কেন এই হাসি-তামাশা!

বাংলাদেশকে য়ে কেন এই হাসি-তামাশা!
















                           বাংলাদেশকে য়ে কেন এই হাসি-তামাশা!
বাংলাদেশ দল এখন হাসি তামাশার খোড়াকে পরিণত হচ্ছে! যেভাবে নাটকীয়তা চলছে দলে, তাতে ক্রিকেটাঙ্গনে হাসি-তামাশা ছাড়া আর কী-ইবা হবে। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকাতে যেয়ে একের পর এক নাটক।
বাস্তবে এর কোনো প্রয়োজন ছিল কিনা সেটাই এখন আলোচনার মুখ্য। প্রথম টেস্টে খেলা একাদশ থেকে দ্বিতীয় টেস্টে চার ক্রিকেটারের পরিবর্তন। এতটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে লাভটা কার। আসলে এসব সিদ্ধান্ত কী হাতুরাসিংহের মাথা থেকে নামে না অন্য কোথা থেকে সেটাই বিষয়। দক্ষিণ আফ্রিকা কেমন দল সেটা সবার জানা। সে দলের জন্য একটা সলিড একাদশ গড়লেই চলে। কন্ডিশনটাও সবার জানা।
তাহলে এত পরিবর্তনের কী প্রয়োজন। নিশ্চয়ই বাংলাদেশ জিতবে না। সে যোগ্যতা এখনো হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকা সুযোগ দিলেও বোধ হয় সেটা নেয়ার মতো খেলোয়াড় নেই। এরপর সাকিব বিশ্রামে। তাহলে একটা সেটআপ দিয়েই তো চালিয়ে দেয়া যায়। কেন এত পরিবর্তন। কেন ১৫ সদস্যের স্কোয়াডের সবাইকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানোর এত প্রয়োজনীয়তা। ব্লুমফন্টেইনে কাল থেকে শুরু হওয়া ম্যাচে যে চার ক্রিকেটার দলভুক্ত করা হয়েছেÑ তারাই যে আহামরি কিছু করে ফেলবেন সেটা তো নয়। প্রথম টেস্টে যারা খেলেছেন তারা ব্যর্থ হয়েছেন? কী করা উচিত ছিল তাদের।
যারা নতুন এলেন। তারাই বা কী করবেন। খুব কী বেশি পার্থক্য এদের মধ্যে। হাতুরাসিংহের পরীক্ষাগারে এত রঙ বদলানো বাংলাদেশের ক্রিকেট, সমালোচনায় বিদ্ধ। শ্রীলঙ্কায় খেললো এক দল। হোমে এসে সেখানে আবার পরিবর্তন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও আছে পরিবর্তন। সিরিজে সিরিজে পরিবর্তনই শুধু নয়। প্রতিটা ম্যাচেও রয়েছে এমনটা। কার অভিজ্ঞতা বাড়ছে এতে। বাংলাদেশ দলে কতটুকু লাভ হচ্ছে সেটা কে দেখবে।

