ধর্ষণের কথা জানালেন বেতাগীর স্কুলশিক্ষিকা
বরগুনার বেতাগী উপজেলায় স্বামীকে বেঁধে রেখে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
শিক্ষিকা তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। মামলা এবং
সাংবাদিকদের কাছে দেয়া অভিযোগে ওই শিক্ষিকা ৬ দুর্বৃত্ত কর্তৃক ধর্ষিতা
হওয়ার কথা বললেও ডাক্তারি পরীক্ষায় তার কোনো প্রমাণ মেলেনি বলে দাবি
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের। এমনকি তরুণী এবং তার স্বামী ভারতীয় নাগরিক নারী ও
শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যে জবানবন্দি
দিয়েছেন, তাতেও তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তেমন কোনো কিছুর উল্লেখ নেই। ওই
তরুণীর জবানবন্দিতে তাকে শুধু বিবস্ত্র করা এবং শ্লীলতাহানির বর্ণনা দেয়া
হয়েছে। যদিও এসব ঘটনা এবং জবানবন্দি দেয়ার পরপরই ভারতে চলে গেছেন তরুণীর
স্বামী। এমনকি স্ত্রীর সঙ্গেও কোনো ধরনের যোগাযোগ করছেন না তিনি। তবে
চিকিৎসকের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন ওই শিক্ষিকা। তিনি বলেন, আমি শতভাগ
নিশ্চিত, পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত প্রমাণিত হবে। বিষয়টি নিয়ে দারুণ মুষড়ে
পড়েছেন ওই শিক্ষিকা। মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছেন তিনি। কথিত এ ধর্ষণের বিচার
দাবিতে সোমবার বেতাগী উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কালো ব্যাজ ধারণ করে
প্রতিবাদ জানান শিক্ষকরা। কালো ব্যাজ পরেই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় ক্লাস
নেন তারা। শিক্ষকরা পুনরায় ধর্ষণের আলামত পরীক্ষার দাবি জানিয়েছেন।
তিন-চারজন ধর্ষণ করে : ঘটনার শিকার তরুণীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে সোমবার
দুপুরে বরগুনার বেতাগী উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে গেলে দেখা মেলে
স্কুলশিক্ষিকার। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আর অসুস্থ অবস্থায় ঘরের ভেতরে
বিছানায় শুয়ে ছিলেন তিনি। ঘরের সামনে একজন সাব ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে
পাহারা দিচ্ছে তিন পুলিশ কনস্টেবল। মামলা হওয়ার পর থেকেই এ পুলিশি
নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে ওই তরুণীকে। সংবাদকর্মী শোনার পর ঘরের ভেতর থেকে
বাইরে আসেন তিনি। ঘটনার দিনের কথা জানতে চাইলে বলেন, ‘কক্ষের ভেতরে নিয়ে
ওরা আমাকে মারধর করে। এরপর তিন-চারজন মিলে হাত-পা চেপে ধরে এবং একজন করে
ধর্ষণ করে।’ ৬ জনের সবাই ধর্ষণ করেছে কিনা জানতে চাইলে না সূচক উত্তর দিয়ে
তিনি বলেন, ‘তিন-চারজন আমাকে ধর্ষণ করে। এরই মধ্যে আমি এবং আমার স্বামী
চিৎকার দিলে লোকজন ছুটে আসে। লোকজন এসে পড়লে তারা আমাদের ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে
যায়।’ এভাবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে
পুরো ঘটনার বর্ণনা কেন দেননি জানতে চাইলে শিক্ষিকা বলেন, ‘ঘটনার পর অত্যন্ত
দ্রুত আমাকে নানা পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়। যে কারণে আমার মাথা ঠিক
ছিল না। তাছাড়া তখন আমি ছিলাম প্রচণ্ড অসুস্থ। কে ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিসি,
বুঝতে পারিনি। কাকে কি বলেছি, তাও মনে নেই।’
ধর্ষণের তিন-চার ঘণ্টার মধ্যেই মেডিকেল পরীক্ষা : বৃহস্পতিবার দুপুরে বেতাগী উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটে কথিত এ ধর্ষণের ঘটনা। ঘটনার পরপরই আলোচ্য শিক্ষিকাকে নেয়া হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। সেখানে ইউএনওর কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয়ার পাশাপাশি অভিযোগ জানান তিনি। বেতাগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ বলেন, ইউএনও অফিস থেকে থানায় আসার পর ধর্ষণের অভিযোগটি লিপিবদ্ধ করা হয়।
খবর পেয়ে বিকাল সাড়ে ৪টা নাগাদ বেতাগীর ঘটনাস্থলে পৌঁছান বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক। নিজেই প্রহরা দিয়ে ওই শিক্ষিকাকে নিয়ে যান জেলা শহর বরগুনায়। পুলিশ সুপার বিজয় বসাক যুগান্তরকে জানান, তাৎক্ষণিকভাবে বরগুনায় এনে মেডিকেল বোর্ডে পাঠানো হয় আলোচ্য শিক্ষিকাকে। যেহেতু রাতে মেডিকেল পরীক্ষা হয় না এবং দেরি হলে ধর্ষণের আলামত নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তাই আমরা কোনোভাবেই বিলম্ব করতে চাইনি। শুধু মেডিকেল পরীক্ষাই নয়, ওইদিনই ভিকটিমের জবানবন্দি নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তার জবানবন্দি নেন। ধর্ষণ ঘটনা সত্যতা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি যেহেতু তদন্তাধীন তাই এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করব না।
