ছবিটি, কেবলই ছবি নয়
তুমি কি কেবলই ছবি, শুধু পটে লিখা /
ওই-যে সুদূর নীহারিকা/
যারা করে আছে ভিড় আকাশের নীড়,/
ওই যারা দিনরাত্রি/
আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী গ্রহ তারা রবি,/
তুমি কি তাদের মতো সত্য নও।
না ছবিটি কেবলই ছবি নয়। এখানে আলো হাতে আঁধারের যাত্রী কে, সেই প্রশ্নও আমরা করছি না। তবে মনে মনে চাই, একটি ছবি বদলে দিক বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। যত ঝড়ঝাপটাই আসুক না কেন, আমরা আঁধার থেকে আলোতেই ফিরতে চাই।
ঈদুল আজহার দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে যে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন, তাতে অনেকেই যোগ দিয়েছিলেন। দেশে থাকলে প্রতি ঈদেই প্রধানমন্ত্রী গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এই সুযোগে অনেক সাধারণ মানুষ তাঁদের সুখ-দুঃখের কথা জানান। প্রতিকার চান। প্রধানমন্ত্রীও সাধ্যমতো চেষ্টা করেন তাঁদের সেসব সমস্যার সমাধান করতে।
দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে টুকরো টুকরো অনেক ছবি আছে। ভালো লাগার ছবি। ভালোবাসার ছবি। কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তোলা ‘দুর্লভ’ ছবি নিজ নিজ ফেসবুকেও পোস্ট করেছেন। শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিজ হাতে মিষ্টি খাইয়ে দিয়েছেন, সে ছবিও টিভিতে, অনলাইনে দেখানো হচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সাকিবদের এই জয় ঈদের আনন্দকে নিঃসন্দেহে বাড়িয়ে দিয়েছে।
কিন্তু সব ছবিকে ছাপিয়ে গণভবনের যে ছবিটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে, সেটি হলো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার শুভেচ্ছা বিনিময়। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, প্রধান বিচারপতি হাত তুলে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানাচ্ছেন। আর প্রধানমন্ত্রীও হাত তুলে সেই সালামের জবাব দিচ্ছেন। দুজনের মুখে অমলিন হাসি। এটাই স্নিগ্ধ রুচির পরিচয়। ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের মতপার্থক্য থাকবে, তাই বলে মুখ দেখাদেখি বন্ধ হবে কেন? সৌজন্য প্রকাশে কার্পণ্য থাকবে কেন?
প্রধান বিচারপতি গত ঈদেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপটটি ভিন্ন। গত আড়াই মাসে পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় অনেক পানি গড়িয়েছে। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় নিয়ে যখন আওয়ামী লীগের চড়া গলার নেতারা, সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরা প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিষোদ্গার করে চলেছেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান বিচারপতির এই শুভেচ্ছা বিনিময় ও সাক্ষাৎ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
যে মন্ত্রীরা প্রধান বিচারপতিকে পাকিস্তান পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, যাঁরা তাঁর মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, তাঁরা এখন কী বলবেন? সেই মন্ত্রী ও নেতাদের কেউ কেউ গণভবনেও উপস্থিত হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির সহাস্য ছবিটি দেখে তাঁদের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছে, জানতে ইচ্ছে করে।
যে প্রধান বিচারপতিকে তাঁরা পাকিস্তান পাঠাতে চেয়েছিলেন, সেই প্রধান বিচারপতি গণভবনে হাজির হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। আর প্রধানমন্ত্রীও তাঁকে আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। ফলে তাঁদের আশা অপূর্ণই থেকে গেল।
সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী তো ষোড়শ সংশোধনীর রায় প্রধান বিচারপতি লিখেছেন কি না, সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, এত কম সময়ে ৪০০ পৃষ্ঠার পর্যবেক্ষণ লেখা সম্ভব নয় এবং এ রায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই লিখে দিয়েছে।
একজন সাবেক বিচারপতির ব্যক্তিগত রাগ ও বিদ্বেষ কোন পর্যায়ে গেলে এ ধরনের আজগুবি কথাবার্তা বলতে পারেন। ১ সেপ্টেম্বর ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার দিন তারিখ উল্লেখ করে দেখিয়ে দিয়েছে, প্রধান বিচারপতি কত দ্রুত যুদ্ধাপরাধের রায়গুলো লিখেছেন।
তবে প্রধান বিচারপতি সিনহা দেশ ও জনগণের একটি মস্ত বড় উপকার করেছেন। আগে বিচারপতিদের অনেকেই অবসরে যাওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ রায় লিখতেন, এমনকি ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক দিয়েছেন অবসরে যাওয়ার ১৩ মাস পর। সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রশাসনিক আদেশে জানিয়েছেন, অবসরে যাওয়ার আগে সব বিচারপতিকে পূর্ণাঙ্গ রায় লিখতে হবে।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী যখন অবসরে যান, তখন একগাদা রায় লেখা বাকি ছিল। সেটিই সম্ভবত তাঁর সমস্ত রোষের কারণ।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান বিচারপতি ছবিটি ‘দুর্মুখদের’ অনেক সমালোচনারই উত্তর বলে মনে করি।
