আলোচিত আসন হচ্ছে সিলেট-২।
বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর— এ তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসনে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী অবস্থান আছে আওয়ামী লীগের। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলিয়াস আলীর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ঘটনা আওয়ামী লীগের পথের কাঁটা হয়ে উঠতে পারে। আর এ ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে আসনটি দখলে নিতে চায় বিএনপি। পাশাপাশি জাতীয় পার্টি এবং খেলাফত মজলিসও আছে নির্বাচনী দৌড়ে। সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি বৃহত্তর সিলেটে ‘২৪ ঘণ্টার রাজনীতিবিদ’ হিসেবে পরিচিত। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান শফিকুর রহমান চৌধুরী। আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল জাতীয় পার্টিকে। সম্প্রতি নিজ এলাকা বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি কেন্দ্র বাতিল করে দেওয়ায় কিছুটা বিপাকে পড়েছেন তিনি। বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পংকি খান নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। পরে দলীয় কাউন্সিলে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। শফিকুর রহমান চৌধুরীর বিপক্ষ বলয়ের অভিযোগ, পংকি খানকে দলে আশ্রয় দিয়েছেন তিনি। তবে শফিক চৌধুরীর দাবি, পংকি খান তৎকালীন সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতেই দলে যোগদান করেছেন। যারা আওয়ামী লীগ নিয়ে সব সময় ষড়যন্ত্র করেন তারাই এখন অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এ আসনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে শফিক চৌধুরীর মাথাব্যথার কারণ হতে পারেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। জাতীয় নির্বাচন করতে আগ্রহী এ নেতা সিলেট-২ আসনে নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করেছেন। বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বাতিলের ঘটনায় তার হাত রয়েছে বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। এ ছাড়া শফিক চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর দ্বন্দ্বে গত উপজেলা নির্বাচনে সিলেট-২ আসনের অন্তর্ভুক্ত তিনটি উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ভরাডুবি ঘটে। শফিক চৌধুরীর বিরুদ্ধে যেমন সাবেক বিএনপি নেতা পংকি খানকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করার অভিযোগ রয়েছে, তেমনি আনোয়ারুজ্জামানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে বিএনপি-জামায়াতকে প্রশ্রয় দেওয়ার। যুক্তরাজ্য ও দেশে বিরোধী বলয়ের নেতা-কর্মীদের দমিয়ে রাখতে আনোয়ারুজ্জামান বিএনপি-জামায়াতকে মদদ দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে দলের নেতা-কর্মীদের। স্থানীয় জনগণ এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, সিলেট-২ আসনে শফিকুর রহমান চৌধুরী কিংবা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী যিনিই দলীয় মনোনয়ন পান, তার জন্য শক্ত বাধা হয়ে উঠতে পারে ‘নিখোঁজ’ ইলিয়াস আলী ইস্যু। এই ইস্যু কাজে লাগিয়ে এ আসনে বাজিমাত করতে চায় বিএনপি। আসনটিতে দলটির প্রার্থী হিসেবে ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনার নাম এককভাবে আলোচিত হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা লুনা নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন, নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। দলীয় কর্মসূচিতে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে চলেছেন, ‘সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। ’ এমন বক্তব্য দিয়ে তারা সাধারণ মানুষের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছেন। সিলেট-২ আসনে অন্যান্য দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া নির্বাচন করতে আগ্রহী। তিনি এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে তিনি এলাকায় সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলীও এ আসনে নির্বাচন করতে চান। এ আসনে ইসলামী ভাবধারার ভোটব্যাংক কাজে লাগিয়ে চমক দেখাতে চান মুনতাসির।
No comments