রোহিঙ্গা প্রশ্নে হেলাফেলা নয়, দরকার বুকভরা ভালোবাসা
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম
কিছু দিন হাসপাতালে, তারপর পুরো মাস গৃহবন্দী। কেন যেন পা চলে না। মানুষ যে এত অল্পে এত কাবু হতে পারে জানা ছিল না। অনেকবার অসুস্থ হয়েছি। একেবারে ছেলেবেলায় সাত-আট বছর বয়সে হুপিংকাশিতে আক্রান্ত হয়েছিলাম। কাশতে কাশতে দম বন্ধ হয়ে আসত। মা সারা রাত শিয়রে জাগতেন, আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতেন, ‘হে দয়াময় প্রভু! ওর কষ্ট আমাকে দিয়ে ওকে ভালো করে দাও। ’ তাই বোধহয় আমি সেরে উঠি। মা হাঁপানিতে আক্রান্ত হন। সারা জীবন সেই হাঁপানি মাকে বয়ে বেড়াতে হয়েছে। তারপর কলেরা হয়েছে, বসন্ত হয়েছে, গুলিবিদ্ধ হয়েছি আরও কত কি। কিন্তু কখনো এমন অসহায়বোধ করিনি। ৩১ আগস্ট বড় মেয়ে কুঁড়ি লন্ডন থেকে আসে। ঘুম থেকে উঠে স্বাধীনতার গায়ক বঙ্গবন্ধুর পাগল আমার প্রিয় আবদুল জব্বারের জানাজা সেরে বিমানবন্দরে গিয়েছিলাম মেয়েকে আনতে। বিকালে রওনা হয়েছিলাম টাঙ্গাইলের পথে। ৭ ঘণ্টায় চন্দ্রার বাড়ইপাড়া। তারপর সে এক মহাবিপর্যয়। বাড়ইপাড়ায় জয়নাল আবেদীনের বাড়িতে ১৫-১৬ ঘণ্টা অচেতন থেকে টাঙ্গাইল গিয়েছিলাম পরদিন সন্ধ্যায়। কিছুক্ষণ পরই সদর হাসপাতালে। ঈদের ছুটি, ডাক্তার-নার্স তেমন কেউ ছিল না। এর পরও জরুরি বিভাগে যারা ছিল তারা অসাধ্য সাধনের চেষ্টা করেছে। আমাদের প্রিয় অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বার বার ফোন করেছেন, ‘জেলা হাসপাতালে পড়ে থেকে লাভ নেই। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে চলে আসুন। ’ বড় ভাই বলছিলেন, ‘এক্ষুনি চলে এসো। ’ কিন্তু নড়াচড়ার শক্তি ছিল না। পরম সুহূদ মেজর (অব.) আবদুল মান্নান তার হেলিকপ্টারে টাঙ্গাইল থেকে নিয়ে এসেছিলেন। ভর্তি হয়েছিলাম বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। মানুষের মমতা যে কত গভীর ডাক্তার-নার্স আপনজনের মতো সবাই দেখাশোনা করেছে। ভিসি কামরুল, ডা. শরিফ, পরিচালক ব্রিগেডিয়ার হারুন কার কথা বলব, অনেকের কথা মনেও নেই। হঠাৎই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসেছিলেন। পরদিন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তারপর মাননীয় মন্ত্রী আমির হোসেন আমু। কত দুর্গম পথ আমরা একসঙ্গে চলেছি। ’৭৫-এ তিনি পটুয়াখালীর আর আমি ছিলাম টাঙ্গাইলের গভর্নর। আপনজন হিসেবেই তাকে সারা জীবন জেনে এসেছি। তাই অসুস্থতায় পাশে পেয়ে খুবই ভালো লেগেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এসেছিলেন। বলতে গেলে আমরা একই পরিবারের। মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বাবা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আমাকে ভাইয়ের মতো দেখতেন। রাজনীতিতে সমস্যা হলো বাবাও ভাই, ছেলেও ভাই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ভাই। তার বড় ভাই মোহাম্মদ সেলিম ’৮৯-’৯০-এ যখন ইংল্যান্ডে ছিলাম কী যত্নই যে করেছিলেন, সে যত্নের কোনো তুলনা হয় না। এসেছিলেন জনাব গওহর রিজভী। ভদ্রলোক এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। খুব সম্ভবত জন্ম তার কিশোরগঞ্জে। তার বাবা কিশোরগঞ্জের এসডিও ছিলেন। ভদ্রলোক এক অমায়িক মানুষ। অক্সফোর্ডে তার বাড়িতে অসম্ভব যত্ন করেছেন। ’৯০-এর পর দেশে এলে বেশ কয়েকবার আমার মোহাম্মদপুরের বাড়ি এসেছেন। দু-চার বার এদিক-ওদিক সভা-সমাবেশেও