Breaking News

এখন কিছুটা হলেও সুখে আছি, নিরাপদে আছি।



এখন কিছুটা হলেও সুখে আছি, নিরাপদে আছি। খাবারের জন্য এদিক ওদিক ছুটতে হয় না। ত্রাণের জন্য রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেয়ার পর ত্রাণ বিতরণসহ ক্যাম্পগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরেছে।



এভাবেই বলছিলেন প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে আসা ৫৫ বছরের আমিনা বেগম। সেনা নির্যাতনে দুই সন্তানকে হারিয়ে তার এখন ঠাঁই হয়েছে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে।

তবে শত শত একর বনভূমি উজার করে বসতি গড়ে উঠায় হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার জীববৈচিত্র্য।

সরকার দুই হাজার একর বনভূমি রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দের ঘোষণা দিলেও সবশেষ তারা ছড়িয়ে পড়েছে উখিয়া রেঞ্জের ১০ হাজার একর বনভূমিতে।

এদিকে রোহিঙ্গা স্রোত অব্যাহত রয়েছে। গত দু’দিনে প্রায় ২২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। ফলে তারা নিজেরাই বনভূমি দখল করে যার যার মতো করে বস্তি গড়ে তুলছে।

এদিকে প্রশাসনের নজরদারি উপেক্ষা করে রোহিঙ্গা নারী ও শিশু পাচারকারীদের টার্গেট করার অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে সহস্রাধিক রোহিঙ্গা নারী ও শিশু নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে এর মধ্যে ২৫৫ জন ফিরে এলেও বাকিদের খোঁজ নেই। নিখোঁজ সংবাদ দিয়ে মাইকিংও করা হচ্ছে।

এছাড়া রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রম সহজ করতে উখিয়ায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৯টি সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ত্রাণের জন্য রোহিঙ্গাদের এখন আর ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় না। নেই যানজট ও কাড়াকাড়ি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে রোহিঙ্গা নিবন্ধনের কাজ।

যেভাবে পৌঁছছে ত্রাণ

বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ত্রাণ প্রথমে বুঝে নিচ্ছেন সেনা সদস্যরা। পরে টোকেনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। যারা ত্রাণ নিয়ে আসছেন তারাও বিতরণ করতে পারছেন। তবে সেনাবাহিনীর সিরিয়াল মেনে চলতে হচ্ছে। সবকিছুই হচ্ছে সুশৃঙ্খলভাবে।

কথা হয় উখিয়ার থাইংখালী হাইস্কুল মাঠে আশ্রয় নেয়া আয়েশা বিবি (৩৫) ও দিল ফরাজ খাতুনের (৩৮) সঙ্গে। তারা বলেন, সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেয়ার পর দু’বেলা খেতে পারছি। নিরাপদে রাতযাপন করতে পারছি। দালালরা আর ঘুর ঘুর করে না।

কথা হয় বালুখালী ক্যাম্পে দায়িত্বরত সেনা কর্মকর্তা মোসাদ্দেক আবু সায়িদের সঙ্গে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা-স্থানীয়দের ওপর নজর রাখা হচ্ছে।

২০ পরিবারের জঙ্গল জীবন

রোহিঙ্গারা জানান, মংডু কোনো রোহিঙ্গা নেই। মিয়ানমারের সেনারা এখন বুচিদং ও রাছিদংয়ে অভিযান চালাচ্ছে। সীমান্তবর্তী বদর মোকাম থেকে দুই থানার দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার।

তিন সন্তানের জননী দিলদার বেগম জানান, ৯ দিন আগে তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করে মিয়ানমারের সেনারা। প্রাণ বাঁচাতে সন্তানদের নিয়ে নাফ নদী পার হয়ে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছি।

বছিদংয়ের মাস্টার হেদায়েতুল ইসলাম জানান, তাদের গ্রামে ১২০ পরিবারের মধ্যে শতাধিক পরিবার চলে এসেছে। বাকি ২০ পরিবার জঙ্গলে লতা-পাতা খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।

নারী-শিশুদের টার্গেট

প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা তরুণী ও শিশুদের নিখোঁজ হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। এ নিয়ে ক্যাম্পে ক্যাম্পে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, উখিয়ার কুতুপালং, টিভি টাওয়ার পাহাড়, বালুখালী, মাইন্যার ঘোনা, তাজনিমার খলা, হাকিমপাড়া, থাইংখালী ও তেলখোলা, অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নারী-শিশু পাচারকারীরা তৎপর রয়েছে। দামি গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পে ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণের নামে তারা নারী-শিশুদের টার্গেট করছে। বাসা বাড়িতে কাজ দেয়াসহ নানা প্রলোভনে তরুণী ও শিশুদের নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, প্রতিদিনই নারী ও শিশু নিখোঁজ হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। নিখোঁজদের সংবাদ প্রচারের জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষও খোলা হয়েছে। মাইকেও হারানো সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে।

নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নজির আহমদ জানান, প্রতিদিন অসংখ্য নারী ও শিশু নিখোঁজের খবর মাইকে প্রচার করতে হচ্ছে।

৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মাণ

রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের উদ্যোগে উখিয়ায় ৯টি সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে।

উখিয়া উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় উখিয়ায় ৯টি ও টেকনাফে ১টি সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।

রাজাপালং ইউনিয়ন ও পালংখালী ইউনিয়নের কুতুপালং-মধুরছড়া, মাছকারিয়া, বালুখালী, থাইংখালী, তাজুনিরমার খোলা, হাকিম পাড়া, ঘোনার পাড়া এবং টেকনাফের মুছনি ক্যাম্পে এসব নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল আলীম লিটন বলেন, ত্রাণ দ্রুত পৌঁছাতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। ৭০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের কবলে ১০ হাজার একর বনভূমি

উখিয়া উপজেলার ২ লাখ সাত হাজার ৩৭৯ জন মানুষের সঙ্গে বাড়তি যোগ হয়েছে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। স্থানীয়দের জীবনযাপনেও এর প্রভাব পড়ছে। এদিকে সরকার ২ হাজার একর বনভূমি রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দের ঘোষণা দিলেও এর বাইরে উখিয়া রেঞ্জের ১০ হাজার একর ভূমিতে তারা বসতি গড়ে তুলছে।

বন বিভাগ বলছে, কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পসহ পুরনো রোহিঙ্গারা দখলে নিয়েছিল প্রায় ৬ হাজার একর বনভূমি। এবার নতুন করে দখল করে নিয়েছে ৪ হাজার একর বনভূমি। এভাবে বন উজার হওয়ায় পশু-পাখির আবাসস্থল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বনাঞ্চলে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে- যার ফলে প্রতিনিয়িত লোকালয়ে হানা দিচ্ছে হাতির পাল।

জনস্রোতে মিশে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা

রোহিঙ্গারা মিশে যাচ্ছে স্থানীয়দের সঙ্গে। রোহিঙ্গারা বেশভুষা বদলে সহজে পার হয়ে যাচ্ছে তল্লাশি পয়েন্ট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গাড়িচালক জানান, বিভিন্ন স্টেশন থেকে যাত্রী উঠানামার সময় রোহিঙ্গারা বাঙালি সেজে গাড়িতে উঠছে। পরে তল্লাশি পয়েন্টের আগে নেমে হেঁটে পার হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানিয়েছে, কক্সবাজার টেকনাফ সড়কের পনেরটি পয়েন্টে তল্লাশি চলছে। এসব পয়েন্টে চলাচলরত যানবাহনে তল্লাশি চালিয়ে রোহিঙ্গাদের উদ্ধার তাদের বালুখালী ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।

No comments