ধর্ষণের আলামত মেলেনি, জবানবন্দিতেও নেই : ধর্ষণের অভিযোগে ঘটনার রাতেই বেতাগী থানায় মামলা করেন স্কুলশিক্ষিকা। মামলায় আসামি করা হয় ছয়জনকে। তবে এর আগেই জেলা শহর বরগুনায় সম্পন্ন হয় তার ডাক্তারি পরীক্ষা এবং ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেয়া জবানবন্দি পর্ব। সবকিছু যখন এভাবে চলছিল, ঠিক সেই সময় সোমবার সাংবাদিকদের কাছে দেয়া বক্তব্যে মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. জসিমউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ধর্ষণ সংঘটিত হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যেহেতু তাকে মেডিকেল পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়েছে, তাই ধর্ষণ সংক্রান্ত যাবতীয় আলামত পাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত নিশ্চিত। কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষায় তাকে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তার শরীরে শুধু দুটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এর একটি তার গালে এবং অপরটি পায়ে। এছাড়া তার শরীরে আর যেমন কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি, তেমনি ধর্ষণের কোনো আলামতও মেলেনি।’ সিভিল সার্জনের এ বক্তব্যের পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সংশ্লিষ্ট তরুণীর দেয়া জবানবন্দি নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে প্রশ্নের। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় দেয়া ওই জবানবন্দির কোথাও ধর্ষিত হওয়ার কথা বলেননি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ শিক্ষিকা। সেখানে তাকে শুধু বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানি, ধর্ষণের চেষ্টা এবং মারধর করার কথা বলা হয়েছে। শ্লীলতাহানির এক পর্যায়ে তার চিৎকারে লোকজন চলে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায় বলে বলেছেন তিনি।’ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বাদী এবং তার স্বামীর চিৎকারে যারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন, তাদের কাছেও ধর্ষণের কথা বলেননি ওই শিক্ষিকা। তবু আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। তদন্তে যা পাওয়া যাবে, সেভাবেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ মামলায় যে ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের মধ্যে রবিউলকে রোববার এবং জুয়েলকে সোমবার বেতাগীর কদমতলা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আলামত না পাওয়ার কথা প্রত্যাখ্যান শিক্ষিকার : ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলমত পাওয়া যায়নি- ডাক্তারদের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন নির্যাতিত শিক্ষিকা। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এটা অসম্ভব। যদি এটা হয়, তাহলে বলব, ফল উল্টে দেয়া হয়েছে। আমি শতভাগ নিশ্চিত, পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত প্রমাণিত হবে।’ বেতাগী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সেলিম আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান, শিক্ষিকার পরিবার ও এলাকার সচেতন মহল ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত না পাওয়ার কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তরুণীকে ফেলে চলে গেছে তার স্বামী : ঘটনার পরদিনই বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে গেছেন নির্যাতিত তরুণীর ভারতীয় নাগরিক স্বামী। বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি আর কোনো যোগাযোগ করেননি তার সঙ্গে। তরুণীর পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার দিক থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। বামনা থানার ওসি মামুন অর রশিদ বলেন, ‘যেহেতু এ মামলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ওই শিক্ষিকার স্বামী, তাই তাকে এদেশে এনে মামলার কার্যক্রমে সহায়তা করার চেষ্টা করব আমরা। তাছাড়া তিনি সত্যি ভারতে চলে গেছেন কিনা, সে বিষয়টি সম্পর্কেও আমরা নিশ্চিত নই। খোঁজ না নিয়ে এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
