কেমন নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগ
ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন জেলায় জনসভা করে দলের
পক্ষে ভোট চেয়ে আসছেন। এখন প্রায় সব ধরনের দলীয় সভা ও আলোচনায় তিনি
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের নেতাকর্মীদের জোর নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন।
দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যরা কে কতটা জনপ্রিয়, তা প্রমাণ করতে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছেন। কেউ হালচাষ করছেন, কেউ মাটি কাটছেন, কেউ ভিক্ষুককে নিজের দামি পাঞ্জাবি খুলে দান করছেন। আপাতত সবই করা হচ্ছে নেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য, যাতে মনোনয়ন বাগানো যায়। একই সাথে নিজেকে জনদরদি নেতা হিসেবে প্রমাণ করা তাদের লক্ষ্য। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে রাজনৈতিক দলের নেতারা এমন জনদরদি সাজার চেষ্টা করে থাকেন। নির্বাচনের বেশ আগেই এবার তা শুরু হয়ে গেছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখতে ‘আরো এক মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ক্ষমতায় থেকে পালন করার আশা ব্যক্ত করেছেন। অর্থাৎ আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার কর্মকৌশল নিয়ে ক্ষমতাসীন দল এগিয়ে যাচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা যখন দৃশ্যমান প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন, তখন বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত নীরবে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে একধরনের অস্বস্তি কাজ করছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা যাতে এলাকায় দলীয় কর্মকাণ্ড শুরু করতে না পারেন, সেজন্য আবার ধরপাকড় শুরু হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা বিশেষ করে যারা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের আবার বরখাস্ত ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। গাজীপুরের মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নানকে তৃতীয় দফায় অপসারণ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশে তিনি আবার স্বপদে ফিরে এসেছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তাকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। ২০১৩ সালে জুলাই মাসে মেয়র হিসেবে বিপুল ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা আবদুল মান্নান। নির্বাচিত হওয়ার পর যত দিন মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি সময় জেলে কাটাতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন ১৮ মাস আর জেলে কাটিয়েছেন ২২ মাস। তার নামে মামলা দেয়া হয়েছে ২৯টি। এই হলো একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির অবস্থা।
শুধু গাজীপুরের মেয়র এ অবস্থার মুখোমুখি হয়েছেন, এমন নয়। রাজশাহী, সিলেট ও খুলনার মেয়রকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। উচ্চ আদালতের নির্দেশে তারাও মেয়রের দায়িত্বে ফিরে এসেছেন। কিন্তু চাপের মুখে দলীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে বা স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না। বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত হওয়ার কারণে তাদের এভাবে দায়িত্ব পালন থেকে সরিয়ে দেয়ার কৌশল নেয়া হয়। সিটি করপোরেশনের মেয়র ছাড়াও বিরোধী দল সমর্থিত অসংখ্য উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ফলে এসব উপজেলায় স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে বিরোধী দল সমর্থিত এমন কোনো জনপ্রতিনিধি নেই, যার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। চলতি সপ্তাহে গ্রেফতার করা হয়েছে রাজশাহীর বাঘা ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের উপজেলা চেয়ারম্যান এবং রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যানকে। তারা সবাই বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত এবং উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। বিরোধী দল সমর্থিত জনপ্রতিনিধিদের গ্রেফতার করে ক্ষমতাসীন দলের কোনো প্রতিনিধিকে এ পদে বসানো হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের এই কৌশলের লক্ষ্য হচ্ছে, বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থীরা যাতে স্থানীয় পর্যায়ে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে না পারেন।
জাতীয় নির্বাচনের দেড় বছর আগেই যেভাবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে, তাতে সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে এখন থেকেই ব্যাপক শঙ্কা ও নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যখন নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন, তখন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মাঠে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামে ভয়াবহ ভূমিধসের পর সেখানে ত্রাণ কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে তাকে আহত করার ঘটনাও ঘটেছে। এ কথা মানুষ ভুলে যায়নি যে, ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণার সময় বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছিল ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ফলে