Breaking News

অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধ করতে হবে

বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ভাগা জনগোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত, মিয়ানমারের রাখাইন স্টেট বা আরাকান প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলমানরা আবার ব্যাপক হত্যা, নির্যাতন, উচ্ছেদ, বসতি ধ্বংস প্রভৃতির শিকার হয়েছে। এ অবস্থায় প্রাণ ও সম্ভ্রম রক্ষার্থে শত শত নিরীহ দরিদ্র রোহিঙ্গা নারী-
পুরুষ শিশু-বৃদ্ধ প্রতিবেশী বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসছে। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা তাদের ঢুকতে দিচ্ছে না এবং দুই দেশের সীমান্তে কঠোর প্রহরা অব্যাহত আছে। এ দিকে মিয়ানমারের সেনা, পুলিশ ও সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ রাখাইন সম্প্রদায় মিলে রোহিঙ্গাদের ভিটেমাটিছাড়া করে গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে। প্রাণভয়ে পলায়নপর নিরস্ত্র রোহিঙ্গারাও ওদের নারকীয় বর্বরতা থেকে রেহাই পায়নি। গুলিবিদ্ধ কয়েকজন রোহিঙ্গা এখন চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন, যাদের মধ্যে এমনকি শিশুও রয়েছে। হেন অপরাধ নেই যা রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর করা হয়নি। গত কয়েক দশকে এটা বারবার দেখা যাচ্ছে। সামরিক জান্তার আমলে যেমন, এখন নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী অং সান সু চির দলের ‘গণতান্ত্রিক’ শাসনেও একই কায়দায় রোহিঙ্গারা অত্যাচার-অবিচারের শিকার হচ্ছে। জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটা বন্ধ করতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি, কোনো কোনো প্রভাবশালী রাষ্ট্র উল্টো মিয়ানমারের নিপীড়ক সরকারকে মদদ দিয়েছে ও দিচ্ছে।
এ দিকে, মিয়ানমার সরকার সেনা-পুলিশ দিয়ে দেশকে রোহিঙ্গাশূন্য করার নীলনকশা বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লেগেছে। সে মোতাবেক রোহিঙ্গা বসতি ধ্বংস ও ভস্মীভূত এবং তাদের নির্মূল ও উৎখাত করা হচ্ছে পৈশাচিক কায়দায়। রাখাইন স্টেটে রোহিঙ্গা নিধন ও নির্যাতনের সংবাদ যাতে বিশ্বে প্রচার না পায়, সে জন্য সেখানে মিডিয়ার প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয় না। এমনকি সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার ইয়াংহি লি রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে জানার জন্য মিয়ানমার সফরে গেলে তার সফরের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়, যা নজিরবিহীন। এ দিকে, ২০১২ সালের দাঙ্গায় ঘরবাড়ি হারিয়ে এক লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা আজো অস্থায়ী শিবিরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, আরাকানে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও ধ্বংসতাণ্ডবসহ বিরাট আকারে পৈশাচিকতা চালানোর জন্য প্রদেশটি থেকে রাখাইনদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ‘নিরাপত্তা’র কথা বলে। 
আমরা মনে করি, এভাবে বারবার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দেশের সরকার বা সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় কর্তৃক হত্যা, নির্যাতন, গ্রেফতার, ধর্ষণ, উচ্ছেদের শিকার হচ্ছে বিশ্ববাসী কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করায়। অসহায় রোহিঙ্গাদের জানমাল, ইজ্জত, বসতি ও জীবিকা রক্ষা, তথা তাদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে আসিয়ান, ওআইসি, জাতিসঙ্ঘÑ কেউই দায়িত্ব পালন করেনি। অবিলম্বে রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধ করে তাদের নিরাপদ জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা এবং নাগরিকত্ব প্রদান করাই মিয়ানমার সরকারের দায়িত্ব। এ জন্য তাদের চাপ দিতে হবে আন্তর্জাতিকপর্যায়ে।
 

No comments