Breaking News

ব্যভিচার, পরকীয়া, অশ্লীলতার নেপথ্যে


    
       গোলাম মাওলা রনি


কয়েক মাস ধরে হৃদয়মন এবং মস্তিষ্কের ওপর নিদারুণ ঝড় বয়ে যাচ্ছে। শতকরা নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যভিচার, পরকীয়া, অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতা এমনভাবে বেড়ে যাচ্ছে, যার দায় থেকে আল্লাহর দরবারে কতজন নিরীহ, বোবা ও অন্ধ মুমিন-মোত্তাকি রক্ষা পাবেন তা একমাত্র আসমান-জমিনের মালিকই বলতে পারবেন। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, নারী-পুরুষেরা দলে দলে একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে ভয়াবহ পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছে এবং তাদের দেখাদেখি অন্যরা প্রলুব্ধ হচ্ছে নতুবা নিজের অজান্তে ব্যভিচার বা জেনার অপরাধে অপরাধী হয়ে নিজের দুনিয়া-আখিরাত, ভূত-ভবিষ্যৎ এবং রিজিক-হায়াত বিনষ্ট করে ফেলছে। তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসার মতো পরিবেশ এতটাই সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে যে, অনাগত দিনে এ ধরনের পাপাচারের বিষয়ে তওবার দরজাই খুঁজে পাওয়া যায় কি না সন্দেহ।

এর সামাজিক কুফল নিয়ে ভাবছিলাম এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়ছিলাম বিষয়টির ভয়াবহ সংক্রামক তাণ্ডবের জন্য। যখন জানলাম যে, একটি দৃশ্য একটি ছবি কিংবা একটি চিন্তা, যা আমরা প্রায় সবাই নির্দোষ বলে বিবেচনা করি তাÑ আমাকে বা আপনাকে লম্পট হিসেবে আল্লাহর দরবারে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে, অন্য দিকে নিজেদের আমল-আখলাক এবং জীবনের পুঁজিকে নিঃশেষ করে দেবে। টেলিফোনে নারী-পুরুষের চটুল কথোপকথন, সামাজিক মাধ্যমগুলোয় অবাধ আড্ডা, সময় সুযোগমতো সামাজিকভাবে স্বীকৃত মেলামেশা; ও সংস্পর্শ, চলতে ফিরতে রাস্তাঘাটে পরস্পরের দিকে নীতিহীন দৃষ্টিপাত, অশ্লীল ছবি, চলচ্চিত্র ও গানবাজনা, বিশ্রী অঙ্গভঙ্গি এবং শব্দ মানুষের মন-মস্তিষ্ক, রুচি, ব্যক্তিত্ব ও আভিজাত্যকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণা এবং সতর্কবাণী পড়তে গিয়ে আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম যে, বিজ্ঞান এখন যা বলছেÑ তা স্বয়ং আল্লাহ চৌদ্দ শত বছর আগে আল কুরআনের সূরা বনি ইসরাইলের ৩২ নম্বর আয়াতে বলে দিয়েছেন।