ওই-যে সুদূর নীহারিকা/
যারা করে আছে ভিড় আকাশের নীড়,/
ওই যারা দিনরাত্রি/
আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী গ্রহ তারা রবি,/
তুমি কি তাদের মতো সত্য নও।
না ছবিটি কেবলই ছবি নয়। এখানে আলো হাতে আঁধারের যাত্রী কে, সেই প্রশ্নও আমরা করছি না। তবে মনে মনে চাই, একটি ছবি বদলে দিক বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। যত ঝড়ঝাপটাই আসুক না কেন, আমরা আঁধার থেকে আলোতেই ফিরতে চাই।
ঈদুল আজহার দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে যে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন, তাতে অনেকেই যোগ দিয়েছিলেন। দেশে থাকলে প্রতি ঈদেই প্রধানমন্ত্রী গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এই সুযোগে অনেক সাধারণ মানুষ তাঁদের সুখ-দুঃখের কথা জানান। প্রতিকার চান। প্রধানমন্ত্রীও সাধ্যমতো চেষ্টা করেন তাঁদের সেসব সমস্যার সমাধান করতে।
দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে টুকরো টুকরো অনেক ছবি আছে। ভালো লাগার ছবি। ভালোবাসার ছবি। কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তোলা ‘দুর্লভ’ ছবি নিজ নিজ ফেসবুকেও পোস্ট করেছেন। শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিজ হাতে মিষ্টি খাইয়ে দিয়েছেন, সে ছবিও টিভিতে, অনলাইনে দেখানো হচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সাকিবদের এই জয় ঈদের আনন্দকে নিঃসন্দেহে বাড়িয়ে দিয়েছে।
কিন্তু সব ছবিকে ছাপিয়ে গণভবনের যে ছবিটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে, সেটি হলো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার শুভেচ্ছা বিনিময়। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, প্রধান বিচারপতি হাত তুলে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানাচ্ছেন। আর প্রধানমন্ত্রীও হাত তুলে সেই সালামের জবাব দিচ্ছেন। দুজনের মুখে অমলিন হাসি। এটাই স্নিগ্ধ রুচির পরিচয়। ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের মতপার্থক্য থাকবে, তাই বলে মুখ দেখাদেখি বন্ধ হবে কেন? সৌজন্য প্রকাশে কার্পণ্য থাকবে কেন?
প্রধান বিচারপতি গত ঈদেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপটটি ভিন্ন। গত আড়াই মাসে পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় অনেক পানি গড়িয়েছে। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় নিয়ে যখন আওয়ামী লীগের চড়া গলার নেতারা, সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরা প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিষোদ্গার করে চলেছেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান বিচারপতির এই শুভেচ্ছা বিনিময় ও সাক্ষাৎ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
যে মন্ত্রীরা প্রধান বিচারপতিকে পাকিস্তান পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, যাঁরা তাঁর মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, তাঁরা এখন কী বলবেন? সেই মন্ত্রী ও নেতাদের কেউ কেউ গণভবনেও উপস্থিত হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির সহাস্য ছবিটি দেখে তাঁদের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছে, জানতে ইচ্ছে করে।
যে প্রধান বিচারপতিকে তাঁরা পাকিস্তান পাঠাতে চেয়েছিলেন, সেই প্রধান বিচারপতি গণভবনে হাজির হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। আর প্রধানমন্ত্রীও তাঁকে আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। ফলে তাঁদের আশা অপূর্ণই থেকে গেল।
সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী তো ষোড়শ সংশোধনীর রায় প্রধান বিচারপতি লিখেছেন কি না, সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, এত কম সময়ে ৪০০ পৃষ্ঠার পর্যবেক্ষণ লেখা সম্ভব নয় এবং এ রায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই লিখে দিয়েছে।
একজন সাবেক বিচারপতির ব্যক্তিগত রাগ ও বিদ্বেষ কোন পর্যায়ে গেলে এ ধরনের আজগুবি কথাবার্তা বলতে পারেন। ১ সেপ্টেম্বর ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার দিন তারিখ উল্লেখ করে দেখিয়ে দিয়েছে, প্রধান বিচারপতি কত দ্রুত যুদ্ধাপরাধের রায়গুলো লিখেছেন।
তবে প্রধান বিচারপতি সিনহা দেশ ও জনগণের একটি মস্ত বড় উপকার করেছেন। আগে বিচারপতিদের অনেকেই অবসরে যাওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ রায় লিখতেন, এমনকি ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক দিয়েছেন অবসরে যাওয়ার ১৩ মাস পর। সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রশাসনিক আদেশে জানিয়েছেন, অবসরে যাওয়ার আগে সব বিচারপতিকে পূর্ণাঙ্গ রায় লিখতে হবে।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী যখন অবসরে যান, তখন একগাদা রায় লেখা বাকি ছিল। সেটিই সম্ভবত তাঁর সমস্ত রোষের কারণ।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান বিচারপতি ছবিটি ‘দুর্মুখদের’ অনেক সমালোচনারই উত্তর বলে মনে করি।
No comments