নিরাপত্তার কারণে বেগম জিয়াকে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো থেকে বিরত থাকতে হয়েছে। এখন নির্বাচনের দেড় বছর আগেই বিরোধী দলের সাধারণ সম্পাদকের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করলে তখন পরিবেশ কেমন হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মাথায় সম্ভবত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের কৌশল ঘুরপাক খাচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াতকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কারণে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কার্যত ভোটের প্রয়োজন হয়নি। ভোট বা গণরায় ছাড়াই সরকার গঠনে ১৫১ জন সংসদ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। আগামী নির্বাচন ২০১৪ সালের মতো একই ছকে করা যে কঠিন হবে, তা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন। বিরোধী দলকে কিভাবে মোকাবেলা করা হবে, তা নিয়ে তাদের মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটছে ধরপাকড় ও হামলা-মামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে। বিএনপি মহাসচিবের ওপর হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে ২০১৯ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহড়া হয়তো সম্পন্ন করা হলো।
এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগেই রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে এসব সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সবগুলোতে বিএনপি প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন। এবার সরকারের ‘জনপ্রিয়তা’ দেখানোর জন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে ক্ষমতাসীন দল। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিবেশের ওপর অনেকখানি নির্ভর করবে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে সরকারের ভূমিকা।
তবে বিরোধী দলকে কোণঠাসা করার নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরো ঘনীভূত করতে পারে। নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে বিরোধী দলের নিজস্ব অবস্থান থাকবে অবশ্যই। এমনকি নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলনও মোকাবেলা করতে হবে। আন্দোলনের তীব্রতা বা মাত্রা যাই হোক না কেন, এটা স্পষ্ট বিএনপি বর্তমান সরকারকে পূর্ণমাত্রায় ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনে যাবে না। নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখা বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হবে, তা আগেই জানানো হয়েছে। এখন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, সাংবিধানিক পন্থায় নির্বাচন হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আয়োজন করবে। এ সময় সরকার রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচিত সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশে তা কেন সম্ভব হচ্ছে না? এর উত্তর সহজ। এখন যেমন আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী দেশে নির্দিষ্ট সময়ে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এমনভাবে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনও সংবিধান অনুযায়ী হয়েছিল। তখন বিএনপি সরকারও বলেছিল, সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হবে। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জামায়াত-জাতীয় পার্টিসহ বিরোধী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছিল। তখনো সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত সরকার ছিল ক্ষমতায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সে নির্বাচন বর্জন করেছিল। এর কারণ আওয়ামী লীগ মনে করেছিল, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার মতো আস্থা বা পরিবেশ ছিল না।
এখন আওয়ামী লীগ আবার সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানাচ্ছে। বিরোধী দল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার কারণে ১৯৯৬ সালের চেয়েও খারাপ ও একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করতে হয়েছে ২০১৪ সালে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর তৎকালীন বিরোধী দলের দাবি অনুযায়ী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে সংযোজন করে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ অবরোধ ও হরতাল চালিয়ে গেছে। অপর দিকে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বিদেশীদের মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব আরেকটি নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর বিএনপি আন্দোলন থেকে সরে গেছে, কিন্তু জাতিকে প্রদত্ত এই প্রতিশ্রুতি রক্ষার প্রয়োজন আওয়ামী লীগ মনে করেনি। ভোটারবিহীন একটি নির্বাচনের মাধ্যমে পাঁচ বছর মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে আড়াই বছরের বেশি সময় এ সরকার পার করেছে। এখন মেয়াদ শেষে পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগ সরকারকে পূর্ণমাত্রায় ক্ষমতায় রেখে কিভাবে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হবে? বিনাভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে ‘বিজয়ী’ হওয়া ২০১৪ সালের নির্বাচনের কথা যদি আমরা বাদও দেই, তবুও এটা অনস্বীকার্য- পরবর্তী সময়ে স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন কমিশন সম্পন্ন করতে পারেনি। ক্ষমতাসীনদের দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী প্রশাসন পরিচালিত হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এই প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে, তা ক্ষমতাসীন দলের ঘোরতর সমর্থকও বিশ্বাস করেন না। ফলে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে হলে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে- তা আগে নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমান সরকার পুরোমাত্রায় ক্ষমতায় থেকে এই পরিবেশ সৃষ্টি হবে, এমন আশা করা যায় না। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো স্বাভাবিকভাবেই নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন দলের ভূমিকা আগে নির্ধারণের জোর দাবি জানাবে। এরপর আসবে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন ভূমিকা পালনের প্রশ্ন। এ কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে সহায়ক সরকারের ফর্মুলা দেয়ার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু এসব দাবি খুব সহজে পূরণ হবে, এমন মনে করার কারণ নেই। ফলে বিএনপিকে যেমন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে, তেমনি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের জন্য আন্দোলন করতে হবে। বিএনপির জন্য নিঃসন্দেহে কৌশল দু’টি বাস্তবায়ন করা হবে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের বিষয়। কিন্তু বিএনপির নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেয়ার পর থেকে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে যে উদ্বেগ ও অস্থিরতা শুরু হয়েছে এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে বিরোধ যেভাবে বাড়ছে তাতে মনে হয়; আগামী দিনগুলোতে সরকার পরিচালনা আরো কঠিন হয়ে পড়তে পারে। সরকারের জনপ্রিয়তা কোন পর্যায়ে আছে তা ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে, যা কোনোভাবেই সরকারের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়।
ক্ষমতাসীন দলের জন্য ‘সুবিধা’ হতো ২০১৪ সালের মতো বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলো যদি ভোট বর্জন করত এবং সংবিধানের দোহাই দিয়ে আরেকটি যেনতেন নির্বাচন যদি করা যেত। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে এমনটি ঘটার সম্ভাবনা নেই। ফলে আগামী দিনে বিরোধী দলের চাপের মধ্যে থেকেই ক্ষমতাসীন দলকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ কারণে সরকারের শেষ সময়ে এসে বিরোধী দলকে কোণঠাসা করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই চাপ মোকাবেলা করে আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি কতটা বিএনপি নিতে পারে, তা এখন দেখার বিষয়।
দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যরা কে কতটা জনপ্রিয়, তা প্রমাণ করতে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছেন। কেউ হালচাষ করছেন, কেউ মাটি কাটছেন, কেউ ভিক্ষুককে নিজের দামি পাঞ্জাবি খুলে দান করছেন। আপাতত সবই করা হচ্ছে নেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য, যাতে মনোনয়ন বাগানো যায়। একই সাথে নিজেকে জনদরদি নেতা হিসেবে প্রমাণ করা তাদের লক্ষ্য। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে রাজনৈতিক দলের নেতারা এমন জনদরদি সাজার চেষ্টা করে থাকেন। নির্বাচনের বেশ আগেই এবার তা শুরু হয়ে গেছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখতে ‘আরো এক মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ক্ষমতায় থেকে পালন করার আশা ব্যক্ত করেছেন। অর্থাৎ আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার কর্মকৌশল নিয়ে ক্ষমতাসীন দল এগিয়ে যাচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা যখন দৃশ্যমান প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন, তখন বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত নীরবে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে একধরনের অস্বস্তি কাজ করছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা যাতে এলাকায় দলীয় কর্মকাণ্ড শুরু করতে না পারেন, সেজন্য আবার ধরপাকড় শুরু হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা বিশেষ করে যারা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের আবার বরখাস্ত ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। গাজীপুরের মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নানকে তৃতীয় দফায় অপসারণ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশে তিনি আবার স্বপদে ফিরে এসেছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তাকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। ২০১৩ সালে জুলাই মাসে মেয়র হিসেবে বিপুল ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা আবদুল মান্নান। নির্বাচিত হওয়ার পর যত দিন মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি সময় জেলে কাটাতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন ১৮ মাস আর জেলে কাটিয়েছেন ২২ মাস। তার নামে মামলা দেয়া হয়েছে ২৯টি। এই হলো একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির অবস্থা।