পবিত্র কালামে পাকের ১৭ নম্বর সূরার ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা জেনার কাছেও যেও না। এটি অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ।’ এই আয়াতটির তাফসিরে প্রায় সব বিখ্যাত তাফসিরকারক এটাকে মানবজাতির সবচেয়ে ভয়াবহ ও জঘন্য অপরাধ বলে বর্ণনা করেছেন। বিষয়টি যতক্ষণ গোপন থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত তা তওবার আওতাভুক্ত বলে স্বীকৃত। কিন্তু সেটা প্রকাশ হয়ে পড়লেই একটি মারাত্মক ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হয়ে যায়। ইসলামের চারটি মাজহাবসহ পৃথিবীর সব স্বীকৃত ধর্মই জেনার শাস্তি ফৌজদারি কার্যবিধিমতে কার্যকর করার জন্য নির্দেশ দিয়ে থাকে।
আপনারা প্রথমেই লক্ষ করুন, আল্লাহ কিন্তু জেনা করা বা না করার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেননি। তিনি বলেছেন, তোমরা জেনার কাছে যেও না। একটি জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড বা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ অথবা হিংস্র বাঘের থাবার মধ্যে পড়ার ব্যাপারে কাউকে সতর্ক করতে হয় না। দুনিয়ার রীতি অনুযায়ী সবাইকে সতর্ক করে বলা হয়, ওগুলোর ধারেকাছেও যেও না, অর্থাৎ ওগুলো থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকো। কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র, হিংস্র কুকুর কিংবা ছোঁয়াচে রোগ-বালাইয়ের কেন্দ্রে সর্বদা সতর্কতামূলক যে বাক্যটি লেখা থাকে, তা হলো ‘বিপজ্জনক! নিরাপদ দূরত্বে থাকুন’।
দুনিয়ার যেসব বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত ইত্যাদি সম্পর্কে মানুষের মন-মস্তিষ্ক যতটা কল্পনা করতে পারে তার চেয়ে শত শত গুণ ক্ষতিকর হলো ব্যভিচার বা জেনা, যার ভয়াবহতা বোঝানোর জন্য আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা জেনার কাছেও যেও না।’

আমরা প্রথমে জেনার কাছে যাওয়ার হালহকিকত, ফন্দিফিকির এবং রকম সকম বর্ণনা করব। তারপর সেসব কাণ্ডকারখানা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কিরূপ বাজে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে সেগুলো বর্ণনা করার চেষ্টা করব। আধুনিক বিজ্ঞানের সূত্র মোতাবেক, জেনা বা যৌনাকাক্সক্ষা প্রথমে সৃষ্টি হয় মানুষের মনে যাকে ইসলামিক পরিভাষায় বলা হয় ‘নফস’। পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের যেকোনো একটি দ্বারা মানুষের মনে এই আকাক্সক্ষা জাগে। কোনো দৃশ্য, কোনো ঘ্রাণ, স্পর্শ, শব্দ বা পরিবেশের কবলে পড়ে মানুষের মনে জেনার জন্য একটি স্বতন্ত্র জায়গা তৈরি হয়ে যায়। পরে প্রাকৃতিক নিয়মে এমন আকাক্সক্ষা মস্তিষ্কে পৌঁছামাত্র সেখানকার নির্দিষ্ট চিন্তার কোষগুলো সচল হয়ে ওঠে। এরপর মস্তিষ্কে তৈরি হয় বিশেষ ধরনের এক হরমোন, যা মানুষকে প্রথমত কামাতুর করে তোলে এবং দ্বিতীয়ত এই হরমোন মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকেই শুরু হয় বিপত্তির পর বিপত্তি।

মানুষের যৌনাকাক্সক্ষার বিশেষ হরমোন যখন অঙ্গপ্রতঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে তখন মানুষ আর স্বাভাবিক থাকে না। সে অকারণে হাসাহাসি করে। কখনো বা রেগে যায়। বিনা কারণে হৈ হুল্লোড়, রঙ্গতামাশা, আনন্দ ফুর্তিসহ বালখিল্যময় কর্মকাণ্ড শুরু করে দেয়। তার বুদ্ধিনাশ ঘটে এবং ব্যক্তিত্বে লুকোচুরি করার প্রবৃত্তি ফুটে ওঠে। সে দাম্ভিকতা, মিথ্যাচার, ছলচাতুরী শুরু করে দেয়। কখনো কখনো সে বিষণ্ন হয়ে পড়ে এবং অনিদ্রা, খাদ্যে অরুচি ও কোষ্ঠকাঠিন্যের কবলে পড়ে নিজের স্বাস্থ্যহানি ঘটায়। সবার কাছ থেকে নিজের কুচিন্তা গোপন করার চেষ্টায় সে অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানা শুরু করে দেয়।

