ভ্রমণ: সাগরদাঁড়ির মধুপল্লী, যশোর



সাগরদাঁড়ির মধুপল্লী, যশোর
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সাগরদাঁড়ির এ বাড়ির নাম দিয়েছে মধুপল্লী। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ডাক নামে এ নামকরণ। যদিও বাড়িটির মালিকানা ছিল তার বাবা রাজনারায়ণ দত্ত ও ৩ কাকার (রাধামোহন,
মদন মোহন ও দেবি প্রসাদ দত্ত)। মধুসূদন এ বাড়ি ছেড়েছেন মাত্র ১৩ বছর বয়সে। মাঝে-মাঝে জন্মস্থানে বেড়াতে এলেও ১৯ বছর বয়সে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণের পর এ বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি তার বাবার জীবদ্দশায় আর মেলেনি। বাবার মৃত্যুর পর সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় অদক্ষ ও বেহিসেবি মধুসূদনের পৈত্রিক সম্পত্তি খুব একটা কাজে লাগেনি, অধিকাংশই বেদখল হয়ে গেছে।

মধুপল্লীর একতালা সবগুলো ভবন গ্রিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। ভবনগুলোর মেঝে মাটি থেকে বেশ উচুতে, একতালা ঘরেও সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয়। চারদিকে খোলা বারান্দাসহ বাড়ি, আর মাঝে সিঁড়ি দিয়ে নেমে সবুজ উঠান/ প্রাঙ্গন দারুণ অভিজাত দেখায়।

বাড়ির পাশেই বেশ বড় পারিবারিক পুকুর। প্রাচীন আমগাছের নীচে শান বাঁধানো ঘাটে বসার বেশ ব্যবস্থা। মধুপল্লীর ভেতরে একটি প্রাথমিক স্কুলও আছে। মধুপল্লীতে একটিই দোতালা বাড়ি। বাড়িটি ঔপনিবেশিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত।
প্রবেশ তোড়নটি পেরুলেই মধু মঞ্চ ও লাইব্রেরী। লাইব্রেরীর পেছনে মধুসূদন দত্তের কাকার বাড়ি। মূল বাড়িটি এখন যাদুঘর। মূল বাড়ির ভেতর বেশ বড় মন্দির। দুর্গা পূজার দারুণ প্রস্তুতি চলছে।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত : ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) এর দুর্বলাতা সর্বজনবিদিত। মধুসূদন ১৯ বছর বয়সে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেন ও মাইকেল মধুসূদন নাম গ্রহণ করে ইংরেজি সাহিত্য রচনায় সচেষ্ট হন। তার ধর্ম পরিবর্তন সে সময়ে ভীষণ আলোচিত বিষয়বস্তু ছিল ও এ কারণে তার বাবা তাকে তেজ্য করেন।
ইংরেজি সাহিত্যে খুব একটা সুবিধা না করতে পেরে ৩৫ বছর বয়সে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা সাহিত্য রচনা শুরু করেন। তিনি বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য।

প্রথম বিয়ে রেবেকা ম্যাকটিভিস নামে এক ইংরেজ তরুণীর সাথে এবং ২য় বিয়ে এমিলিয়া আঁরিয়েতা সোফিয়া নামে এক ফরাসি তরুণীর সাথে।
তিনি বাংলা ছাড়াও আরো বারোটি ভাষা জানতেন। তার জীবনকাল মাত্র ৪৯ বছরের।

যেভাবে যাবেন : যশোর থেকে প্রথমে কেশবপুর উপজেলা যেতে হয়। কেশবপুর থেকে স্থানীয় বাহনে প্রায় ১৩ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সাঁগরদাড়ি মধুপল্লী যেতে হবে।

তথ্য ও ছবি : বুরহানুর রহমান

No comments