শুধু গাজীপুরের মেয়র এ অবস্থার মুখোমুখি হয়েছেন, এমন নয়। রাজশাহী, সিলেট ও খুলনার মেয়রকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। উচ্চ আদালতের নির্দেশে তারাও মেয়রের দায়িত্বে ফিরে এসেছেন। কিন্তু চাপের মুখে দলীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে বা স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না। বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত হওয়ার কারণে তাদের এভাবে দায়িত্ব পালন থেকে সরিয়ে দেয়ার কৌশল নেয়া হয়। সিটি করপোরেশনের মেয়র ছাড়াও বিরোধী দল সমর্থিত অসংখ্য উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ফলে এসব উপজেলায় স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে বিরোধী দল সমর্থিত এমন কোনো জনপ্রতিনিধি নেই, যার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। চলতি সপ্তাহে গ্রেফতার করা হয়েছে রাজশাহীর বাঘা ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের উপজেলা চেয়ারম্যান এবং রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যানকে। তারা সবাই বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত এবং উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। বিরোধী দল সমর্থিত জনপ্রতিনিধিদের গ্রেফতার করে ক্ষমতাসীন দলের কোনো প্রতিনিধিকে এ পদে বসানো হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের এই কৌশলের লক্ষ্য হচ্ছে, বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থীরা যাতে স্থানীয় পর্যায়ে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে না পারেন।
জাতীয় নির্বাচনের দেড় বছর আগেই যেভাবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে, তাতে সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে এখন থেকেই ব্যাপক শঙ্কা ও নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যখন নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন, তখন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মাঠে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামে ভয়াবহ ভূমিধসের পর সেখানে ত্রাণ কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে তাকে আহত করার ঘটনাও ঘটেছে। এ কথা মানুষ ভুলে যায়নি যে, ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণার সময় বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছিল ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ফলে নিরাপত্তার কারণে বেগম জিয়াকে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো থেকে বিরত থাকতে হয়েছে। এখন নির্বাচনের দেড় বছর আগেই বিরোধী দলের সাধারণ সম্পাদকের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করলে তখন পরিবেশ কেমন হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মাথায় সম্ভবত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের কৌশল ঘুরপাক খাচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াতকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কারণে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কার্যত ভোটের প্রয়োজন হয়নি। ভোট বা গণরায় ছাড়াই সরকার গঠনে ১৫১ জন সংসদ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। আগামী নির্বাচন ২০১৪ সালের মতো একই ছকে করা যে কঠিন হবে, তা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন। বিরোধী দলকে কিভাবে মোকাবেলা করা হবে, তা নিয়ে তাদের মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটছে ধরপাকড় ও হামলা-মামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে। বিএনপি মহাসচিবের ওপর হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে ২০১৯ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহড়া হয়তো সম্পন্ন করা হলো।
এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগেই রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে এসব সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সবগুলোতে বিএনপি প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন। এবার সরকারের ‘জনপ্রিয়তা’ দেখানোর জন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে ক্ষমতাসীন দল। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিবেশের ওপর অনেকখানি নির্ভর করবে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে সরকারের ভূমিকা।
তবে বিরোধী দলকে কোণঠাসা করার নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরো ঘনীভূত করতে পারে। নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে বিরোধী দলের নিজস্ব অবস্থান থাকবে অবশ্যই। এমনকি নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলনও মোকাবেলা করতে হবে। আন্দোলনের তীব্রতা বা মাত্রা যাই হোক না কেন, এটা স্পষ্ট বিএনপি বর্তমান সরকারকে পূর্ণমাত্রায় ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনে যাবে না। নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখা বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হবে, তা আগেই জানানো হয়েছে। এখন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, সাংবিধানিক পন্থায় নির্বাচন হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আয়োজন করবে। এ সময় সরকার রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচিত সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশে তা কেন সম্ভব হচ্ছে না? এর উত্তর সহজ। এখন যেমন আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী দেশে নির্দিষ্ট সময়ে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এমনভাবে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনও সংবিধান অনুযায়ী হয়েছিল। তখন বিএনপি সরকারও বলেছিল, সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হবে। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জামায়াত-জাতীয় পার্টিসহ বিরোধী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছিল। তখনো সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত সরকার ছিল ক্ষমতায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সে নির্বাচন বর্জন করেছিল। এর কারণ আওয়ামী লীগ মনে করেছিল, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার মতো আস্থা বা পরিবেশ ছিল না।
এখন আওয়ামী লীগ আবার সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানাচ্ছে। বিরোধী দল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার কারণে ১৯৯৬ সালের চেয়েও খারাপ ও একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করতে হয়েছে ২০১৪ সালে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর তৎকালীন বিরোধী দলের দাবি অনুযায়ী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে সংযোজন করে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ অবরোধ ও হরতাল চালিয়ে গেছে। অপর দিকে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বিদেশীদের মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব আরেকটি নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর বিএনপি আন্দোলন থেকে সরে গেছে, কিন্তু জাতিকে প্রদত্ত এই প্রতিশ্রুতি রক্ষার প্রয়োজন আওয়ামী লীগ মনে করেনি। ভোটারবিহীন একটি নির্বাচনের মাধ্যমে পাঁচ বছর মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে আড়াই বছরের বেশি সময় এ সরকার পার করেছে। এখন মেয়াদ শেষে পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগ সরকারকে পূর্ণমাত্রায় ক্ষমতায় রেখে কিভাবে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হবে? বিনাভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে ‘বিজয়ী’ হওয়া ২০১৪ সালের নির্বাচনের কথা যদি আমরা বাদও দেই, তবুও এটা অনস্বীকার্য- পরবর্তী সময়ে স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন কমিশন সম্পন্ন করতে পারেনি। ক্ষমতাসীনদের দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী প্রশাসন পরিচালিত হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এই প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে, তা ক্ষমতাসীন দলের ঘোরতর সমর্থকও বিশ্বাস করেন না। ফলে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে হলে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে- তা আগে নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমান সরকার পুরোমাত্রায় ক্ষমতায় থেকে এই পরিবেশ সৃষ্টি হবে, এমন আশা করা যায় না। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো স্বাভাবিকভাবেই নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন দলের ভূমিকা আগে নির্ধারণের জোর দাবি জানাবে। এরপর আসবে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন ভূমিকা পালনের প্রশ্ন। এ কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে সহায়ক সরকারের ফর্মুলা দেয়ার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু এসব দাবি খুব সহজে পূরণ হবে, এমন মনে করার কারণ নেই। ফলে বিএনপিকে যেমন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে, তেমনি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের জন্য আন্দোলন করতে হবে। বিএনপির জন্য নিঃসন্দেহে কৌশল দু’টি বাস্তবায়ন করা হবে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের বিষয়। কিন্তু বিএনপির নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেয়ার পর থেকে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে যে উদ্বেগ ও অস্থিরতা শুরু হয়েছে এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে বিরোধ যেভাবে বাড়ছে তাতে মনে হয়; আগামী দিনগুলোতে সরকার পরিচালনা আরো কঠিন হয়ে পড়তে পারে। সরকারের জনপ্রিয়তা কোন পর্যায়ে আছে তা ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে, যা কোনোভাবেই সরকারের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়।
ক্ষমতাসীন দলের জন্য ‘সুবিধা’ হতো ২০১৪ সালের মতো বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলো যদি ভোট বর্জন করত এবং সংবিধানের দোহাই দিয়ে আরেকটি যেনতেন নির্বাচন যদি করা যেত। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে এমনটি ঘটার সম্ভাবনা নেই। ফলে আগামী দিনে বিরোধী দলের চাপের মধ্যে থেকেই ক্ষমতাসীন দলকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ কারণে সরকারের শেষ সময়ে এসে বিরোধী দলকে কোণঠাসা করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই চাপ মোকাবেলা করে আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি কতটা বিএনপি নিতে পারে, তা এখন দেখার বিষয়।
No comments