পেস বোলিং-সংক্রান্ত অন্যান্য শাখা-প্রশাখা নিয়েও কথা হবে। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের সামনে কতটা কী করতে পারবেন বাংলাদেশের পেসাররা? অস্ট্রেলিয়ার পেসাররাই বা কেমন করবেন এই কন্ডিশনে? তাসকিন কয়েক লাইনে শেষ করে দিলেন প্রসঙ্গটা, ‘অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা অবশ্যই ভালো। তবে আমরাও ফেলে দেওয়ার মতো নই। আমাদের পেসাররা অনেক বড় বড় ম্যাচ জিতিয়েছে। তা ছাড়া এখানকার উইকেট ওদের চেয়ে আমরা ভালো বুঝি।’
পেসারদের বড় ম্যাচ জেতানোর স্মৃতিটাকে ফিরিয়ে আনলেই মনে পড়ে ভারতের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেকে মোস্তাফিজুর রহমানের কীর্তি। সেটা অবশ্য ওয়ানডেতে। যে চার টেস্ট খেলেছেন তাতে এখনো বাঁহাতি এই পেসারকে সেই রূপে দেখা যায়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩৭ রানে ৪ উইকেট পেয়েছিলেন, যার তিনটি ছিল চার বলের মধ্যে। সেরা বোলিং হয়ে আছে সেটাই। তবে নিজের পেস-সঙ্গীকে নিয়ে আশাবাদী শোনাল তাসকিনের কণ্ঠ, ‘মোস্তাফিজের কাছে সব সময় আমাদের আশা বেশি থাকে। আল্লাহর রহমতে ও আশা পূরণ করেও। শেষ কয়েকটা ম্যাচ হয়তো ভালো যায়নি। বিশ্বের সেরা বোলারদেরও তো দুই-একটা ম্যাচ খারাপ যায়।’
দেশের মাটিতে টেস্ট বলে আশাবাদী হতে পারেন মোস্তাফিজও। তবে এই জায়গায় তাসকিন নিজের ব্যাপারে একেবারেই অন্ধকারে। গত জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডে টেস্ট অভিষেক হওয়ার পর চারটি টেস্টই খেলেছেন বিদেশে! টেস্ট সম্পর্কে এখন পর্যন্ত তাঁর অভিজ্ঞতা হলো, ‘ফরম্যাটটা অনেক কঠিন। পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে হয়। পেসে বৈচিত্র্য লাগে।’ এর বাইরে অবশ্য শারীরিক ফিটনেসটাও জরুরি পেসারদের জন্য, যেটির অভাবে টেস্ট ক্রিকেটে নাম লেখাতে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে তাসকিনকে। তবে গত দুই বছরে কোনো চোটে না পড়ায় ফিটনেস নিয়ে আত্মবিশ্বাস এখন তাঁর কথায়ও ফুটে ওঠে।
আর খেলার আত্মবিশ্বাস তো জোগাচ্ছে বাংলাদেশ দলের গত কয়েক বছরের পারফরম্যান্সই। নিউজিল্যান্ড সিরিজ বাদ দিলে সাফল্য কোথায় নেই! ওয়ানডে থেকে সেটা টেস্টেও সঞ্চারিত। কলম্বোয় শততম টেস্ট জয়ের আগে দেশের মাটিতে সর্বশেষ টেস্টে বাংলাদেশ জিতেছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের ১২ উইকেট পাওয়ার কীর্তিতে রাঙানো ছিল সেই টেস্ট। তাসকিন হয়তো সেসব মনে করেই বললেন, ‘ওদের তুলনায় আমরা হয়তো পিছিয়ে। তবে আমরা এখন আগের চেয়ে ভালো দল। আশা করি, আগে যা করতে পারিনি এখন তা পারব।’
সেটা কি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জয়?

No comments