Breaking News

ভ্রমণ: সিলেটের তিন পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের ঢল

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং। আনিস মাহমুদ, সিলেট।ঈদের ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে সিলেটে বেড়াতে এসেছেন সাব্বির আহমদ। পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা সাব্বিরের সঙ্গে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী আনিছা বেগম ও কলেজপড়ুয়া মেয়ে ফারিজা বেগম। সাব্বির আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল সিলেটের রাতারগুল, বিছনাকান্দি ও জাফলং এলাকায় বেড়াবেন। এবারের ঈদের ছুটিতে তাই তাঁরা সিলেটে ছুটে এসেছেন।
কেবল সাব্বিরই নন, তাঁর মতো অসংখ্য পর্যটক এবার সিলেটের এই তিন পর্যটনকেন্দ্রে বেড়াতে এসেছেন। আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া একটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত জলারবন রাতারগুল, জল-পাথরের শয্যাখ্যাত বিছনাকান্দি এবং নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের প্রতীক জাফলং ঘিরে ছিল পর্যটকদের ঢল। আগামী কয়েক দিন একই রকম দৃশ্য থাকবে বলে স্থানীয় প্রশাসন মনে করছে। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিনটি পর্যটনকেন্দ্রে আজ বেলা সোয়া একটা পর্যন্ত অন্তত ৩০ হাজার পর্যটক এসেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পর্যটকেরা বেশি ভিড় করেছেন বিছনাকান্দিতে। এরপরই পর্যটকদের উপস্থিতির হারে এগিয়ে রয়েছে রাতারগুল ও জাফলং। তিনটি পর্যটনকেন্দ্রের যাওয়ার রাস্তা খারাপ হওয়া সত্ত্বেও এখানে বেড়াতে এসে পর্যটকেরা নিজেদের সাধ্যমতো আনন্দ উপভোগ করার চেষ্টা করছেন। বিছনাকান্দিতে জলবিহারের পাশাপাশি রাতারগুলে জলের ওপর জঙ্গুলে পরিবেশ তৈরি করা বুনো সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকেরা। জাফলংয়ের পাথর, সীমান্তবর্তী জিরো পয়েন্ট আর ভরা পিয়াইন নদের বুকে নৌকায় ভেসে বেড়াতেও পর্যটকেরা আকৃষ্ট হচ্ছেন।

সিলেট শহরতলির অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র অ্যাডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ড। ছবি: আনিস মাহমুদঈদের দিন গতকাল সোমবার বিকেলে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে রাতারগুলে বেড়াতে এসেছেন সিলেট নগরের শিবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘শহর থেকে মাত্র ঘণ্টা দেড়েকের দূরত্ব। সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুলে জলমগ্ন গাছগুলো একে অপরের সঙ্গে গলাগলি করে রয়েছে। জলের মধ্যে বন, এ এক আলাদা মায়াবী টান। আর এ আকর্ষণেই আমরা বন্ধুরা মিলে সেখানে ছুটে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে অনেক পর্যটকের উপস্থিতিও দেখলাম।’
কয়েকজন পর্যটক জানান, তিনটি পর্যটনকেন্দ্রে যেতে রাস্তার দুরবস্থা পর্যটকদের বেশি ভোগাচ্ছে। এ দুর্ভোগের আশঙ্কা সত্ত্বেও পর্যটকেরা বেশি আসছেন। রাস্তাগুলো সংস্কার করা গেলে পর্যটনকেন্দ্রগুলোর সম্ভাবনা শতভাগ কাজে লাগানো সম্ভব হতো। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি হিসেবে পর্যটনকেন্দ্রগুলো ভ্রমণপিপাসুদের কাছে গুরুত্ব পেলেও কেবল ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে অনেক পর্যটক এসব স্থানে যেতে বিমুখ হচ্ছেন।
পাহাড়, ঝরনা আর সবুজের প্রাচুর্যে ভরা সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ছড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন সব পর্যটনকেন্দ্র। সবুজে মোড়া পাহাড়ের কোলঘেঁষা পাথুরে নদী, বন, ঝরনা, চা-বাগান, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন—কী নেই এখানে! সিলেটের বৈচিত্র্যে ভরা সৌন্দর্য দেখতে ছুটে যান পর্যটক আর ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। ঈদের মতো উৎসবে এসব পর্যটনকেন্দ্রে থাকে উপচে পড়া ভিড়। তেমনই একটি জায়গা জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখাল। ছবি: আনিস মাহমুদগোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ রাখতে তিনটি পর্যটনকেন্দ্রে পুলিশ, বিজিবি, ট্যুরিস্ট পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক রেসকিউ টিম প্রস্তুত রয়েছে। পানিতে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে স্পিডবোট মজুত রাখা হয়েছে। প্রতিটি নৌকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে লাইফ জ্যাকেট রাখা হয়েছে। এমনকি চালু করা হয়েছে পর্যটন সহায়তা কেন্দ্র।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সালাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, জাফলং তো আগে থেকেই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্পট ছিল। এখন বিছনাকান্দি ও রাতারগুলও দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমনও বাড়ছে। এবার ঈদের ছুটিতে প্রচুর পর্যটক এসেছেন।
ইউএনও আরও বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনে আরও প্রচুরসংখ্যক পর্যটক আসবেন বলে আমাদের ধারণা। সে অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্পটগুলোতে নিরাপত্তাসহ পর্যটনবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।’ তাঁর ধারণা, ঈদের ছুটিতে এ তিনটি স্পটে প্রায় দুই লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে।

No comments