Breaking News

পশ্চিমা পুরুষেরা বস্তুগত সুখের চেয়ে হৃদয়কেই প্রাধান্য দিতে অভ্যস্ত, বাঙ্গালিরা টাকা

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কুর্মিটোলার গলফ গার্ডেনে সংস্কৃতিমন্ত্রী ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের একমাত্র কন্যা সুপ্রভা তাসনিম ব্রিটিশ নাগরিক টিমথি স্টিফেন গ্রীনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই বিয়েকে ঘিরে সমালোচকদের অহেতুক বিতর্ক এবং তির্যক মন্তব্যে কান ঝালা-পালা।

সময়ের সাথে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেছে। দেশ সংস্কৃতির আঙ্গিনা পেরিয়ে সে কেবলই একজন মানুষ তাই পছন্দের সঙ্গী নির্বাচনে কোন বাঁধা নেই। পৃথিবীটা অনেক বড়, পৃথিবীর পরিসরে আমাদের একটাই পরিচয়, মানুষ! বিদেশ থেকে যখন কোন সাদা চামড়ার নারী ভালবাসার টানে এসে আমাদের দেশের ছেলের সাথে ঘর বাঁধে, সংসার করে তখন পত্রিকায় খবর হয়। মেয়েটি যদি অবস্থাপন্ন হয় তাহলে তো কথাই নেই একেবারে আনন্দে আত্মহারা সবাই।
ছেলেটিকে আমরা ভাগ্যবান বলি, আর মেয়েটিকে খুবই ভাল মানসিকতার একজন বলে স্তুতি গাই। সমস্যাটা তখনই হয় যখন মেয়েটি আমাদের দেশের আর ছেলেটি পশ্চিমা শ্বেতাঙ্গ। মেয়েটি যদি খ্যাতিমান এবং সম্পদশালী পরিবারের হয় তাহলে পুরো পরিবার সহ খারাপ। আর সেই যে পাত্র ভালবাসার টানে শ্যামাঙ্গিনী মেয়েটিকে নিজের জীবনের সাথে জড়ালো সে ব্যাপারে কেউ আলোচনা করতেই রাজী নন। সবার তখন একটাই চিন্তা সম্পদ! ঈর্ষা কাতরতা একটি মারাত্মক ব্যাধি।
মেয়েটি ভীষণ খুশী, ওর সুখী সুখী চেহারা, হাস্যজ্বল আনন্দিত মিষ্টি মুখ কিছুই দৃষ্টি গোচর হচ্ছে না কারণ মাথার মধ্যে ঘোরপাক খাচ্ছে শ্বেতাঙ্গ ছেলেটি নিমিষেই সব কিছু জয় করে নিয়ে গেল। আদতে ছেলেটি শ্বশুরের ধন-দৌলত, টাকা-পয়সা, রাজনৈতিক বিষয়-আসয় এই সব বস্তুগত সুখ সম্পর্কে একেবারেই অনভিজ্ঞ। কারণ পশ্চিমা পুরুষেরা বস্তুগত সুখের চেয়ে হৃদয়কেই প্রাধান্য দিতে অভ্যস্ত।
আমাদের দেশে বিয়ে হলে অনেক সউদাগর পাত্র তৈরি ছিল, বিত্ত বৈভব কোথাও কোন অভাব হত না কিন্তু চিত্ত! চিত্তকে বুঝানো কি এতোটাই সহজ! হৃদয়ে হৃদয়ে যে সখ্যতা, তা এতো সহজেই হয় না। কারণ দুজন মানুষের পড়াশুনা, কৃষ্টি সংস্কৃতি, মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গির মিলনেই কেবল পরিপক্ক সম্পর্ক রচনা সম্ভব।
সন্তানদের আমরা পশ্চিমা দেশে পাঠাচ্ছি সেখান থেকে উপযুক্ত শিক্ষা লাভের জন্য। পড়াশোনার পাশাপাশি সমাজ থেকেও তাঁরা জ্ঞান আহরণ করে, নিজেকে নতুন করে সাঁজায়। সেখানে যদি কারো সাথে হৃদয়ের আদান-প্রদান ঘটে ক্ষতি কি! সন্তানের সুখই যদি কাম্য হয় সমস্যা কোথায়?
