Breaking News

দুদকের পাতা ফাঁদে তিন সরকারি কর্মচারী গ্রেফতার



দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ফাঁদ পাতা অভিযানে তিনজন গ্রেফতার হয়েছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় ঢাকা, টাঙ্গাইল ও নরসিংদীতে ফাঁদ পেতে তিনজন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ঘুষ গ্রহণকালে হাতে-নাতে গ্রেফতার করে বলে দুদক জানায়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, অধিশাখা-১৮, ঢাকার অফিস সহায়ক মোঃ সুলতান হোসেন তালুকদার, বিআরটিএ নরসিংদী কার্যালয়ের সিল মেকানিক সুমন কুমার সাহা এবং টাঙ্গাইলের ‘ক’ অঞ্চল আদালতের বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) মোঃ জাকির হোসেন।
দুদক জানায়, কমিশনের অভিযোগ কেন্দ্রের হটলাইন ১০৬ এবং কমিশনের নিজস্ব গোয়েন্দা উৎস থেকে ঘুষগ্রহণ ও দুর্নীতির অভিযোগ কমিশনে দাখিল হয়। পরবর্তীতে কমিশন আইন অনুসারে ফাঁদ মামলা পরিচালনার জন্য তিনটি বিশেষ টিম গঠন করে। টিমগুলোর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন দুদক ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক নাসিম আনোয়ার।
দুদক জানায়, বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধিশাখা-১৮, ঢাকার অফিস সহায়ক মোঃ সুলতান হোসেন তালুকদারকে জনৈক মোঃ মিজানুর রহমান নামে এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণকালে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ঘুষের ৫০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান, দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগে জানান, তিনি ২০১১ সালে মিরপুর বাংলা কলেজ থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে সম্মান পাশ করেন। তিনি কোনো চাকরি না পাওয়ায় মিরপুর এলাকায় ইদুর ও তেলাপোকা মারার ওষুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাকে ও তার স্ত্রীকে চাকরি দেয়ার নাম করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী সুলতান হোসেন তালুকদার তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। তার স্ত্রীও একজন দৃষ্ট প্রতিবন্ধী। তিনি চাকরির বিনিময়ে ঘুষ দিতে সম্মত হন এবং পরবর্তীতে মিজানুর রহমান তার আত্মীয়-স্বজনদের উপস্থিতিতে সুলতানকে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ দেন। দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও সুলতান চাকরির কোনো ব্যবস্থা না করায় মিজানুর রহমান তাকে বিভিন্ন সময় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চাকরি দেয়ার বিষয়ে তাগিদ দেন। গত ২৫ আগস্ট আসামি তার মোবাইল থেকে ফোন করে আরো ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। আসামির দাবিকৃত টাকা দিলে ঈদের পরে চাকরি হবে বলে জানান।
পরে অভিযোগকারী বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনকে অবহিত করলে, অভিযুক্তকে গ্রেফতারের জন্য কমিশন নয় সদস্যের একটি বিশেষ টিম গঠন করে। বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমানের মিরপুরের শাহআলীর নিউ সি ব্লকের ১ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাসার চারিদিকে দুদক বিশেষ টিমের সদস্যরা ওঁৎ পেতে থাকে। এসময় সুলতান হোসেন তালুকদার অভিযোগকারীর বাসা থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে ঘুষের ৫০ হাজার টাকাসহ দুদকের টিম তাকে হাতে-নাতে গ্রেফতার করে।
এদিকে আজ বেলা ১১টায় বিআরটিএ নরসিংদী কার্যালয়ের সিল মেকানিক সুমন কুমার সাহাকে জনৈক ইয়াছিন আরাফাতের কাছ থেকে পরীক্ষা ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার নাম করে ১০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণকালে দুদকের টিম হাতে-নাতে গ্রেফতার করে।
অপরদিকে বুধবার বেলা সাড়ে ১০টায় টাঙ্গাইল ‘ক’ অঞ্চল আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) মোঃ জাকির হোসেনকে টাঙ্গাইল পৌরসভার কোর্ট চত্বরের মজা রেস্টুরেন্ট থেকে জনৈক স্বপন মিয়া ও তার খালাতো ভাই আকবর হোসেনের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণকালে দুদকের টিম হাতে-নাতে গ্রেফতার করে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬টি ফাঁদ মামলায় ১৮ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ঘুষ গ্রহণকালে হাতে-নাতে গ্রেফতার করেছে দুদক।

No comments