গেছেন। তার মধ্যে ভালুুকার এক বিশাল জনসভায় শরিক হয়ে লোকজনের উত্সাহ-উদ্দীপনা দেখে অভিভূত হয়েছিলেন। দেখতে এসেছিলেন আমার চোখে বর্তমান যুগের বিধান চন্দ্র রায়, চিকিত্সা জগতের এক গর্বিত মানুষ জনাব এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। পারিবারিকভাবে আমরা বহু বছরের পরিচিত। তার স্ত্রী মায়া আপা কুমুদিনী কলেজে পড়তেন। তিনি তখন কেবলই পাস করে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ডাক্তারি শুরু করেছেন। মায়া আপা আর বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিয়েতে ভূমিকা রেখেছিলেন আমার শাশুড়ি নার্গিস হামিদ কোরায়শী। তা ছাড়া ছেলেবেলায় চঞ্চল ছাত্রকর্মী ছিলাম বলে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর আগেই তার বাবা কফিল উদ্দিন চৌধুরীকে চিনতাম। দু-চার বার ২-৪ টাকা চাঁদাও নিয়েছি। দুলাভাই বদরুদ্দোজা চৌধুরী দেখতে এসে একটা মারাত্মক কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘ভিআইপি জায়গা ভিআইপি রোগী। যা দরকার তার চাইতে বেশি ব্যবস্থাপনা। ’
প্রিয় অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত। তার কাছে বড় ভাই দাদা, আমি ছোট ভাই। ওকে আমরা সব সময় আপনজনের মতোই দেখেছি। সারা জীবন কতজনের জন্য পাল্লাপাল্লি করে সহযোগিতা করেছি। কোনোটা কাজে লেগেছে, কোনোটা লাগেনি। কিন্তু প্রাণ গোপালের প্রতি আমাদের মমতা যথার্থই কাজে লেগেছে। আরও কে কে এসেছেন এ লেখায় হয়তো সবার কথা বলতে পারব না। তবু ইসমত কাদির গামাকে দেখে বেশ ভালো লেগেছে। ঘাতকের হাতে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর যখন পরবাসে ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করেছেন আমি তখন তার পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছি। যে কথা যেখানে সেখানে ইসমত কাদির গামা বলেন। আমি তেমন শুনতে চাই না। কিন্তু সব মানুষ অন্যকে শোনানোর জন্য বলে না। নিজের বিবেক পরিষ্কার করার জন্যও বলে। ইসমত কাদির গামা তাদেরই একজন। বহুদিন পর মুকুল বোস এসেছিল। দোষে-গুণে মুকুল বোস আমার খুবই প্রিয়। এসেছিলেন সুভাষ সিংহ রায়। তার স্ত্রী মমতা হেনা লাভলী আমার মেয়ের মতো। কুশি-কুঁড়ি যেমন আমার হূদয়জুড়ে থাকে, লাভলীও তেমনি। দর্শনার্থীর বড় চাপ ছিল। যে মানুষ এপাশ-ওপাশ করতে পারি না, রাত ১২টা পর্যন্ত লোক আর লোক। বিশেষ করে যুবকদের চাপ বেশি, বিবেচনা কম। কেউ বলছে আমি খুলনা থেকে এসেছি, কেউ পাবনা— কেন দেখা করতে পারব না। আসলে একজন অসুস্থ রোগীকে বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া দরকার, দেখা করার পাল্লা দেওয়ার দরকার নয়। কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র এসেছিল। তারা আমার লেখা ‘স্বাধীনতা ’৭১’ পড়েছে। তাই তাদের সঙ্গে দর্শন দিতে হবে। টিকতে না পেরে সময়ের আগেই বাড়ি চলে এসেছিলাম। বাড়িতে অনেকটা শান্তি পেয়েছি। আমাদের ভক্তরা এমনিতেই অনেকটা সুশৃৃঙ্খল। এখনকার দিনে অতটা শৃঙ্খলা আশা করা যায় না। যাকেই বলা হয়েছে এখন দরকার নেই। কয়েক দিন যাক তারপর দেখা হবে। তাই তারা করেছে।