প্রথম টেস্টে ইনজুরি থাকা সত্ত্বেও খেলানো হয়েছে তামিমকে। বেশির ভাগ সময় ফিল্ডিংই করেননি এ ক্রিকেটার। ব্যাটিংয়েও সুবিধা করতে পারেনি। যেহেতু প্রথম টেস্টের পর দ্বিতীয় টেস্ট এবং তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ও দুই ম্যাচের টি-২০ সিরিজ রয়েছে। তাহলে তামিমে রিক্স নেয়ার প্রয়োজন খুব বেশি ছিল? এখন দ্বিতীয় টেস্টে বাইরে। ওয়ানডে সিরিজেও রাখা হলেও আদৌ খেলতে পারবেন কিনা সেটা সময় এলেই বলে দেবে। তবে টেস্ট ম্যাচ খেলতে ফিটনেস প্রয়োজন রয়েছে। অভিজ্ঞতা থাকলেই হয় না। ফিটটাও জরুরি। হাতুরাসিংহ অ্যান্ড গং সেটা মাঝে মধ্যে ভুলে গেলে তো বিপদ! যেহেতু সৌম্য সরকার সেরে উঠেছেন আগের সেটআপ ঠিক রেখে সৌম্যকে সেখানে নামালেই হতো। কিন্তু দলে পরিবর্তন এসেছে আরো তিনটি। এর মধ্যে অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজকে বাদ দিয়ে সলিড স্পিনার তাইজুলকে নেয়া হয়েছে। অথচ ব্লুমফন্টেইনের উইকেট ফাস্ট ও বাউন্সি।
টস জিতে মুশফিক আবারো ফিল্ডিং নিয়েছেন ওই কারণেই। অথচ বাস্তবতা কী তা লাঞ্চ বিরতিতে ডিন এলগার ও মার্করামের করা ১২৬ রানই প্রমাণ দেয়। এলগার তো ওয়ানডে খেলছেন। ওই পর্যন্ত তার করা ৭২ রানের ইনিংসে রয়েছে ১৩ চার এক ছক্কা। হাফ সেঞ্চুরি (৫৪) করে অপরাজিত ছিলেন মার্করামও। তিনিও হাঁকিয়েছেন ৮ চার। তাহলে মুশফিক কী দেখল। কেন এমন ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত টস জেতা সত্ত্বেও।
ব্লুমফন্টেইনের পিচ রিপোর্টে আগের দিনই জানা গিয়েছিল যে এ মাঠে সপ্তাহ দুইয়েক আগে এক চার দিনের ম্যাচে প্রচুর রান হয়েছে। টেস্টের উইকেটও প্রথম দুই দিন উইকেটে গতি বাউন্সটা কম হবে। তৃতীয় দিন থেকে ওটা বাড়বে। এরপরও মুশফিক কার পরামর্শে আবারো ফিল্ডিংয়ে গেলেন। দলে দুই পেসারের পরিবর্তন আনা হয়েছে। শফিউলের স্থানে শুভাশিষ।
আর তাসকিনের স্থানে রুবেল। তাসকিনের পরিবর্তনটা ঠিক আছে। কিন্ত শফিউল তো অনায়াসেই থাকতে পারেন স্কোয়াডে। শুভাশিষ এমন কী বোলার যে প্রোটিয়া কন্ডিশনে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের ভিত নাড়িয়ে দেবেন! আসলেই হাসির খোড়াক এসব। একজন ক্রিকেটার একটা টেস্ট ম্যাচ খেলার পর তার ভুল শুধরে দ্বিতীয় ম্যাচে নতুন প্লান এঁকে নামবেন এটাই স্বাভাবিক। অথচ ড্রেসিং রুমে অস্বস্থিকর এক পরিস্থিতি। কে পরের ম্যাচে খেলবেন। কে দল থেকে বাদ পড়ছেন ক্রিকেটাররা এ নিয়েই থাকেন বেশি সময় তটস্থ। রুবেলকে দলে রাখা যায়। তাসকিনকেও।
যেহেতু ফাস্ট ও বাউন্সি উইকেট। শুভাশিষ কী তাসকিনের চেয়েও গতি সম্পন্ন। তাহলে প্রথম টেস্টে এদের নামিয়ে দেয়া হয়েছিল কেন? ওই ম্যাচের উইকেটও তো বাংলাদেশের কাছে ছিল ফাস্ট ও বাউন্সি। দলটা গড়া হয়েছিল সেটা দেখেই। আসলে জাতীয় দলের স্কোয়াড এখন রঙ্গমঞ্চে পরিণত। মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহর নাকি টেস্ট ম্যাচে অনেক দুর্বলতা আছে। আবার তাদের দলে ডেকে নেয়া। এখন তাদের ওপর সব ভরসা। এক সিরিজের গ্যাপে দুইজন ক্রিকেটারকে নিয়ে এত বাজে মন্তব্য ও আবার দলে টেনে নেয়া এসবের কী অর্থ। কোন পথে এগোচ্ছে দেশের টেস্ট ক্রিকেট। অনভিজ্ঞ কিছু লোক ক্রিকেটারদের নিয়ে মেতেছেন। কোথায় কী যে তারা চান, সেটা বোধহয় তারা নিজেরাও জানেন না!

