সুনামগঞ্জ-১ আসন বিএনপি ও আ’লীগের একাধিক প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন
জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ)
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭,শুক্রবার, ০০:০০
উদ্দীপনাও বিরাজ করছে দ্বীপসদৃশ জনপদগুলোর ভোটারদের মধ্যে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় সুনামগঞ্জ-১ আসনে দু’দলে সৃষ্টি হয়েছে দলীয় গ্রুপিং। আর কে পাবে দলীয় মনোনয়ন এ নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে নির্বাচনী এলাকায়। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী সুযোগ বুঝে দলে নিজ নিজ নেতাকর্মীদের নিয়ে সশরীরে হাজির হয়ে প্রতিদিন সুনামগঞ্জ-১ আসনের (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলোর ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন এবং প্রচার-প্রচারণা, মতবিনিময়, গণসংযোগ, মিটিং এবং নেতাকর্মীদের ফেসবুকে নিজেদের তুলে ধরছেন। এ ছাড়াও সার্বক্ষণিক কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। আবার অনেকেই দলীয় মনোনয়নের জন্য সময় পেলেই ছুটে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। সুনামগঞ্জ-১ আসনের ভোটার এবং দুই দলের নেতাকর্মীরা জানান, দু’দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকায় গত রোজার আগে শুরু হলেও ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহায় ঈদ পুনর্মিলনীর সুযোগও তারা হাতছাড়া করেননি। দু’দলের প্রার্থী বেশি হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে হাওরপাড়ের বিভিন্ন উপজেলার নেতাকর্মীদের অনেকে পুরনো নেতাকে ভুলে উদীয়মান তরুণ নেতা নির্বাচন করতে চাইছেন। আর প্রাধান্য দিচ্ছে জনপ্রিয় তরুণ সম্ভাব্য প্রার্থীদের। আবার অনেকেই বলছে পুরান চাল ভাতে ভাড়ে। তাই অনেকেই অতীত মনে রেখে আছেন পুরান নেতার সাথেই। আবার দলের দুর্দিনে যারা অর্থ, শ্রম ও সময় দিয়ে দলকে শক্ত হাতে ধরে রেখেছেন, সেই পরীক্ষিত নেতাকে জাতীয় নির্বাচনে সমর্থন দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন অনেকেই। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নতুন ও জনপ্রিয় সম্ভাব্য প্রার্থীরা এগিয়ে চলছেন। তবে পিছিয়ে নেই বর্তমান ও সাবেক জনপ্রিয় এমপিরা। দল বেঁধে সবাই প্রতিদিন ভোটারদের কাছে হাজির হয়ে দলে তাদের অবস্থান কতটুকু তা জানান দিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে নিজের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছেন। তবে ভোটারদের দাবি হচ্ছে, যাদেরকে সব সময় কাছে পাওয়া যায়। সেই পরীক্ষিত নেতাকেই যেন মনোনয়ন দেয়া হয়। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দু’দলের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেনÑ সুনামগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সাবেক এমপি সৈয়দ রফিকুল হক সুহেল, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামীমা শাহরিয়ার, সিলেট আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক অ্যাডভোকেট রঞ্জিত সরকার, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা বিনয় ভূষণ তালুকদার, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম সামীম, সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান আহমেদ সেলিম ও রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রমুখ।
অন্য দিকে বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন : সাবেক এমপি নজির হোসেন, উদীয়মান জনপ্রিয় সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক, উদীয়মান সম্ভাব্য প্রার্থী তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল, ডাক্তার রফিক চৌধুরী, যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দি লিটন ও মোতালেব খান প্রমুখ। বিএনপির সাবেক এমপি নজির হোসেন বলেন, আমার কথা ও কাজের মূল্যায়ন আগেও আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জনগণ করেছেন। নেত্রীর নির্দেশেই দলের স্বার্থে এলাকায় গণসংযোগ করছি এবং সবার সাথে যোগাযোগ করছি দলকে সংগঠিত করতে। আমার কাজ ও যোগ্যতার কারণে এলাকায় আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে আর থাকবে সব সময়। জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক বলেন, সুনামগঞ্জ-১ আসনের জনগণের দুর্দিনে কেউ ছিল না সবাই নিজেকে রক্ষায় ব্যস্ত ছিল। আমি তখন দলকে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছিলাম এখনো আছি আর ভবিষ্যতেও থাকব। দলের জন্য আমার অবদানের মূল্যায়ন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও কেন্দ্রীয় নেতারা আগেও করেছেন। আগামীতেও করবেন। সুনামগঞ্জ-১ আসনের জন্য কে পরীক্ষিত নেতা তা সবাই অবগত আছে। এখনো দলকে সংগঠিত করতেই নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশেই মাঠে কাজ করছি। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, দলের স্বার্থে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিটি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে দলকে সংগঠিত করতে গণসংযোগ করছি। আমরা ব্যক্তি নয়, দলীয় প্রতীককেই প্রাধান্য দেবো। আমি এই এলাকার সন্তান সব সময় সবার সুখে-দুঃখে পাশে আছি এবং সব সময় থাকব। আমি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। বেগম খালেদা জিয়া ও তারুণ্যের প্রতীক তারেক রহমানের আদর্শ নিয়েই দল যাকে মনোনীত করবে, তাকে আমরা সমর্থন করব। সুনামগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, দলের স্বার্থে আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি। অন্যান্য প্রার্থী যারা আছেন তারা গণসংযোগ করছেন। জনপ্রিয়তা যার বেশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকেই মনোনয়ন দেবেন আর তার পক্ষেই কাজ করব। আমি বেঁচে থাকলে আমার কাজের মূল্যায়ন অবশ্যই পাব জনগণ ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সিলেট আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক অ্যাডভোকেট রঞ্জিত সরকার বলেন, আমি এই এলাকার সন্তান। এলাকায় আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে। সবার সাথেই যোগাযোগ হচ্ছে, সবাই আমাকে গ্রহণ করেছে। তৃণমূলের মতামত নিলে আমি দলীয় মনোনয়ন অবশ্যই পাব আর আশা করি প্রধানমন্ত্রী এবার আমাকে নিরাশ করবেন না।
No comments