কোনো নারী বা পুরুষ যখন ব্যভিচারের ফন্দিফিকির শুরু করে তখন তার আমল ও আখলাকে বিপর্যয় শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয়পর্যায়ে। কেবল এটা করার চেষ্টা তদ্বিরের কারণে তার কাছে আল্লাহ প্রদত্ত সব নিয়ামত তুচ্ছাতিতুচ্ছ হয়ে পড়ে। স্ত্রী, পুত্র-কন্যা বা স্বামী-পুত্র, কন্যা, পরিবার-পরিজন, ব্যবসাবাণিজ্য, ধর্মকর্ম ইত্যাদি সব কিছুর মধ্যে এই অপকর্মের হরমোন সংক্রমিত হয়ে পড়ে। খানাপিনা, আনন্দ-বিহার, নিদ্রা-জাগরণ এবং অবসরে সে কেবল এ লক্ষ্যে ফন্দিফিকিরকে প্রাধান্য দিতে থাকে। তার জীবনের চলমান সব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, সহায়-সম্পদ, পদ-পদবি, ক্ষমতা-বৈভব ইত্যাদি সব কিছুকে জলাঞ্জলি দেয়ার জন্য সে একপায়ে খাড়া হয়ে থাকে।

তৃতীয়পর্যায়ে, মানুষ যখন জেনার সুযোগ পেয়ে যায় তখন নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা আর লোভ তার অলঙ্কারে পরিণত হয়ে যায়। তার ভেতর বিকৃত রুচির উল্লম্ফন যেমন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তেমনি একটি অজানা ভয় তার ব্যক্তিত্বকে নিঃশেষ করে দেয়। জেনার মতো পাপাচারে লিপ্ত নরণারী তাদের কুকর্মগুলো করার সময় বারবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে নিশ্চিত হতে চায়, তাদের কেউ দেখেনি। তাদের কান সর্বদা খাড়া থাকে, যাতে কোনো অনাহুত আগন্তুকের উপস্থিতির শব্দ আগেভাগে টের পেতে পারে। একজন পাকা চোর যেভাবে বহুমুখী সতর্কতা নিয়ে চৌর্যবৃত্তি চালিয়ে যায়, তেমনি লম্পট নারী-পুরুষও যথাসাধ্য চেষ্টা-তদ্বির করে নিজেদের পাপাচারকে লোকচক্ষুর আড়াল করে ইন্দ্রিয়সুখ লাভের জন্য। তা তাদের মন-মানসিকতা, ব্যক্তিত্ব ও রুচিতে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

এদের যৌনাকাক্সক্ষার প্রথম দুই পর্যায় অর্থাৎ মন ও মস্তিষ্কে কামভাব ধারণ এবং দ্বিতীয়পর্যায় অর্থাৎ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে যৌনাকাক্সক্ষার বিশেষ হরমোন ছড়িয়ে পড়ার পর তার অবস্থা সম্পর্কে দুটো বাস্তব উদাহরণ দিলে বিষয়টি বুঝতে অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।

