Breaking News

রাখাইনে জরুরি অবস্থা জারির পাঁয়তারা

  
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে মিয়ানমারের উগ্র বৌদ্ধরা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দমনপীড়ন চলছেই। শিগগিরই এ অবস্থার উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং রোহিঙ্গা দমনে আরও কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন দেশটির ব্যাপক ক্ষমতাধর সামরিক বাহিনী। বিশ্লেষকরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের নিবাস রাখাইন রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হতে পারে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দৈনিক দ্য ন্যাশনাল ও বার্তা সংস্থা এপি বুধবার এ খবর দিয়েছে



মঙ্গলবার মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রধানরা এক বৈঠক শেষে জানান, কথিত রোহিঙ্গা হামলা অব্যাহত থাকলে তারা ক্ষমতাধর জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের (এনএসডিসি) বৈঠক আহ্বান করতে পারেন। মিয়ানমারের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সমন্বয়ে এই পরিষদ গঠিত। অং সান সুচির আস্থাভাজন প্রেসিডেন্ট টিন কিয়া এনএসডিসির বৈঠক ডাকার ক্ষমতা আছে। সুচি ২০১৬ সালের এপ্রিলে ক্ষমতা নেয়ার পর এই পরিষদের কোনো বৈঠক এখনও হয়নি।

কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, মিয়ানমারের সংখ্যালঘু বৌদ্ধরা চাচ্ছে যে কোনো মূল্যে রোহিঙ্গা নিধন। ফলে সেনাবাহিনী জরুরি অবস্থা ঘোষণার উদ্যোগ নিলে তাতে তাদের সমর্থন মিলবে। জরুরি অবস্থা জারি হলে তার প্রয়োগের সর্বময় ক্ষমতা পাবে সেনাবাহিনী। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের মিয়ানমারবিষয়ক বিশ্লেষক ম্যারি চালাহান বলেন, সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের হামলার জবাবে উত্তর রাখাইনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হতে পারে। অনেকে রাজনীতি ও প্রশাসনে সেনাবাহিনীর নাক গলানোর বিরোধী হলেও রোহিঙ্গা দমনে সমর্থন দিতে পারে।

মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, রাখাইনের সংঘাতময় বুথিডং ও মংডুর অর্ধেক এলাকায় সশস্ত্র রোহিঙ্গার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা এই এলাকাকে ‘মুক্ত অঞ্চল’ ঘোষণা করেছে।

এদিকে এপির খবরে বলা হয়, বুধবার মিয়ানমারের অন্যতম বড় শহর ইয়াঙ্গুনে শত শত বৌদ্ধ রাখাইনে কথিত রোহিঙ্গা হামলা ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। তারা রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান। মুসলিমবিদ্বেষী উগ্র বৌদ্ধ সন্ন্যাসী উইরাথু বলেন, শুধু সেনাবাহিনীই উত্তর রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। তিনি এনএসডিসির বৈঠক ডাকার আহ্বানে সুচি সাড়া দেননি অভিযোগ করেন তার সমালোচনা করেন। গত ২৫ আগস্ট একদল সশস্ত্র রোহিঙ্গা রাখাইনে কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালিয়েছে অভিযোগ করে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন্স’ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। রাখাইনে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার বাস। মিয়ানমার সরকার তাদের কোনো নাগরিক অধিকারই দেয়নি।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সেনাবাহিনী জঙ্গি দমনের কথা বলে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, হত্যা করছে নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের। প্রাণ বাঁচাতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ ছুটে আসছেন। অনেকে বনে-জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন।

এরদোগানের হুশিয়ারি : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান বলেছেন, নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমদের চলমান সহিসংতার মধ্যে নিঃসঙ্গ ছেড়ে দিতে পারি না। বুধবার আঙ্কারার প্রেসিডেন্ট ভবনে এক বৈঠকে এরদোগান বলেন, রাখাইনে আরও মানবিক সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে তুরস্ক। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এ ব্যাপারে অনুরোধ জানাবে তুরস্ক। জঙ্গিবাদ দমনে যে কোন সরকারের পদক্ষেপের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এরদোগান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি হুশিয়ার করে বলেন, সন্ত্রাস দমনের নামে নিরস্ত্র জনগণের ওপর নির্যাতন মেনে নেয়া যায় না। মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য জাতিসংঘের হস্তক্ষেপও কামনা করেন এরদোগান। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে এবং মিয়ানমারকে চাপ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।’

No comments