আসামিকে না পেয়ে চাচাকে পিটিয়ে হত্যা করল পুলিশ
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার হারুঞ্জা শাহ্ পাড়া গ্রামে পুলিশ আসামিকে না পেয়ে তার ব্যবসায়ী চাচাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার ভোরে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহতের নাম সাইদুর রহমান। তিনি ওই গ্রামের কাজিম উদ্দীনের ছেলে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশের দুই এসআইসহ ৪ সদস্যকে কর্মস্থল থেকে পুলিশ
লাইন্সে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। আর প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনের জন্য ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নিহতের পরিবার ও প্রতিবেশীরা জানান, ভোরে হারুঞ্জা শাহ্ পাড়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় শাপলা নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করতে যান কালাই থানা পুলিশের এসআই আসাদ ও রফিকের নেতৃত্বে আরও দুই পুলিশ কনস্টেবল। অভিযোগ উঠেছে, আসামিকে না পেয়ে বাড়ির মহিলাদের ওপর লাঠিচার্জ করতে থাকে পুলিশের এই দল। এ সময় ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান ঘর থেকে বেরিয়ে এসে তাদের এ অমানবিক আচরণের কথা জিজ্ঞেস করায় পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে তার মাথা ও শরীরে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। এ অবস্থায় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পুলিশ তাকে দ্রুত কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মিঠুন সরকার জানান, ভোর ৫টার দিকে সাইদুর রহমানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিক পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তিনি হাসপাতালে ভর্তির আগেই মারা গেছেন। নিহতের শরীরে বেধড়ক মারপিটের চিহ্ন দেখা গেছে বলেও জানান এই চিকিৎসক। এদিকে সাইদুর রহমানের মৃত্যুর খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে হারুঞ্জা শাহ্পাড়ার শত শত জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডিউটিরত পুলিশ সদস্যদের ঘেরাও করে রাখে। এ সময় হাসপাতাল চত্বরে রাখা একটি মাইক্রোবাস ও মূল কেচিগেট ভেঙে দেয় জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জয়পুরহাট জেলা শহর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে কর্তৃপক্ষ। এরপরও জনতাকে শান্ত করতে না পেরে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশের এএসআই শহিদুল ও শফিকুল এবং দুজন বিক্ষোভকারী আহত হন। এ ঘটনায় নিহতের বাবা কাজিম উদ্দীন পুলিশ কর্তৃক ছেলের অকাল মৃত্যুর জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি জানিয়ে বলেন, অদক্ষ পুলিশ সদস্যদের দ্বারা আর যেন কোনো মা-বাবার বুক খালি না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে এই পুলিশদের বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে জয়পুরহাটের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সাজ্জাদ হোসেন জানান, অপ্রত্যাশিত এ ঘটনায় ইতোমধ্যেই দুই এসআইসহ পুলিশের ৪ সদস্যকে থানা থেকে জয়পুরহাট পুলিশ লাইন্সে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের ৩ জনকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
No comments