Breaking News

বিশ্বের চোখেই নিষ্ঠুর গণহত্যা

রোহিঙ্গা গ্রাম পোড়ানোর প্রমাণ অ্যামনেস্টির হাতে, ইউটিউব ও মিডিয়াতে নৃশংসতার ছবি, আরও ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কা এইচআরডব্লিউর, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা-নির্যাতন অগ্রহণযোগ্য : মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বিশ্বের চোখেই নিষ্ঠুর গণহত্যা
নিবন্ধনের জন্য গতকাল কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা নারীদের দীর্ঘ লাইন -----ছবি : রোহেত রাজীব ও জয়ীতা রায়
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার স্যাটেলাইট দৃশ্য প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোয় ব্যাপকভাবে এ ছবি প্রচার করে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ‘পরিকল্পিতভাবেই’ রোহিঙ্গা মুসলিমদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
মানবাধিকার সংস্থাটির তথ্য, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের নির্মূলের জন্য ‘স্কর্চড আর্থ’ কৌশল অবলম্বন করে একের পর এক জনপদ জ্বালিয়ে দিচ্ছে। যারা পালাতে চাইছে তাদেরও গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। এর আরও প্রমাণ আছে বলেও দাবি করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বাংলাদেশের ভাষায় এই ‘গণহত্যা’কে জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই ‘জাতিগত নিধন’-এর নিকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে বলেছে। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট একে গণহত্যার শামিল বলেছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লদ জাঙ্কার বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নির্মূলে নির্বিচার হত্যা ও অত্যাচার চালিয়ে এক মর্মান্তিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার। অন্যদিকে এইচআরডব্লিউ গতকাল এক বিবৃতিতে আরও ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। রাখাইন অঞ্চলের নতুন স্যাটেলাইট ছবি, প্রত্যক্ষদর্শী, ছবি ও ভিডিওর বরাত দিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ২৫ আগস্টের পর থেকে রাখাইন প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে অন্তত ৮০টি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সংস্থাটির আন্তর্জাতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিরানা হাসান বলেন, ‘এগুলো অকাট্য প্রমাণ। মিয়ানমার সেনাবাহিনী যে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের উত্খাত করে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগাচ্ছে। কোনো ভুল করবেন না, এটি জাতিগত নিধন। কয়েকটি এলাকায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আগেই গ্রামবাসীকে আগুনের বিষয়ে সতর্ক করেছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় এসব হামলা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পরিকল্পিত। ’ অ্যামনেস্টির বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, সেনা, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগীরা অনেক সময় চারদিক থেকে একটি গ্রাম ঘিরে রাখে। গ্রামে প্রবেশের আগে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই তারা আকস্মিক প্রবেশ করে এবং চারদিকে গুলি ছুড়তে শুরু করে। সেনা অভিযানে বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তি বলেন, ‘যখন সেনাবাহিনী আসে তখন তারা ভয়-আতঙ্কের মুখে দৌড়াতে থাকা মানুষের দিকে গুলি ছুড়তে শুরু করে। আমি দেখেছি সেনারা অনেক মানুষ ও দুই কিশোরকে গুলি করে হত্যা করেছে। তারা আমাদের বাড়িঘর জ্বালাতে অস্ত্র ব্যবহার করেছে। ’ ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘আমাদের গ্রামে ৯০০ বাড়ি ছিল। এখন অবশিষ্ট আছে মাত্র ৮০টি। লাশগুলো দাফনের মতো গ্রামে কেউ নেই। ’ রাথেডাউং এলাকার পান কিইয়িং গ্রামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘৪ সেপ্টেম্বর গ্রাম প্রশাসকদের নিয়ে সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামে আসে। এসে হুকুম জারি করে রাত ১০টার মধ্যে আমাদের পালিয়ে যেতে হবে, না হলে সবকিছু পুড়িয়ে দেওয়া হবে। যখন তারা পালানোর জন্য সবকিছু গোছগাছ করছিল তখন আগুনের গোলা তার বাড়িতে আঘাত হানে। এ সময় আতঙ্কে তারা পালায়। যেসব গ্রামবাসী ধানের খেতে লুকিয়ে ছিল তারা দেখেছে সেনারা রকেট লঞ্চারের মতো অস্ত্র দিয়ে আগুন লাগাচ্ছে। ’ বাংলাদেশের নাফ নদের বিভিন্ন স্থান থেকে নেওয়া ছবি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে মিয়ানমারের ভিতরে বেশ কয়েকটি স্থানে ধোঁয়া উড়ছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২৫ আগস্ট কয়েকটি সেনা ও পুলিশ ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা। পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেছেন, বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী পুরুষদের ধরে নিয়ে হত্যা করছে, নারীদের ধর্ষণ করছে আর মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এরই মধ্যে এ সহিংসতার শিকার হয়ে প্রায় ৩ হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন। অ্যামনেস্টি বলছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে এমন সংঘবদ্ধ দলগুলো একসঙ্গে মিলে এই জ্বালাও-পোড়াও চালাচ্ছে।
গণহত্যায় সামরিক ‘স্কর্চড আর্থ’ পদ্ধতি : মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের নির্মূলের জন্য ‘স্কর্চড আর্থ’ কৌশল অবলম্বন করছে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। এ কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো একের পর এক জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং যারা পালাতে চাইছে তাদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। সামরিক পরিভাষায়, স্কর্চড আর্থ নীতি হচ্ছে একটি সামরিক কৌশল। এ কৌশল অনুসারে সেনারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে এগিয়ে যাওয়ার সময় ‘শত্রু’ সেনাদের হত্যার পাশাপাশি সবকিছু পুড়িয়ে দেয়। ‘শত্রু’র পক্ষে ব্যবহার করা সম্ভব এমন স্থাপনা ও অবকাঠামো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। যেমন— খাদ্যের উৎস, পানির সরবরাহ, পরিবহন, যোগাযোগ, শিল্প-কারখানা এমনকি স্থানীয় জনসাধারণ। এ কৌশল সেনাবাহিনী ‘শত্রু’ ভূমিতে অথবা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত ভূ-খণ্ডেও ব্যবহার করতে পারে। ‘শত্রু’র সম্পদ ধ্বংস করার কৌশলের চেয়ে ‘স্কর্চড আর্থ’ ভিন্ন। এ কৌশলটি একেবারেই কৌশলগত এবং রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করা হয়। অতীতে রাশিয়ার সেনাবাহিনী এ কৌশল ব্যবহার করেছে বেশ কয়েকবার। মার্কিন গৃহযুদ্ধেও কৌশলটি ব্যবহূত রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সেনাবাহিনী সোভিয়েত অভিযানে এবং চীনে এ কৌশল ব্যবহার করেছে জাপান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে এ কৌশল ব্যবহার করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। গত কয়েক দশকের মধ্যে শ্রীলঙ্কা, লিবিয়া ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধেও কৌশলটি ব্যবহার করা হয়েছে।
পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ : বিভিন্ন সাহায্যদাতা প্রতিষ্ঠান বলছে, আগস্টের শেষে সহিংসতা শুরুর পর থেকেই তারা উত্তর রাখাইনে পৌঁছাতে পারছে না, যে কারণে কী ধরনের মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে তারও পরিমাপ করা সম্ভব হচ্ছে না। জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যান অ্যাফেয়ার্সের মুখপাত্র পিয়েরে পেরন বলেন, ‘হাজার কিংবা লাখো মানুষ হয়তো সীমান্ত থেকে অনেক দূরে আটকে আছে যেখানে খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহের ঘাটতি আছে এবং যেখানে নিরাপত্তা পৌঁছাতে অক্ষম। ’ অ্যামনেস্টির লরা হেই বলছেন, ‘যেসব রোহিঙ্গা এখনো তাদের গ্রামেই আছেন তারাও ভয় নিয়েই বসবাস করছেন; বছরের পর বছর যে খাদ্য সাহায্য তারা পেয়ে আসছিলেন তা পেতেও তাদের কষ্ট হচ্ছে। তারা আদতে আটকা পড়ে আছেন। ’ মিয়ানমার বলছে, তারা রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মংডুতে ত্রাণের ব্যবস্থা করছে, যদিও এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
মার্কিন মন্ত্রীকে ঘটনাস্থলে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা মিয়ানমারের : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্যাট্রিক মার্ফির আগামী সপ্তাহে মিয়ানমার সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তাকে রোহিঙ্গা এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। মিয়ানমার কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, রাজধানী নেপিডোয় দেশটির নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন প্যাট্রিক মার্ফি। মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া সু চির ভাষণও তিনি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাবেন। রাখাইনের রাজ্যসচিব টিন মং সুই বলেন, মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। সেখানে তিনি রাখাইনের গভর্নর ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। তবে তাকে রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের সংঘাতপূর্ণ এলাকায় যেতে দেওয়া হবে না।
রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধের আহ্বান যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের : মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহিংসতা ও তাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে দেশটির নেত্রী অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার লন্ডনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন ও যুক্তরাষ্ট্রের রেক্স টিলারসন এ আহ্বান জানান। শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির সমালোচনা করে বরিস জনসন বলেন, ‘এই সময়ে সু চি অন্যতম অনুপ্রেরণীয়। ’ তিনি রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে সু চির প্রতি আহ্বান জানান। মিয়ানমারে বর্তমানে মানবাধিকারের অপব্যবহার হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন ইংল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে বরিস জনসন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাকে ‘বর্বরতা’ আখ্যায়িত করেছেন। জনসন আরও বলেন, ‘আমি মনে করি তার (সু চি) জন্য এখনই সময় রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে ‘নৈতিক পুঁজি’ ব্যবহারের এবং কর্তৃপক্ষকে নির্ধারণ করতে হবে যে এটা রোহিঙ্গাদের জন্য দুর্ভোগ। কেউ মিয়ানমারের সামরিক শাসনের প্রত্যাবর্তন দেখতে চায় না, কেউ জেনারেলদের প্রত্যাবর্তন দেখতে চায় না। ’ একই সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেন, ‘এ সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, এ নির্যাতন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এটা একটা জাতিকে নির্মূল করার চেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এটি অবশ্যই থামাতে হবে। আমাদের অং সান সু চির সমর্থন প্রয়োজন। ’ এ সময় মিয়ানমার সরকারের বর্তমান কর্মকাণ্ড অগ্রহণযোগ্য বলেও মন্তব্য করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সু চির উদ্দেশে খোলা চিঠি : রোহিঙ্গা ইস্যুতে অং সান সু চিকে তার অবস্থান পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারের নির্বাসিত আটজন নাগরিক। সু চির উদ্দেশে লেখা আবেগঘন এক খোলা চিঠিতে তারা এই আহ্বান জানান। চিঠির লেখকেরা বলেছেন, জন্মস্থান মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে দুঃখ ভাগাভাগি করতে তারা এই চিঠি লিখছেন। চিঠিতে সু চির ব্যক্তিগত উত্তরাধিকার, জনগণের দুর্দশা এবং জাতি হিসেবে মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। চিঠির লেখকেরা উল্লেখ করেছেন, তাদের পরিবারের কিছু সদস্য ও সু চির প্রয়াত বাবা জেনারেল অং সানের সমকালীন ছিলেন। ছিলেন সহকর্মী। সু চির বাবার মতো তারাও দেশের কল্যাণে অবদান রেখেছেন। ১৯৮৮ সালে সু চির দেওয়া প্রথম বক্তৃৃতার প্রসঙ্গ টেনে লেখকেরা বলেন, জনগণ যতদিন নিপীড়নের শিকার হতে থাকবে, ততদিন কথা বলবেন বলেছিলেন। তার এই সংকল্প ও সাহসিকতায় তারা (লেখকেরা) দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। লেখকেরা বলেছেন, তাদের বাবা-মা ও প্রজন্মের কাছ থেকে সু চির জীবন উৎসর্গকারী বাবা যে ভালোবাসা, সম্মান ও বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন; লাখো বার্মিজের মতো তারাও তা তাকে (সু চি) দিয়েছেন। সু চির দীর্ঘ গৃহবন্দীর কথা উল্লেখ করে লেখকেরা বলেছেন, ওই সময় তারা তার (সু চি) পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সু চির স্বাধীনতা এবং নেতৃত্বের সমর্থনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আন্দোলন গড়তে তারা ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে যথাসাধ্য সবকিছুই করেছিলেন। সামরিক জান্তার নিপীড়ন বন্ধে সু চির ডাকে রোহিঙ্গাসহ জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সবাই সাড়া দিয়েছিল বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন লেখকেরা। তারা বলেছেন, সু চি যখন মুক্তি পান, তখন তারা উত্ফুল্ল হয়েছিলেন। গণতন্ত্রের লক্ষ্যে সু চি কীভাবে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন, তার অপেক্ষায় ছিলেন তারা। কিন্তু তিনি তার দক্ষ সমর্থক ও সহযোগী ভিন্নমতাবলম্বীদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেননি। বুদ্ধিবৃত্তিক ও পেশাদারি পরামর্শের জন্য অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের ব্যাপারে কোনো আগ্রহই দেখাননি তিনি।
মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনীতিবিদ সু চির বিবৃতিতে লেখকেরা মর্মাহত বলে জানিয়েছেন। লেখকেরা সু চির সরকারের গঠন-প্রকৃতিতে উদ্বিগ্ন। তাদের মতে, সরকারে এনএলডির সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও অভিজ্ঞ জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নেই। অভিজ্ঞ যারা আছেন, তারা সাবেক সেনা কর্মকর্তা। তারা সেই গোষ্ঠীর লোক, যারা সু চিকে বন্দী করেছিলেন, যারা গত ৫০ বছর জাতিকে নিপীড়ন করেছেন। সু চির কাছে লেখকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমরা কোন দিকে যাচ্ছি?’ মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক রূপান্তর কি পুরোপুরি ঘুরে গেছে? মিয়ানমার কি স্বৈরতন্ত্রে ফিরে গেছে? এমন প্রশ্নও তুলেছেন লেখকেরা। সু চিকে উদ্দেশ করে লেখকেরা বলেছেন, মিয়ানমারে মুক্ত গণমাধ্যম উৎসাহিত করা উচিত।

No comments