সারা জীবন আপন-পর বিচার করিনি। এখনো করি না। এতে হয়তো স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের মনে কখনোসখনো দুঃখ জাগলেও জাগতে পারে। কিন্তু তবু যা পারি না তা করি কী করে। এমনও শুনেছি প্রধানমন্ত্রী সবাইকে বলে দিয়েছেন ‘বজ্রের যাতে কোনো অসুবিধা না হয়। ’ চারদিক থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উতালা হয়ে ছুটে আসায় গ্রিন সিগন্যালের আভাস মেলে। বহুদিন পর মগবাজারের মনির এবং তার কয়েক কমিশনার বন্ধুকে দেখে ২৫ বছর আগে দেশে ফেরার অনেক স্মৃতি মনে দোল খাচ্ছিল। আসলে সুস্থ দেহে অসুস্থের যন্ত্রণা বোঝা যায় না। অসুস্থ হলে আপন চেনা যায়। আমার অতি সাদামাটা স্ত্রী, সে যে কতটা কী করেছে আমার লেখার শক্তি নেই তা যথাযথ প্রকাশ বা ফুটিয়ে তোলার। বড় মেয়ে কুঁড়ি এসেছিল ৩১ আগস্ট। কাল চলে যাবে। ওর এবার দেশে আসাটাই মাটি হয়ে গেছে। বাবা অসুস্থ থাকলে কোনো সন্তানের ভালো লাগে? আর যে সন্তানেরা বাবা-মার জন্য ব্যাকুল থাকে তাদের তো ভালো থাকার কথা নয়। কুঁড়ি গেলে ঘর খালি হয়ে যাবে, বাড়ি খালি হয়ে যাবে, কুশির বড় কষ্ট হবে। কুশির মা এবং আমি না হয় কোনোভাবে মানিয়ে নেব। কিন্তু ছোট্ট মানুষটা কুশিমণি ভিতরে ভিতরে গুমরে মরবে। তবু এটাই জগতের নিয়ম। কর্তব্য এবং কর্ম সবার ওপরে। মেয়েটা যদি ভালোভাবে ব্যারিস্টারি পাস করে দেশে ফেরে বাবা পরপারে থেকেও খুব খুশি হবেন। তার খুব ইচ্ছা ছিল ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতকুর কেউ না কেউ আইন পেশায় যুক্ত হোক। ছোট ভাই আজাদ এলএলবি করেছে, সনদও নিয়েছে। কিন্তু কোর্টে যায় না। ওর কোনো স্থিরতা নেই। বড় কষ্টে দিন কাটায়। একসময় কোলেপিঠে মানুষ করেছিলাম। ছেলেবেলায় যতটা পায়ে হেঁটেছে তার চেয়ে অনেক বেশি আমার কাঁধে চড়েছে। তাই বড় কষ্ট লাগে। পরিবারের সব থেকে ছোট অথচ ভালো নেই, বড় বেশি কষ্টে আছে। এ কষ্ট যে কত কঠিন কাউকে বোঝানো যায় না। এর থেকে বেশি অসুস্থ হলেও বোধহয় অত কষ্ট লাগত না, যতটা মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের জন্য লেগেছে। চোখ বুজতে পারিনি। বুজলেই নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী নির্যাতিত মানবতার পাশে দাঁড়িয়ে দেশের কত বড় সম্মান রক্ষা করছেন তা বলে কয়ে বোঝানো যাবে না, দরকারও পড়ে না। অং সান সু চির অত্যাচার থেকে জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রোহিঙ্গাদের আমরা যদি আশ্রয় না দিতাম, হাজার হাজার রোহিঙ্গা হত্যা করে সু চির যে কলঙ্ক তিলক জুটেছে সীমান্তে আমাদের লোকেরা তাদের ঢুকতে না দিয়ে দু-চার জনকে আহত-নিহত করলে সু চির চেয়ে অনেক বেশি বদনামের আমরা ভাগী হতাম। জননেত্রী হতেন বিশ্বজোড়া নিন্দিত। সেখান থেকে আমরা বেঁচেছি। আজ পৃথিবী কমবেশি আমাদের পাশে। বলা হচ্ছে ভারত-রাশিয়া-চীন মিয়ানমারকে সমর্থন করছে। সত্যিই তারা কি মিয়ানমারের গণহত্যায় সু চির পাশে? আমরা কি ভারত-রাশিয়া-চীনকে একবার জিজ্ঞাসা করেছি? হ্যাঁ, তাদের পারস্পরিক স্বার্থ আছে, ব্যবসা-বাণিজ্য আছে সেগুলোতে সমর্থন আছে। তাই বলে কি তারা হত্যায়ও সাহায্য করবে আমরা কি তাদের জিজ্ঞাসা করতে পারি না? সবকিছু সহজে পেতে নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে রাখাইন রাজ্যকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ জোন সৃষ্টি করে তাদের সসম্মানে সেখানে নিয়ে যাওয়ার যে প্রস্তুাব করেছেন তা যথার্থ। আজ হোক কাল হোক অবশ্যই রোহিঙ্গারা তাদের নিজভূমে সসম্মানে ফিরে যাবে এটা পৃথিবীর ইতিহাস, এটাই নিয়ম। হাজার বছরের ইতিহাসে কখনো দানবীয় পশুশক্তি জয়ী হয়নি, এখানেও হবে না। তবে যারা এসেছে তাদের ভালোভাবে সম্মানের সঙ্গে মায়া-মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে হবে। আমরা তাদের যদি মায়া-মমতার বন্ধনে দুঃখ ভুলিয়ে রাখতে না পারি সন্ত্রাস সন্ত্রাস বলি, এখান থেকেই সন্ত্রাসের জন্ম হবে। আর যদি প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসার ডোরে বেঁধে তাদের মানুষের মতো মানুষ করতে পারি আজকের উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকেও হয়তো কয়েক দশক পর সু চির মতো মিয়ানমার নেতৃত্ব করতে পারে— তাই আমাদের সাবধানে চলা উচিত।
সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে ত্রাণকাজে কিছুটা শৃঙ্খলা এসেছে। সবই সাময়িক। আর রোহিঙ্গা ইস্যুকে যদি সামরিকীকরণ করা হয় তাহলে সরকার এবং জাতি সাংঘাতিক ক্ষতিগ্রস্তু হবে। যেখানে সেনাবাহিনীর দরকার সেখানে নিশ্চয়ই সেনাবাহিনী কাজ করবে। কিন্তু ম্যালেরিয়ায় কুইনাইনের মতো সবখানে সেনাবাহিনী সর্বনাশের নামান্তর। সেনাবাহিনী দিয়ে তালিকা করা হচ্ছে। কোনো কোনো কেন্দ্রে ২০০-৩০০-এর বেশি করতে পারছে না। এভাবে করতে গেলে তো কয়েক যুগ লেগে যাবে। এখানে স্থানীয় লোকের সাহায্য দরকার, বিশেষ করে ছাত্রদের। যারা তালিকা করছেন তারা রোহিঙ্গাদের ভাষা বোঝেন না। ১০ বার বললেও হয়তো সঠিক তালিকা হচ্ছে না। ওখানকার স্থানীয় ছাত্রবন্ধুরা ফরম পূরণ করে দিলে ৩০০-এর জায়গায় ৩ হাজার, ৩ হাজারের জায়গায় ৩০ হাজার হতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। সেদিন শুনলাম রোহিঙ্গাদের যেসব সন্তান আমার দেশে জন্মেছে তারা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাবে না। একজন জেলা লেভেলের নিম্নমানের কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক স্বীকৃত একটা অধিকার লোনা পানির মতো অস্বীকার করে বসেছেন। এটা আন্তর্জাতিক স্বীকৃত একটা ব্যাপার। যে যেখানে জন্মাবে সেটা তার মাতৃভূমি। মানে রোহিঙ্গা সন্তানদের জন্ম নেওয়া দেশ তাদের মামার বাড়ি। আকাশপথে কোনো শিশু জন্মালে আজীবন তার ভাড়া নেওয়া হয় না। যে দেশের বিমানে জন্মায় সেই দেশের নাগরিক সুবিধা পায়। কিন্তু আমাদের দেশে অন্য আইন। আমাদের দেশে যত অভাব থাকুক, আটা-ময়দা-ডাল-চাল-তেল-নুন-গ্যাসের— কিন্তু পণ্ডিতের অভাব নেই। সবাই সব বোঝে, জাতিসংঘ মহাসচিবের চেয়েও বেশি বোঝে। এভাবে কোনো সমাজ চলে না। যাই হোক, সরকার সেনাবাহিনী নিয়োগ করে একটি ভালো কাজ করেছে। কিন্তু তাদের যেন বিতর্কিত না করা হয়। কাজটা জনসমর্থনের, কাজটা মানুষের ভালোবাসা ও সহযোগিতার। শুধু শৃঙ্খলাই বড় কথা নয়। পুলিশ বা মিলিটারি একাডেমির মতো ব্যাপার নয়। এটা মানবতার ব্যাপার, সহমর্মিতা ও সহযোগিতার ব্যাপার।
এ পর্যন্ত যতটা দেখা গেছে রোহিঙ্গারা যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। তাদের যা প্রয়োজন তার চেয়ে কোনো কিছুই বেশি দাবি করেনি। কতজন কত কাপড় দিয়েছে তা তারা ছুঁয়েও দেখেনি, রাস্তায়ই পড়ে আছে। কারণ এখন তাদের কাপড়ের দরকার নেই। তাদের দরকার খাদ্যের, তাদের দরকার পানির, তাদের দরকার মাথা গোঁজার ঠাঁই, পেশাব পায়খানার নিরাপদ জায়গা। এসবের জন্য দেশে একটা জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন। প্রথম অবস্থায় সেই ঐক্যের সূচনা সরকারকেই করতে হবে। সরকার ব্যর্থ হলে সে দায়ভার তাকে বহন করতে হবে। যারা রাজনীতি করেন সারা জীবন তারা অবশ্যই রাজনীতি করবেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থের ওপর নিজের স্বার্থ স্থান দেবেন না— দেশবাসীর এমনটাই প্রত্যাশা।
লেখক : রাজনীতিক।
No comments