মনে করুন, একজন নারী বা পুরুষের মোবাইলে তার বিপরীত জেন্ডারের কাছ থেকে নিয়মিত ফোন বা এসএমএস আসছে। অথবা তারা পার্ক, সিনেমা, মার্কেট, ডিসকোসহ অবাধ মেলামেশার স্থানগুলোতে নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশা দেখল এবং নিজেদের জন্য মনে মনে একজন সঙ্গী ঠিক করে নিলো। এর পর থেকেই সেই নারী বা পুরুষের পাপাচার শুরু হয়ে যাবে। সে দিনরাত চিন্তা করবে এবং প্রমোদের কথা ভাবতে গিয়ে অকারণে শরীর ও মনে উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। দ্বিতীয় ধাপে সে যখন উদ্দিষ্ট মানব বা মানবীকে একান্তে পাওয়ার জন্য চেষ্টা-তদ্বির শুরু করবে তখন পাপাচার ও সর্বনাশের দ্বিতীয় অধ্যায় রচিত হয়ে যাবে। যখন তারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে পড়বে তখন শুরু হবে বিপর্যয়ের তৃতীয় ধাপ। আল্লাহ রহমত করলে তারা তওবা করে ফিরে আসতে পারবে। অন্যথায় জেনা বা ব্যভিচার করতে করতে তারা এমন একপর্যায়ে পৌঁছে যাবে, যখন তাদের মনে হবে এটা কোনো পাপই নয়।
জেনার দু’টি প্রধান কুফল রয়েছে। প্রথমটি দুনিয়াসংক্রান্ত। জেনাকারের পাপ তার শরীর, মন এবং পরিবারকে গ্রাস করে ফেলে। তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায়। চেহারা ও আচরণে শয়তানের চিহ্ন ও অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে। পদে পদে তার পারিপার্শ্বিক সমাজ, সংসার, প্রতিবেশ ও পরিবেশ দ্বারা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হতে থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় যে লোকটি তার পা স্পর্শ করার সাহস পেত না, সেই লোকটি হয়তো সুযোগ পেয়ে তাকে প্রকাশ্যে গালাগাল শুরু করে দিলো অথবা লাঞ্ছিত করল। স্ত্রী বা স্বামী এবং সন্তানসন্ততি যদি তার অপরাধ জানা সত্ত্বেও নীরব থাকে তবে তারাও পাপের অংশীদার হিসেবে নানামুখী বিপর্যয়ের মধ্যে আপতিত হয়। শারীরিক ও মানসিক রোগবালাই দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি জেনাকার তার স্বাভাবিক আনন্দ এবং সুখানুভূতি থেকেও বঞ্চিত হয়। তার আহার, নিদ্রা ও বিশ্রামে অরুচি ধরে যায়। সে ধৈর্য হারিয়ে ফেলে এবং তার স্মরণশক্তি মারাত্মকভাবে লোপ পেতে থাকে।

এদের আখিরাতের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে বহু সহিহ হাদিস রয়েছে। হাদিসে বর্ণিত অনেক শাস্তির মধ্যে দু’টি শাস্তি সর্বজনস্বীকৃত বলে শত শত বছর ধরে প্রচারিত হয়ে আসছে। প্রথমটি হলো- কিয়ামতের ময়দানে ওদের লজ্জাস্থান থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধযুক্ত রক্তসমেত পুঁজ পড়তে থাকবে। এমন অপরাধীর সংখ্যা এবং পুঁজরক্তের পরিমাণ এত বেশি হবে যে, সেখানে রীতিমতো পুঁজরক্তের একটি নদী প্রবাহিত হয়ে যাবে। ওরা যখন পিপাসায় তৃষ্ণার্থ হয়ে পানির জন্য আকুতি জানাবে, তখন আজাবের ফেরেশতারা তাদেরকে সেই পুঁজরক্ত খেতে বাধ্য করবে। দ্বিতীয় শাস্তিটি হলো- কিয়ামতের দিন জেনাকারের কাছে তার পাপের সঙ্গী বা সঙ্গিনীদের একটি করে জীবন্ত আগুনের মূর্তি উপহার প্রদান করা হবে। এরপর মূর্তিগুলোকে হুকুম করা হবে তোমরা তোমাদের পাপের সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে আলিঙ্গন করো, যেমনটি তোমরা করতে দুনিয়ায়।
দুনিয়াতে জেনার ঘটনা প্রকাশ হয়ে গেলে বা কেউ স্বেচ্ছায় প্রকাশ করে দিলে অথবা চারজন লোক ঘটনাটি চাক্ষুষ দেখে ফেললে শরিয়তের বিধান মোতাবেক ফৌজদারি দণ্ডাদেশ কার্যকর করা ফরজ। অবিবাহিত নারী-পুরুষের জন্য জেনার শাস্তি ১০০টি দোররা বা বেত্রাঘাত। অন্য দিকে বিবাহিত নর-নারীর জন্য পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা। জেনার ঘটনা গোপন থাকলে তওবার দরজা খোলা থাকে। আল্লাহ কোনো জেনাকারীর তওবা তখনই কবুল করেন, যখন সে প্রতিজ্ঞা করে, সে আর কোনো দিন জেনা করবে না এবং শেষ পর্যন্ত নিজের প্রতিজ্ঞার প্রতি অবিচল থাকে।

