Breaking News

বিচার বিভাগ যথেষ্ট ধৈর্য ধরছে

অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা নিয়ে আলোচনার জন্য সরকারের সাড়া না পেয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। রোববার শৃঙ্খলাবিধি চূড়ান্ত করার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেছেন, ‘বিচার বিভাগ যথেষ্ট ধৈর্য ধরছে।’ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা প্রসঙ্গে বিচারপতি সিনহা সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণা করে সে দেশের সুপ্রিমকোর্টের রায় দেয়ার পরের পরিস্থিতি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম তার আবেদনের শুনানির আরজি করলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা বিচার বিভাগ ধৈর্য ধরছি। যথেষ্ট ধৈর্য ধরছি। আজকে একজন কলামিস্টের লেখা পড়েছি, সেখানে ধৈর্যের কথাই বলা হল। পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে ইয়ে (অযোগ্য) করল। সেখানে কিছুই (আলোচনা-সমালোচনা) হয়নি। আমাদের আরও পরিপক্বতা দরকার আছে।’ রোববার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বিষয়টির ওপর পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৮ অক্টোবর তারিখ নির্ধারণ করেন। অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের জন্য এ নিয়ে ২৫ বার সময় পেল রাষ্ট্রপক্ষ। ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট প্রথমবারের মতো সময় দেয়া হয়। গত ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি চূড়ান্ত করতে রোববার পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। আদালত শেষে নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আদালতকে বলেছি, নানা কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত। এ জন্য শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়নে লম্বা সময় দেয়া হোক। তাহলে সার্বিক দিক স্থিতি লাভ করবে।’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে নানা দিক থেকে নানা রকম কথা হচ্ছে, সে কারণে। পরে আদালত ৮ অক্টোবর সময় দিয়েছেন। রোববার সকাল ৯টায় আদালতের শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সময়ের আবেদন দাখিল করেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, গত তারিখে কী কথা ছিল? কার সঙ্গে কে কে থাকবে তা ঠিক করে আলাপ-আলোচনার কথা ছিল। কে কে থাকবে- জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ল’ মিনিস্টার (আইনমন্ত্রী)। তখন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, অল জাজেজ অব অ্যাপিলেট ডিভিশন (আপিল বিভাগের সব বিচারপতির সঙ্গে)। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, এতই আমরা ইয়ে... হয়ে গেলাম আলোচনা পর্যন্ত করলেন না? অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নীতিনির্ধারণী বিষয়ে আমার কী করার আছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা মিডিয়াতে অনেক কথা বলবেন, কোর্টে এসে অন্য কথা বলবেন। আপনাকে বলছি না, আপনাদের কথা বলছি। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একটা আনস্টেবল সিচুয়েশন তৈরি হয়ছে। প্রধান বিচারপতি সেই ‘আনস্টেবল সিচুয়েশন’-এর বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সবটা নিয়েই আমি বিব্রত। বিচারপতি সিনহা বলেন, আপনারা ঝড় তুলছেন। আমরা কোনো মন্তব্য করেছি? অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, না, আপনারা করেননি। প্রধান বিচারপতি বলেন, পরবর্তী (তারিখ) কবে চান?’ আপনার মতই আমরা রাখলাম। ৮ অক্টোবর তারিখ রাখলাম। এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম এ সময় তার আবেদনের শুনানির আরজি জানান। প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনার আবেদনটি আছে। আমরা বিচার বিভাগ ধৈর্য ধরছি। যথেষ্ট ধৈর্য ধরছি। এ সময় তিনি পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্টের প্রসঙ্গ টানেন। উল্লেখ্য শৃঙ্খলা বিধিমালা তৈরি করতে আইন মন্ত্রণালয়ের দরকার নেই বলে গত ৬ আগস্ট আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। আবেদনে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ এ বিধিমালা করে ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে শুধু রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে বিধিমালা করতে পারেন বলে উল্লেখ করা হয়। মাসদার হোসেন মামলার আবেদনকারী পক্ষে তিনি আপিল বিভাগে এ আবেদনটি দাখিল করেন। এর আগে গত ৩ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ডাকা বৈঠকে অসুস্থতার কারণে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আসতে পারেননি। যদিও গত ৩১ জুলাই আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি প্রধান বিচারপতিকে ফোন করেছিলেন, ৩ আগস্ট সুপ্রিমকোর্টে আসবেন। নির্ধারিত বৈঠকে না যাওয়ার বিষয়ে ওই সময় আইনমন্ত্রী বলেন, আমি খুবই অসুস্থ। সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে জানিয়ে দিয়েছি, আসতে পারছি না। এর আগে গত ৩০ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আদালতে শুনানিকালে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুপুর ২টা থেকে রাত ১২টা নাগাদ আমি ও আপিল বিভাগের বিচারপতিরা আপনাদের (সরকার) সময় দেব। বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালা নিয়ে আর রশি টানাটানি নয়। আইনমন্ত্রীসহ সরকারের যে কোনো বিশেষজ্ঞ আসবেন, বৈঠকে বসব। আপনিও থাকবেন। এরপর ওইদিন দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বৈঠকের ব্যাপারে তাদের (আপিল বিভাগ) প্রস্তাব আমি আইন মন্ত্রণালয়কে জানাব। ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিন্ম আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। আপিল বিভাগের এ নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি তৈরি করে সুপ্রিমকোর্টে পাঠায়। গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিকালে আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিল ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু। যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী। এর পরই সুপ্রিমকোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। গত ১৬ জুলাই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এ সংক্রান্ত গেজেট শিগগির প্রস্তুত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী। পরে ফের ২৭ জুলাই বিকালে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খসড়াটি হস্তান্তর করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। কিন্তু ৩০ জুলাই সকালে শুনানিকালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির বেঞ্চ আইনমন্ত্রীর দেয়া খসড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হল। তিনি খসড়া দিয়ে গেলেন। আমি তো খুশি হয়ে গেলাম। যদিও খুলে দেখিনি। কিন্তু এটি কী?’ এরপর বৈঠক ডেকেছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। গেজেট প্রকাশ নিয়ে সরকার-বিচার বিভাগের মধ্যে আলোচনার উদ্যোগ নেব- অ্যাটর্নি জেনারেল : বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ নিয়ে সরকার এবং বিচার বিভাগের মধ্যে আলোচনার বিষয়ে সংযোগ রক্ষার উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রোববার নিন্ম আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশের বিষয়ে শুনানি শেষে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া রায়ের কিছু অংশ পড়ে মন্তব্য নয়, সার্বিকভাবে পড়ে একটু চিন্তা-ভাবনা করে মতামত দেয়া উচিত। পরিস্থিতি উত্তপ্ত কেন- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ষোড়শ সশোধনীর রায় নিয়ে নানা দিক থেকে নানা রকম কথা হচ্ছে, সে কারণে। এর জন্য কারা দায়ী জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদালত এ বিষয়ে কাউকে দায়ী করেননি।

No comments