ব্লুমফন্টেইনেও প্রোটিয়া রান উৎসব

পচেফস্ট্রুমের কার্বনকপিই যেন ব্লুমফন্টেইন। দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের মধ্যকার দুই টেস্টের মধ্যে কোনো পার্থক্যই যেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথম টেস্টে টসে জিতে স্বাগতিকদের ব্যাটিং করতে দেয়ার চড়া মাশুল গুনেছে টিম বাংলাদেশ। রানে চাপা পরে যায় মুশফিকরা সে ম্যাচে। হারতেও হয়েছিল বড় ব্যবধানে। দ্বিতীয় টেস্টেও সেই টসে জিতে আবারো প্রতিপক্ষকে ব্যাটিং করতে দেয় মুশফিক। এবং এ ম্যাচের উইকেটও সেই ব্যাটিং সহায়ক এবং প্রথম দিনেই বাংলাদেশকে প্রোটিয়া রান চাকায় পিস্ট করে ফেলেছে। প্রথম দিন শেষে সংগ্রহ করেছে তারা ৪২৮ রান তিন উইকেটে। এটা দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম দিনে রান সংগ্রহের দিক থেকে। এর আগে ১৯২১ সনে জোহানেসবার্গে ৪৫০ রান করেছিল তারা প্রথম দিনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
এ দিকে এ সিরিজের আগের ম্যাচে দুই উদ্বোধনী জুটি যে কাজগুলো করেছিলেন, এ ম্যাচে তার চেয়েও ভয়ানক অবস্থা সৃষ্টি করে রেখে গেছেন। আগের ম্যাচে ডিন এলগার ১৯৯ ও মার্করাম ৯৭ করে আউট হলেও এ ম্যাচে দু’জনই সেঞ্চুরি পেয়েছেন। মার্করাম আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি না করার আক্ষেপে পোড়ার পর এ ম্যাচে ১৪৩ করে আউট হয়েছেন। ডিন এলগার করেছেন ১১৩। আগের ম্যাচে এদের ওপেনিং পার্টনারশিপ ছিল ১৯৬। এ ম্যাচে তাদের উদ্বোধনী পার্টনারশিপটা সংগৃহীত হয় আরো দ্রুত ২৪৩ রানের। ৫৩.৪ ওভারে ওই রান সংগ্রহ করেছেন তারা। অবশ্য বাংলাদেশ সফল যে সেঞ্চুরি করলেও দুই ব্যাটসম্যানকেই আউট করতে পেরেছেন। এলগার ১৫২ বলে ওই রান করে আউট হন ১৭টি চারের সাহায্যে। যার আগে সেঞ্চুরি করেছিলেন ১১৬ বলে। আর মার্করাম তার ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ১৪১ রানে। যার মধ্যে ছিল ১৬টি চারের মার। মার্করাম অবশ্য আউট হয়েছেন রুবেল হোসেনের বলে। বোল্ড হয়ে যান তিনি। তার আগে ১৪৩ করেছেন তিনি ২২টি চারের সাহায্যে ১৮৬ বলে। কতটা দ্রুত রান তুলেছেন এ দুই ওপেনার ওপরের ওই গ্রাফ থেকে কিছুটা হলেও অনুমান করা যাবে।
লাঞ্চ বিরতিতে এরা সংগ্রহ করে ফেলে এ দিন ১২৬ রান। এর মধ্যে দুই ওপেনার করে ফেলেছিলেন হাফ সেঞ্চুরি। আর চা বিরতিতে ওই স্কোর পৌঁছে গিয়ে ২৫৬ এ। যদিও এক উইকেট (এলগার) হারায় তারা এর মধ্যে। এ ম্যাচে বাংলাদেশ স্কোয়াডে পরিবর্তন আসে চারটি। তামিম তো ইনজুরির জন্য আগেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন। তার স্থানে ইনজুরি থেকে সেরে ওঠা সৌম্য খেলেন। কিন্তু এর পরও আরো তিন পরিবর্তন। তারা হলেনÑ অল রাউন্ডার মেহেদি হাসানের স্থানে স্পিন স্পেশালিস্ট তাইজুল। অপর দুইজন তাসকিনের স্থানে রুবেল হোসেন ও শফিউলের স্থানে শুভাশিষ রায়।
এ দিন প্রোটিয়া যে হারে রান তোলা শুরু করেছিল, তাতে মনে হচ্ছিল টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম দিনে প্রথমবারের মতো ৫০০ রান করে ফেলবে কোনো দল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের দুই পেস বোলার শুভাশিষ ও রুবেল তাতে বাদ সাধেন। তারা তিন উইকেটের পতন ঘটান। চা বিরতির আগে এলগারকে আউট করার পর শেষ সেসনে এসে মার্করাম ও ভাবুমাকে আউট করতে সক্ষম হয়ে কিছু সাফল্য দেখান। এরপর হাশিম আমলা ও ফাফ ডুপ্লেসিস মিলে দিন শেষে বিশাল সংগ্রহ করে রয়েছেন অপরাজিত। আমলা সেঞ্চুরির খুব কাছে রয়েছেন। করেছেন ৮৯ রান। প্লেসিস অপরাজিত ৬২ রানে। দুই ব্যাটসম্যান আজ আবার খেলতে নামবেন। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে শুভাশিষ রায় নিয়েছেন ২ উইকেট ৮৫ রানে। অন্য উইকেটটি নেন রুবেল। মুস্তাফিজ ও তাইজুল উইকেট শূন্য দিন শেষ করেন। 

No comments