Breaking News

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ মিশনে ঢুকতে চাঁদাবাজি

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাসপোর্ট নবায়ন ও ডিজিটাল পাসপোর্ট তৈরিসহ নানা কাজ করতে গিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীরা পদে পদে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এর মধ্যে প্রত্যেক প্রবাসীর কাছ থেকেই কোনো কারণ ছাড়া কর্তব্যরত সিকিউরিটি গার্ডরা নগদ ২ রিংগিট করে (৩৬-৩৭ টাকা) আদায় করছেন। যারা দিতে অপারগতা প্রকাশ করছেন তাদের হাইকমিশনের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।

শুধু তাই নয়, এক ব্যক্তি যত বার ভেতরে প্রবেশ করবেন তাকে তত বারই ২ রিংগিট করে পরিশোধ করতে হচ্ছে। তবে এই অর্থ কেন এবং কী কারণে প্রবাসীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে সে ব্যাপারে কাউকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে না।
গতকাল মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে সাহিন আলম নামে এক প্রবাসী নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি গত সপ্তাহে বাংলাদেশ হাইকমিশনে গিয়েছিলাম। হাইকমিশনের ভেতরে ঢুকতে গেলে সিকিউরিটি গার্ডরা ২ রিংগিট দাবি করেন। কিসের জন্য এই টাকা চাওয়া হচ্ছেÑ জানতে চাইলে তারা এ ব্যাপারে কিছুই বলছেন না। পরে উপায় না পেয়ে সিকিউরিটি গার্ডদের হাতে নগদ ২ রিংগিট দিয়ে তারপর ভেতরে প্রবেশ করেছি। তিনি বলেন, কিছু দিন আগেও এসেছিলাম। তখন দেখেছি, হাইকমিশনের ভেতরের গেটের সামনে একটি বাক্স লাগানো। বাক্সের ওপরে লেখা ‘পে ফাস্ট ওয়ান রিংগিট’। এখন সেটি দুই রিংগিট করা হলো? কিন্তু এখন গেটের সামনে বাক্স নেই। সিকিউরিটি গার্ডরা নগদ আদায় করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ যদি কোনো কারণে বাইরে চলে আসে তাহলে পরে তাকে আবারো ২ রিংগিট পরিশোধ করেই ঢুকতে হচ্ছে। না দিলে তাকে আর ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না।
গতকাল মালয়েশিয়া থেকে একাধিক ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে জানান, মালয়েশিয়ায় আমাদের হাইকমিশনের সামনে প্রতিদিন প্রবাসী বাংলাদেশীরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে সিকিউরিটি গার্ডদের হাতে মারধরের শিকার হচ্ছেন। ৩-৪ দিন আগেও তাদের হাতে প্রবাসী ভাইয়েরা লাঞ্ছিত হয়েছেন। সিকিউরিটি গার্ডরা কেন প্রবাসীদের মারধর করছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, বিল্ডিং মালিক চাচ্ছে হাইকমিশন এখান থেকে উঠে যাক। কিন্তু তারপরও উঠছে না। তাই ভবনমালিক সিকিউরিটি গার্ডদের নির্দেশ দিয়েছেন, যত দিন হাইকমিশনে লোক আসবে, তত দিন গেট দিয়ে শ্রমিক ঢুকলেই ২ রিংগিট করে আদায় করতে।
হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মালয়েশিয়া হাইকমিশনের বাইরে দালালদের উৎপাত কিছুটা কমেছে। তবে ভেতরে অনিয়ম শুরু হয়েছে। আর এই অনিয়মের সাথে কর্মকর্তাদের ড্রাইভার, পিয়নরাই এখন পাসপোর্ট নবায়ন, ডিজিটাল পাসপোর্ট তৈরি, ট্র্যাভেল পাস করে দেয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশীরা বলতে গেলে অনেকটা অমানবিকভাবেই জীবন কাটাচ্ছেন। কারণ অবৈধ শ্রমিক গ্রেফতার অভিযান চলার কারণে যখন তখন পুলিশ যাকে ইচ্ছা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর যাদের বৈধ কাগজ রয়েছে তাদের জন্য কোম্পানির মালিক পুলিশ স্টেশনে গিয়ে সুপারিশ করলে সেই ক্ষেত্রে শ্রমিকেরা ছাড়া পাচ্ছেন। নতুবা অনেককেই যেতে হচ্ছে জেলে নতুবা ডিটেনশন ক্যাম্পে।
গতকাল প্রবাসীদের হয়রানি ও অনিয়ম প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ দিকে প্রবাসীদের সুবিধার্ধে বাংলাদেশ হাইকমিশনের পাসপোর্ট সেবা অগ্রণী ব্যাংক এর ক্লাং শাখায় শুরু হয়েছে বলে হাইকমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে পাসপোর্ট সংক্রান্ত সব সেবা প্রত্যেক মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শনিবার/রোববার অগ্রণী রেমিট্যান্স হাউজ, ক্লাং শাখা থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশন, মালয়েশিয়ার মাধ্যমে সরাসরি প্রদান করা হবে। টাকা জমা করার জন্য অ্যাকাউন্ট নম্বর হচ্ছে ৫৬৪৪২৭১০২২৬৮। ব্যাংকের যেকোনো শাখায় হলুদ স্লিপের মাধ্যমে রিংগিট জমা দিতে হবে।
উল্লেখ্য অনলাইন ট্রান্সফার/এটিএম বুধ ও ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে রিংগিট প্রদান গ্রহণযোগ্য হবে না বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। প্রতি পাসপোর্টের জন্য ফি সাধারণ শ্রমিক, ছাত্র ১১৬ রিংগিট এবং প্রফেশনাল ভিসা ফি হোল্ডার ৩৮৫ রিংগিট।

No comments