সবকিছু হিসেব নিকেশ করে যে বিয়ে হয় সেখানে সবাই হয়তোবা খুশী থাকে কিন্তু প্রেম থাকে না। কারণ সেটা কেবলই বাণিজ্য। ঠিক বাণিজ্যে যেমন পুঙ্খানু পুঙ্খানু রূপে সব কিছু হিসেব নিকেশ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ঠিক তেমন। প্রেমের বিয়েতে হিসেবের খাতা শূন্য হলেও হৃদয়টা থাকে ভরপুর।
ছেলে কিংবা মেয়ে যেই হোক না কেন একবার পশ্চিমা দেশে বড় হলে তাঁদের চিন্তা চেতনা মনস্তাত্ত্বিক অনেক পরিবর্তন সাধিত হয় যা কেবল দেশে বড় হওয়া ছেলে-মেয়েদের সাথে খাপ খাওয়ানো কষ্ট সাধ্য হয়ে পরে।
পশ্চিমা দেশের ছেলে মেয়েরা রঙ কিংবা বিত্ত বৈভব নয় মানুষটাকেই মূল্যায়ন করে সবচেয়ে বেশী। হতে পারে আমাদের দেশের মেয়েরা পুরুষের এই গুনটিকেই বেশী পছন্দ করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কারণ প্রতিটি মেয়েই তাঁর পছন্দের পুরুষের কাছে সম্মান, নিশ্চয়তা আর ভালবাসা চায়। নিজেরাই যেহেতু শিক্ষিত উপযুক্ত টাকা পয়সা নিয়ে বা ধন-সম্পদ, শাড়ি-গাড়ী নিয়ে চিন্তা করার ফুরসৎ কই।
বাণিজ্যের সাথে সম্পর্কের কারণে উচ্চবিত্তের জৌলুসপূর্ণ অনেক কোটি টাকার বিয়েতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সম্পদের নিরিখে পিতারা এই বিয়ে ঠিক করেন। দুই পক্ষই সম্পদশালী পরিবার। এই বিয়েকে কেন্দ্র করে তাঁদের মান-সম্মান, পতিপত্তি, সম্পদ সবকিছুই বৃদ্ধি পায়। কিন্তু দুঃখজনক হল সব ক্ষেত্রেই এই বিয়ে গুলো ঠিক ভাবে কাজ করে না।
উচ্চপদস্থ একজন আর্মি অফিসারের একমাত্র কন্যাকে পাত্রের পরিবারের অনুরোধে বিয়ের প্রস্তাব দিলাম, ওদের শিখানো বুলি আউড়ালাম, “দেখ পাত্র তোমায় হীরা জহরত সোনা দিয়ে মুড়িয়ে রাখবে, চাওয়ার আগেই সব হাজির।” মেয়েটি আমায় অবাক করে উত্তর দিল, “অ্যান্টি, গহনায় তো জীবন নেই কেবলই পাঁথর আর ধাতব পদার্থ এসব দিয়ে কি করবো?” সত্যিই তো যেখানে প্রাণ থাকে না মূল্যবান হীরা সেখানে পাঁথর বৈ আর কিছু তো নয়, সোনা প্লাটিনাম কেবলই ধাতব পদার্থ।
দুজন প্রাণচ্ছোল মানুষ যখন একসাথে হয় ভালবাসায় মালা গাঁথে, তাঁদের সমালোচনা নয়, তিরস্কার নয় একমাত্র মঙ্গল কামনাই কাম্য। পাত্র-পাত্রী পশ্চিমা হোক আর মধ্য প্রাচ্যের হোক ভালোবেসে সুখী হওয়াটাই আসল কথা। ভালবাসা কোন সীমানা মানে না, দেশ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ বুঝে না। ভালবাসা কেবল ভালবাসা খুঁজে সম্মানটুকু চায়।
খুজিস্তা নূর-ই-নাহারিন সম্পাদক, পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ।

No comments