সালমান শাহর মৃত্যু : রুবির ভিডিও, নীলা চৌধুরীর ব্ক্তব্য
সালমান শাহর মৃত্যু : রুবির ভিডিও, নীলা চৌধুরীর ব্ক্তব্য
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সংগ্রহ করে তদনুযায়ী তদন্ত করার নির্দেশ দিতে আদালতে আবেদন করেন। ঢাকার মহানগর হাকিম মাহমুদা আক্তার শুনানি শেষে ওই আবেদন মঞ্জুর করেন এবং আগামী ২০ নভেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তাকে এই বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
বাদি তার আবেদনে বলেন, ২১ বছর পার হলেও জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হয়নি। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ১১/বি নিউ ইস্কাটন রোডের বাসায় নিজকক্ষে সালমান শাহকে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার লাশ উদ্ধার করে প্রথমে হলি ফ্যামিলি এবং পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই সালমান শাহকে হত্যার অভিযোগ করে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়।
কয়েক দফা তদন্তে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তা এখনো মেনে নিতে পারেনি তার পরিবার ও অগণিত ভক্ত। সর্বশেষ গত বছরের শেষের দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নতুন করে মামলার তদন্তভার দেয়া হয়।
তবে দীর্ঘ সময় পার হওয়ায় এ মামলার অসংখ্য আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। একই সাথে সম্পৃক্তদের অনেকেরই জবানবন্দী নেয়া সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় অধিকতর তদন্তে কতটুকু অগ্রগতি হবে, তা নিয়ে খোদ তদন্তসংশ্লিষ্টরাই সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বলেন, সালমানের হত্যা ষড়যন্ত্রের সূচনা হয়েছিল চিটাগাং ক্লাব থেকে। ১৯৯৬ সালে ঢাকায় এসেছিলেন ভারতীয় অভিনেত্রী মুনমুন সেন। সালমান শাহর হত্যার চার দিন আগে সামিরার মায়ের দাওয়াতে চিটাগাং ক্লাবে গিয়েছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও মুনমুন সেন গ্যাং। সেখানে তাদের (আজিজ মোহাম্মদ ভাই-মুনমুন সেন) গ্যাংয়ের সদস্য হওয়ার জন্য সালমানকে প্রস্তাব দেয়া হয়। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সেখান থেকেই হত্যার সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা করা হয়।
তিনি বলেন, আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও মুনমুন সেনের দলে নেয়ার বিষয়ে সালমানের সাথে অনেক কথাকাটাকাটি হয়। কিন্তু সালমান তা মানেননি। ২ সেপ্টেম্বর চিটাগাং থেকে ঢাকায় ফেরেন সালমান। আর মারা যাওয়ার এক দিন আগে সালমান আমাকে বলেছিল, আম্মা, ওদের (আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও মুনমুন সেন) সব (অবৈধ কার্যকলাপ) কিছু আমি জেনে এসেছি। আমি বলেছিলাম, এমন খারাপ মানুষের কাছে যেতে নেই। সব জেনে গেলে ওরা (গ্যাং) তো তোকে মেরে ফেলবে। সালমান বলেছিল, আম্মা, তোমার ছেলের হাতও অনেক লম্বা। ওরা আমাকে কিছুই করতে পারবে না। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না আমার ছেলের।
তিনি বলেন, অনেক প্রচেষ্টার পর এ মামলাটি এত দূর নিয়ে আসতে পেরেছি। সম্প্রতি রুবি নামের এক আসামি ভিডিও বার্তায় সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছে। এটা বাস্তব সত্য। তার (রুবির) ভাইয়ের ওপর আঘাত করেছে বলেই সে এখন সত্য বলে দিচ্ছে। সে-ও আমার ছেলে হত্যায় জড়িত ছিল। হত্যার আলামত সালমানের স্ত্রী সামিরাই ওই রুবির হাতে দিয়ে নষ্ট করেছিল।
সালমান শাহর মা বলেন, ১৯৯৬ সালের ৩১ আগস্ট সামিরার একটি নোট বই আমার হাতে আসে। তাতে লেখা ছিল, ‘তুমি আমাকে ডিভোর্স করে পৃথিবীতে থাকবে, না না...। এ নোটটি সিআইডিকে দিয়েছিলাম। তার কোনো উত্তর পাইনি। পরবর্তী সময়ে ওই নোট বইয়ের আর খোঁজ পাইনি। সামিরার ওই নোট থেকেও সালমানের হত্যার বিষয়টি ধারণা করা যায়। এ ছাড়া ঘটনার দিন ভোরে সব মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আর দুই মাস আগেই ঘর থেকে স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়ে গেছে। তখন থেকেই ষড়যন্ত্র চলছিল। ঘরে সামিরার শাড়ি-কাপড় কিছু ছিল না। ভালো একটা বেডশিট পাইনি, ভালো এক সেট বাসন পাইনি। আমার ছেলের ঘরে কি কিছুই ছিল না?
সালমান শাহ হত্যার বিচার হবে। বিচার এখন দ্বারপ্রান্তে। এখন আসামি (রুবি) নিজেই তা স্বীকার করেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় আসামি রুবিকে দেশে এনে সাক্ষ্য নেয়ার ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইতোমধ্যেই মামলার সাক্ষী হিসেবে নতুন করে সালমানের মামা ও মার বক্তব্য রেকর্ড করেছে। এ ছাড়া এ মামলার আসামি রুবির দু’টি ভিডিও বার্তা সামাজিকমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। তবে দুই ভিডিও বার্তায় দুই রকম কথা বলেছেন রুবি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অবহিত আছেন। তাদের (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের) অনুমতি পাওয়া গেলে রুবিকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নেয়া হবে।
নীলা চৌধুরীর অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আইনজীবীরা সালমান শাহর প্যানেল আইনজীবী হওয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠাচ্ছেন। বাংলাদেশের সব বার থেকে আইনজীবী নিয়ে আমরা সালমান শাহ আইনজীবী পরিষদ গঠন করার চেষ্টা করছি। আইনজীবী সমাজ সজাগ হলে এ হত্যার বিচার হবেই। সমাজের সর্বস্তর থেকে সোচ্চার না হলে এ হত্যার বিচারের আলো মাঝে মাঝে জাগ্রত হবে; কিন্তু তা ফের নিভে যাবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তার মধ্যে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটন রোডে নিজের বাসা থেকে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ওরফে সালমান শাহর লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ দিকে সালমান শাহর মৃত্যুর ১০ মাস পর তদন্ত এক নাটকীয় মোড় নেয়। সালমানের বাবা কমরউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ১৯৯৭ সালের ১৯ জুলাই রিজভি আহমেদ নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে বাসায় অনধিকার প্রবেশের অভিযোগ এনে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেফতার হয়ে রিজভি আহমেদ আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে সালমান শাহকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করেন। তার দাবি, এই হত্যার পেছনে আছেন সালমানের স্ত্রী সামিরা হক, তার শাশুড়ি লতিফা হক, চলচ্চিত্রের খল অভিনেতা ও সালমানের বন্ধু আশরাফুল হক ওরফে ডন ও চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই। তাদের সাথে তিনি (রিজভি) নিজেও ভাড়াটে খুনি হিসেবে যুক্ত হন। তবে তদন্ত শেষে পুলিশ বলেছে, রিজভির জবানবন্দী মিথ্যা।
No comments