Breaking News

মিথিলার নতুন পথচলা



বিয়ের ১১ বছর পর বিচ্ছেদের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মিথিলা-তাহসান দম্পতি। বিষয়টি ভক্তরা মেনে নিতে পারেননি। তাই বলে তো তাহসান বা মিথিলা কারো জীবন থেমে নেই। দুজনই কাজ করছেন। তাহসান যেমন ব্যস্ত আছেন তার ক্যারিয়ার নিয়ে, তেমনি নতুন করে পথ চলতে শুরু করেছেন মিথিলাও। অভিনেত্রী-মডেল-কণ্ঠশিল্পী রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট থেকে আরলি চাইল্ডহুড বিষয়ে পড়া মিথিলার অর্জনের ঝুলিতে রয়েছে চ্যান্সেলর’স গোল্ড মেডেল। গত বছরের শেষ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম সমাবর্তনে মেয়ে আইরাকে সঙ্গে নিয়েই শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের হাত থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন দর্শকপ্রিয় এই অভিনেত্রী। বর্তমানে পড়াশোনা, সংসার, সন্তান, ক্যারিয়ার সব একসঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন মিথিলা। বিচ্ছেদ-ঝড়ের পর থমথমে জীবনকে স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যেই রাখছেন মিথিলা। আগের মতোই বিশেষ দিবসের নাটক বা টেলিছবিতে করছেন অভিনয়ও। সেই সঙ্গে একমাত্র মেয়ে আইরাকে সব সময় কাছে রাখছেন। সম্প্রতি বরিশালে গিয়েছিলেন ব্র্যাকের পক্ষ থেকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধবিষয়ক একটি ক্যাম্পেইনে। মিথিলা জানান, শিগগিরই ‘শিশু বিকাশ’ বিষয়ক একটি অনুষ্ঠান শুরু করতে যাচ্ছেন। সময় হলেই এর বিস্তারিত সবাইকে জানাবেন তিনি। নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতা সম্পর্কে মিথিলার ভাবনা, ‘বিয়ের পর মেয়েদের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে উঠতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে দুজনের ভেতরেই এমন চিন্তা থাকা জরুরি যে, একে অপরের পরিবারকে ভালোবাসবে এবং সম্মান করবে। দুজনের ভেতরে এই চিন্তা না এলে তো আর হবে না। সবাই চিন্তা করে যে, মেয়েটা যেহেতু ছেলের বাড়িতে গিয়ে উঠবে সে জন্য সেটাকে নিজের বাড়ি বলেই মনে করবে। ছেলের বাবা-মাকে মেয়েটা খুবই সম্মান করবে, কিন্তু ছেলেটার বেলায় মেয়ের বাবা-মাকে সেই সম্মান না করলেও চলবে। এমনটা হলে তো বৈষম্য থাকবেই।’ বিজ্ঞাপন দিয়ে মিডিয়া জগতে যাত্রা শুরু করে পরবর্তী সময়ে অভিনয়ে আসা মিথিলা বলেন, ‘গানের প্রতি আমার আকর্ষণ রয়েছে। গানটা আমি ঠিকমতো করতে পারিনি। যার কারণে আমার একক কোনো অ্যালবাম নেই। আমার যখন বিয়ে হয়, তখন বয়স ছিল ২৩ বছর। বিয়ের পর অনার্স শেষ করে মাস্টার্স করেছি। চাকরিও করেছি। এগুলোর সঙ্গে সঙ্গে মিডিয়ায় কাজ করার জন্যও সময় বের করেছি। এখন আবার গানে মনোযোগ দিতে চাই। হয়তো একক অ্যালবামও করতে পারি।’ ঈদে প্রচারিত বেশ কিছু নাটক-টেলিছবিতে দেখা গেছে মিথিলাকে। এর মধ্যে ‘ব্যাচ টুয়েন্টি সেভেন : দ্য লাস্ট পেজ’ ও ‘ডিভোর্স’ ছিল আলোচনায়। গানের মডেল হিসেবেও দেখা গেছে তাকে। তবে আপাতত আর গানের মডেল হচ্ছেন না তিনি। চাকরি আর অভিনয় নিয়েই থাকতে চাচ্ছেন। মিথিলা বলেন, ‘নাটক বা টেলিছবিতে কখনই খুব বেশি অভিনয় করিনি। চাকরির পর যতটুকু সময় পেয়েছি, ততটুকুই করেছি। এখনো তার ব্যতিক্রম হবে না। চাকরি ও সন্তানকে সময় দেওয়ার পর যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে, তবেই নাটক বা টেলিছবিতে আমাকে দেখা যাবে। কারণ এটা আমার পেশা নয়। শখের বসে এসেছিলাম অভিনয়ে, এখনো এটা আমার শখই।’ যদিও তাহসানের সঙ্গে মিথিলার বিচ্ছেদ হয়েছে, কিন্তু তিনি এখনো আগের মতোই সম্মান করেন যে কোনো সম্পর্ককে। তিনি বলেন, ‘নিজেদের সম্পর্ক সুন্দর রাখতে যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো বন্ধুত্ব। এর মানে এই নয় যে, সেই সময় ভালোবাসা আর থাকে না। কিন্তু তা একটা অন্য লেভেলে চলে যায়। এই লেভেল পরিবর্তনের কারণে ভালোবাসাটা আপনি আর শুরুতে যেমন অনুভব করতেন, তেমন অনুভব করতে পারবেন না। তাকে দেখলেই শিহরণ জাগবে না। তবে একটা ভালো লাগা তো কাজ করেই, যার অনুভূতিটা হয়তো একটু ভিন্ন রকমের হয়।’ মিথিলা মনে করেন, ‘একটা সম্পর্কের শুরুতে পরস্পরের প্রতি প্রেম আর আকর্ষণ থাকে। দীর্ঘ সময়ের সম্পর্কে সেই আকর্ষণটা আর থাকে না। তার সঙ্গে আমার দেখা করতেই হবে, কথা বলতেই হবেