ভ্রমণ: পানি গ্রাম রিসোর্ট, চৌগাছা যশোর
নাম শুনে মনে হওয়ার সম্ভবনা বেশি, এটি হাওর বা বাওড়ের মাঝে ভেসে থাকা জনবিচ্ছিন্ন কোনো গ্রাম। দ্বীপগ্রাম না হলেও এ স্থানে পানির কোনো অভাব নেই। ‘পানি গ্রাম রিসোর্ট’ এর তিন পাশে ভৈরব ও কপোতাক্ষ নদ। তিন দিকে পানিবেষ্টিত বলে- এ রিসোর্টের নাম দেয়া হয়েছে পানিগ্রাম।
রিসোর্টে থাকার ব্যবস্থা মাটির ঘরে। দেশের খ্যাতনামা বেশ কয়জন স্থপতির সাথে মাড কনসালটেন্ট হিসেবে স্থপতি সিয়াম নাইম কাজ করছেন। বিভিন্ন আয়তন ও মানের ঘরগুলো কাঁচা ইটের তৈরি। গোলপাতার ছাউনির নীচে নিখুঁত বাঁশের সাপোর্টিং, মাটির সাথে কাঠ, বাঁশ ও কাঁচের ব্যবহার- দারুণ নান্দনিক দেখায়।
আলোক প্রক্ষেপন রাতে রিসোর্টটিকে স্বর্গীয় করে তোলে। বিশালাকায় ট্যারেস ও সেখান থেকে নদীর দৃশ্যপট এক কথায় অতুলনীয়। রিসোর্টে মাড হাউস নির্মাণের ধারণা নতুন না হলেও এ ধরনের উদ্যোগের অপ্রতুল্যতা আছে এবং দেশে তারকা মানের অন্য কোনো মাড হাউস রিসোর্ট নেই। এখানকার ঘরগুলো শ্রীলঙ্কার মাড হাটগুলোর আদলে তৈরি।
২০০৮ সালে পাঁচ তারকা মানের ইকো রিসোর্ট নির্মাণ কল্পে পানিগ্রামের যাত্রা শুরু। ২০১৪ সালের ০১ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিল, কারণটাও অদ্ভুতঃ অধার্মিক পোশাক পরিহিত মানুষদের আনাগোনা বেড়ে যাবে দেখে বেশকিছু ধার্মিক গ্রামবাসী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। স্ব-উদ্যোগে কিছু অতি-ধার্মিক গ্রামবাসী রিসোর্টের ইলেক্ট্রিসিটির লাইনও কেটে দিয়েছিলেন। মুলতঃ ধর্মীয় মূল্যবোধকে পুঁজি করে স্থানীয় উপজেলার দায়িত্বশীলরা বেশ নিয়ম-কানুনের বেড়াজাল বেধে নির্মাণ কাজ কঠিন করে দিয়েছিলেন।
দারুণ ও ব্যতিক্রম উদ্যোগটি বেশ হোঁচট খেয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এই কিছুদিন হল আবার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বেশ চেষ্টা করেও রিসোর্টের কোনো দায়িত্বশীলের সাথে কথা বলা যায় নি। তথ্যগুলো স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে পাওয়া। কিছু বিরোধিতা থাকলেও অধিকাংশ গ্রামবাসী মনে করেন- রিসোর্টটি চালু হলে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। বেশ কিছু কর্মসংস্থানও হয়েছে ও হবে।
যেভাবে যাবেন: যশোরের চৌগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ-ভৈরব নদের মিলনস্থল তাহেরপুরে ‘পানিগ্রাম রিসোর্ট’। পূর্বানুমতি ছাড়া ছবি তোলা পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
তথ্য ও ছবি : বুরহানুর রহমান
Post Comment
No comments