বিক্ষোভমুখর শিক্ষক সমাজ, পুনরায় আলামত পরীক্ষার দাবি : শিক্ষিকা ধর্ষণের এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেতাগীতে এখন তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষকসহ সুশীল সমাজ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে। মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে এ ইস্যুতে। সোমবার এ ধর্ষণ ঘটনার প্রতিবাদে বেতাগীতে কালো ব্যাজ ধারণ করেন উপজেলার ১২৯টি সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৬৫০ শিক্ষক। আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত কালো ব্যাজ ধারণ করা হবে। এ ছাড়া আজ মঙ্গলবার উপজেলা সদরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শিক্ষক ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা এতে উপস্থিত থাকবেন। বেতাগী উপজেলা শিক্ষক-কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।
ধর্ষকদের গ্রেফতারে ৩ দিনের আলটিমেটাম : বেতাগীতে স্কুলশিক্ষিকাকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে উপজেলা কল্যাণ সমিতি। সোমবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে আসামিদের গ্রেফতারে তিন দিনের আলটিমেটাম দেয়া হয়। মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষণকারীদের গ্রেফতার করা না হলে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বেতাগী সমিতির সভাপতি ও বরিশাল বিভাগ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির দুলু। এতে আরও বক্তব্য রাখেন সমিতির উপদেষ্টা গাজী আবদুর রহমান, সহ-সভাপতি ফরিদ আহমেদ, মাওলানা নসির উদ্দিন প্রমুখ।
ধর্ষণের তিন-চার ঘণ্টার মধ্যেই মেডিকেল পরীক্ষা : বৃহস্পতিবার দুপুরে বেতাগী উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটে কথিত এ ধর্ষণের ঘটনা। ঘটনার পরপরই আলোচ্য শিক্ষিকাকে নেয়া হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। সেখানে ইউএনওর কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয়ার পাশাপাশি অভিযোগ জানান তিনি। বেতাগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ বলেন, ইউএনও অফিস থেকে থানায় আসার পর ধর্ষণের অভিযোগটি লিপিবদ্ধ করা হয়।
খবর পেয়ে বিকাল সাড়ে ৪টা নাগাদ বেতাগীর ঘটনাস্থলে পৌঁছান বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক। নিজেই প্রহরা দিয়ে ওই শিক্ষিকাকে নিয়ে যান জেলা শহর বরগুনায়। পুলিশ সুপার বিজয় বসাক যুগান্তরকে জানান, তাৎক্ষণিকভাবে বরগুনায় এনে মেডিকেল বোর্ডে পাঠানো হয় আলোচ্য শিক্ষিকাকে। যেহেতু রাতে মেডিকেল পরীক্ষা হয় না এবং দেরি হলে ধর্ষণের আলামত নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তাই আমরা কোনোভাবেই বিলম্ব করতে চাইনি। শুধু মেডিকেল পরীক্ষাই নয়, ওইদিনই ভিকটিমের জবানবন্দি নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তার জবানবন্দি নেন। ধর্ষণ ঘটনা সত্যতা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি যেহেতু তদন্তাধীন তাই এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করব না।
ধর্ষণের আলামত মেলেনি, জবানবন্দিতেও নেই : ধর্ষণের অভিযোগে ঘটনার রাতেই বেতাগী থানায় মামলা করেন স্কুলশিক্ষিকা। মামলায় আসামি করা হয় ছয়জনকে। তবে এর আগেই জেলা শহর বরগুনায় সম্পন্ন হয় তার ডাক্তারি পরীক্ষা এবং ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেয়া জবানবন্দি পর্ব। সবকিছু যখন এভাবে চলছিল, ঠিক সেই সময় সোমবার সাংবাদিকদের কাছে দেয়া বক্তব্যে মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. জসিমউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ধর্ষণ সংঘটিত হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যেহেতু তাকে মেডিকেল পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়েছে, তাই ধর্ষণ সংক্রান্ত যাবতীয় আলামত পাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত নিশ্চিত। কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষায় তাকে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তার শরীরে শুধু দুটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এর একটি তার গালে এবং অপরটি পায়ে। এছাড়া তার শরীরে আর যেমন কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি, তেমনি ধর্ষণের কোনো আলামতও মেলেনি।’ সিভিল সার্জনের এ বক্তব্যের পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সংশ্লিষ্ট তরুণীর দেয়া জবানবন্দি নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে প্রশ্নের। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় দেয়া ওই জবানবন্দির কোথাও ধর্ষিত হওয়ার কথা বলেননি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ শিক্ষিকা। সেখানে তাকে শুধু বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানি, ধর্ষণের চেষ্টা এবং মারধর করার কথা বলা হয়েছে। শ্লীলতাহানির এক পর্যায়ে তার চিৎকারে লোকজন চলে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায় বলে বলেছেন তিনি।’ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বাদী এবং তার স্বামীর চিৎকারে যারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন, তাদের কাছেও ধর্ষণের কথা বলেননি ওই শিক্ষিকা। তবু আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। তদন্তে যা পাওয়া যাবে, সেভাবেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ মামলায় যে ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের মধ্যে রবিউলকে রোববার এবং জুয়েলকে সোমবার বেতাগীর কদমতলা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আলামত না পাওয়ার কথা প্রত্যাখ্যান শিক্ষিকার : ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলমত পাওয়া যায়নি- ডাক্তারদের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন নির্যাতিত শিক্ষিকা। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এটা অসম্ভব। যদি এটা হয়, তাহলে বলব, ফল উল্টে দেয়া হয়েছে। আমি শতভাগ নিশ্চিত, পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত প্রমাণিত হবে।’ বেতাগী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সেলিম আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান, শিক্ষিকার পরিবার ও এলাকার সচেতন মহল ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত না পাওয়ার কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তরুণীকে ফেলে চলে গেছে তার স্বামী : ঘটনার পরদিনই বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে গেছেন নির্যাতিত তরুণীর ভারতীয় নাগরিক স্বামী। বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি আর কোনো যোগাযোগ করেননি তার সঙ্গে। তরুণীর পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার দিক থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। বামনা থানার ওসি মামুন অর রশিদ বলেন, ‘যেহেতু এ মামলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ওই শিক্ষিকার স্বামী, তাই তাকে এদেশে এনে মামলার কার্যক্রমে সহায়তা করার চেষ্টা করব আমরা। তাছাড়া তিনি সত্যি ভারতে চলে গেছেন কিনা, সে বিষয়টি সম্পর্কেও আমরা নিশ্চিত নই। খোঁজ না নিয়ে এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
বিক্ষোভমুখর শিক্ষক সমাজ, পুনরায় আলামত পরীক্ষার দাবি : শিক্ষিকা ধর্ষণের এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেতাগীতে এখন তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষকসহ সুশীল সমাজ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে। মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে এ ইস্যুতে। সোমবার এ ধর্ষণ ঘটনার প্রতিবাদে বেতাগীতে কালো ব্যাজ ধারণ করেন উপজেলার ১২৯টি সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৬৫০ শিক্ষক। আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত কালো ব্যাজ ধারণ করা হবে। এ ছাড়া আজ মঙ্গলবার উপজেলা সদরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শিক্ষক ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা এতে উপস্থিত থাকবেন। বেতাগী উপজেলা শিক্ষক-কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।
ধর্ষকদের গ্রেফতারে ৩ দিনের আলটিমেটাম : বেতাগীতে স্কুলশিক্ষিকাকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে উপজেলা কল্যাণ সমিতি। সোমবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে আসামিদের গ্রেফতারে তিন দিনের আলটিমেটাম দেয়া হয়। মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষণকারীদের গ্রেফতার করা না হলে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বেতাগী সমিতির সভাপতি ও বরিশাল বিভাগ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির দুলু। এতে আরও বক্তব্য রাখেন সমিতির উপদেষ্টা গাজী আবদুর রহমান, সহ-সভাপতি ফরিদ আহমেদ, মাওলানা নসির উদ্দিন প্রমুখ।
No comments