স্বাধীনতার পর থেকে ঠাকুরগাঁও-১ আসন আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের দখলে থাকলেও ২০০১ সালের নির্বাচনে আসনটি হাত ছাড়া হয়। বর্তমান বিএনপির মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্রসেনকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। এর পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। বিএনপির প্রার্থী মির্জা ফখরুল ইসলামকে হারিয়ে আবারও এমপি নির্বাচিত হন রমেশ চন্দ্র। মন্ত্রিত্ব পান পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। পরে নির্বাচনকালীন খাদ্য মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব পান তিনি। এর পর গেল নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও আবার এমপি নির্বাচিত হন রমেশ চন্দ্র সেন। পরে দলের শীর্ষপর্যায়ে আস্থা অর্জন করায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও মাঠপর্যায়ে শুধু অরুনাংশু দত্তকে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাড. মকবুল হোসেন বাবু, কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক রাজিউর রেজা খোকন চৌধুরী, যুব মহিলা লীগ সভাপতি তাহমিনা আক্তার মোল্লা।
তবে এমপি রমেশ চন্দ্র সেন ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও জনসংযোগ ও কর্মিসভা করতে দেখা যাচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মির্জা ফখরুল ইসলামের বিকল্প কোনো প্রার্থী নেই বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। অপর দিকে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান এমপি রমেশ চন্দ্রসেন ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এখন তার অনেক বয়স হয়েছে। নতুন কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়ে আবারো নৌকা মার্কাকে জয়ী করার সময় এসেছে। নেতারা বলেন, নতুন নেতৃত্ব নিয়ে ঠাকুরগাঁও-১ আসনকে নৌকার ঘাঁটি তৈরি করতে আমরা প্রস্তুত। তাছাড়া নেত্রী যাকেই টিকিট দিবেন তার পক্ষেই আমরা কাজ করবো। এখানে আওয়ামী লীগের কিছু রিজার্ভ ভোট রয়েছে। তবে প্রার্থী নির্বাচনে ভুল সিদ্ধান্ত নিলে আসনটি হাতছাড়া হওয়ার আশংকা করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে মরিয়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি দলের কাজ কর্ম ছাড়াও প্রায় দুমাস পর পর নিজ নির্বাচনী এলাকায় এসে চষে বেড়াচ্ছেন। সুখে দুখে পাড়া মহল্লা ও গ্রামাঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। খোঁজ খবর নিচ্ছেন এলাকার মানুষের।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রাত্যাশী অরুনাংশু দত্ত টিটো বলেন, দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দল মনে করলে নির্বাচনে অংশ নেব এবং বিএনপির প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে নৌকার ধারা অব্যাহত রাখব।
বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন জানান, আমি ঠাকুরগাঁওয়ে চারদলীয় সরকারের চেয়ে তিনগুণ বেশি উন্নয়ন করেছি। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নেতাকর্মীদের মন জয় করা সব সময় সম্ভব হয়ে উঠে না। নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন জনগণই আমাকে নির্বাচিত করবে। এ ছাড়া নতুন কাউকে মনোনয়ন দিলে নেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছে। সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি আসনসহ সংখ্যাগষ্ঠি আসন পাবে বিএনপি। আওয়ামী লীগের অত্যাচার, জেল জুলুম, গুম, হত্যা আর জনগণ সহ্য করছে না। অপেক্ষায় আছে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মোশারুর ইসলাম সরকার জানান, গত ৩০ বছরও যে উন্নয়ন হয়নি বর্তমান এমপি রমেশ চন্দ্র সেন সেই উন্নয়ন করেছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা রাস্তা ঘাট, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা প্রায় সব পাকা হয়েছে। প্রায় ৫শ কোটি টাকার প্রকল্প ঠাকুরগাঁও চিনিকলের জন্য বরাদ্দ নিয়ে এসছে। দিনাজপুর থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনের রেল লাইন সম্পূর্ণভাবে নতুন করা হয়েছে।
অপরদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) জেলা সভাপতি মনসুর আলী ১৯৮৬, ৮৮, ৯১ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হতে পারেন।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে আওয়ামী লীগ থেকে সদ্য যোগদানকারী জেলা জাপার সহ-সভাপতি সাবেক পৌর চেয়ারম্যান এসএম সোলায়মান আলী সরকার, জেলা সাধারণ সম্পাদক রজাউর রাজি স্বপন চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে।
অপরদিকে ২০১৫ সালে ৫ই জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ইমরান হোসেন দলীয় মনোনয়ন চেয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
দুই ভিআইপির লড়াই
Reviewed by প্রভাত ফেরি
on
September 05, 2017
Rating: 5
No comments