চামড়া কিনতে ৭৩৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে সরকারি চার ব্যাংক
কোরবানির চামড়া কিনতে ৭৩৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার
লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংক। আগামী সপ্তাহে
এই ঋণ বিতরণ শেষ হবে। কাঁচা চামড়ার বড় সরবরাহ আসে এই কোরবানির ঈদে।
ব্যবসায়ীরাও এই ঈদ থেকে বেশি চামড়া সংগ্রহ করে থাকেন।
এ কারণে চামড়া ব্যবসায়ীদের বিশেষ ঋণ দেওয়ার উদ্যোগও থাকে
ব্যাংকগুলোর। চামড়া কিনতে এবার যে ঋণ দেওয়া হবে, তার সুদের হার ধরা হয়েছে
১০ থেকে ১১ শতাংশ। তবে চামড়া খাতে দেওয়া ঋণ সহজে আদায় হয় না, এ কারণে অন্য
ব্যাংকগুলো এই ঋণে তেমন আগ্রহী নয়।
চামড়া দেশের দ্বিতীয় রপ্তানি খাত। এ জন্য সরকারের পক্ষ
থেকে নানা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে এই খাতে। কম সুদে সহজে ঋণপ্রাপ্তি
নিশ্চিতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রপ্তানিতে নগদ সহায়তা বৃদ্ধি করা
হয়েছে।
ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব চামড়া ব্যবসায়ী
আগের ঋণ পুরোপুরি শোধ করেছেন, শুধু তাঁদেরই ঋণ দেওয়ার জন্য নীতিমালা করেছে
অগ্রণী ব্যাংক। এ ছাড়া ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানটিকে শতভাগ উৎপাদনে থাকতে হবে।
ব্যাংক সূত্র বলছে, অ্যাপেক্স ট্যানারি ছাড়া অন্য কোনো গ্রাহক প্রতিষ্ঠান
ঋণ পাওয়ার যোগ্য নয়। এই খাতে ব্যাংকটি ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। আগের
বছর ব্যাংকটি এই খাতে ৬০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস-উল-ইসলাম প্রথম আলোকে
বলেন, যাঁরা ঋণ পরিশোধ করছেন শুধু তাঁরাই ঋণ পাবেন। এই খাতে পর্যাপ্ত
বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে শর্ত পূরণ করে ঋণ নেওয়ার মতো গ্রাহক তেমন নেই।
চামড়া খাতে ঋণ নেওয়ার জন্য সোনালী ব্যাংকে বেশ কয়েকজন
গ্রাহক থাকলেও নিয়মিত না থাকায় অনেকেই ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন। আগের
বছর ব্যাংকটি ভূলুয়া ট্যানারি, আমিন ট্যানারি ও কালাম ট্যানারিকে ১৫০ কোটি
টাকা ঋণ দেয়। চলতি বছরও ওই প্রতিষ্ঠান তিনটিকে সমপরিমাণ ঋণ দেওয়ার লক্ষ্য
নির্ধারণ করেছে ব্যাংকটি।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ প্রথম আলোকে
বলেন, ‘নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছে এমন তিন গ্রাহক প্রতিষ্ঠানকে আমরা ১৫০ কোটি
টাকা ঋণ দেব। প্রতিষ্ঠান তিনটিই ভালো ব্যবসা করছে, এ জন্য তারা ঋণ পাবে।’
জানা গেছে, আগের বছরের মতো চলতি বছরও চামড়া কিনতে সবচেয়ে
বেশি ঋণ দেবে জনতা ব্যাংক। জনতা ব্যাংক চামড়া কিনতে গত বছর ২৫০ কোটি টাকা
ঋণ দেয়। ২০টি প্রতিষ্ঠান এই ঋণ পায়। চলতি বছর এই খাতের জন্য ৩০০ কোটি টাকা
বরাদ্দ রেখেছে ব্যাংকটি। এ জন্য চামড়া ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দিয়েছে, পূর্বের
ঋণ পরিশোধ সাপেক্ষ তাদের ঋণ প্রদান করা হবে। রূপালী ব্যাংকের এখন পর্যন্ত
চামড়া খাতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। গত বছর এই খাতে ১৬০ কোটি টাকা ঋণ
দেয় রূপালী ব্যাংক। এবার চামড়া খাতে ঋণের জন্য ১৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা
হয়েছে।
সরকারি খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন
ব্যাংক এই খাতে সীমিত আকারে ঋণ দিয়ে থাকে। চলতি বছরও ব্যাংক দুটি এই খাতে
অর্থায়ন করবে।
চলতি অর্থবছরে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তার হার
সাড়ে ১২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া চামড়াশিল্প নগরী
থেকে ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদার রপ্তানিতে নগদ সহায়তার হার ১০ শতাংশ করা
হয়েছে। রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে চামড়া রপ্তানি করে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা
আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাদুকাসহ
চামড়াজাত পণ্যকে ‘বর্ষ পণ্য ২০১৭’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

No comments