এখন প্রশ্ন হলো, এই গর্হিত কাজ থেকে বেঁচে থাকার সর্বোত্তম উপায়গুলো কী? সর্বকালের সব মহাজ্ঞানীর মতে জেনা থেকে বাঁচার প্রথম যোগ্যতা হলো তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি। কোনো মানুষ যদি আল্লাহকে বিশ্বাস না করে অথবা বিশ্বাস করে কিন্তু ভয় করে না, তার জন্য সব অপরাধ করাই সহজ হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, মানুষকে জেনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে এবং যথাসাধ্য চেষ্টা-তদ্বির করার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, ব্যভিচারে প্রলোভন মানবশরীর ও মনে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে।
একমাত্র নবী-রাসূল সা: আ: এবং আল্লাহর বিশেষ হেদায়াতপ্রাপ্ত বান্দা ব্যতিরেকে কেউই প্রলোভনের প্রতিক্রিয়ামুক্ত শরীর মনের অধিকারী হতে পারেন না। মানবজনমের সার্থকতা তখনি দৃশ্যমান হয়, যখন তার নফস জেনার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়াই-সংগ্রাম করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। এই পাপ থেকে বাঁচার জন্য মহান আল্লাহর কাছে বান্দার আকুতি কেমন হতে পারে, তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ আল্লাহ বর্ণনা করেছেন সূরা ইউসুফের ৩৩ নম্বর আয়াতে। এখানে হজরত ইউসুফ আ: আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বললেন, ‘হে আমার রব! নারীদের আহ্বানের চেয়ে কারাগারই আমার কাছে প্রিয়। আপনি যদি তাদের চক্রান্ত থেকে আমায় রক্ষা না করেন, তবে আমি তাদের দিকে ঝুঁকে পড়ব এবং জাহিল সাব্যস্ত হয়ে যাবো।’
জেনা থেকে বাঁচার তৃতীয় এবং মোক্ষম উপায় হলো সূরা বনি ইসরাইলের ৩২ নম্বর আয়াতটির মর্যাদা দেয়া। অর্থাৎ জেনার নিকটবর্তী না হওয়া। ইসলামি শরিয়ত এই অপকর্ম থেকে বাঁচার জন্য মুমিন নর-নারীর পোশাক-আশাক, চলাফেরা, কথাবার্তা এবং সম্পর্ক স্থাপনের নীতিমালা তৈরি করে দিয়েছে। মুসলমানদের বিয়েশাদি সহজ করে দিয়েছে এবং বিবাহিত জীবন যাতে সুখের হয় সে জন্য পাত্র-পাত্রী পছন্দের নীতিমালা রয়েছে। কোনো কারণে দাম্পত্য কলহ দেখা দিলে ফেতনা সৃষ্টি না করে পৃথক হয়ে যাওয়ার জন্য তালাককে খুবই সহজ করা হয়েছে। তালাকপ্রাপ্ত নর-নারীর ভিন্ন পাত্রে পুনঃবিবাহ সহজ করার পাশাপাশি শর্তসাপেক্ষে পুরুষদের একাধিক বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ইসলামি শরিয়তের এতসব নীতিনৈতিকতা ও বিধিবিধান শুধু মানুষকে জঘন্যতম এবং ভয়াবহ অপরাধ থেকে বাঁচানোর জন্যই প্রণীত হয়েছে।

No comments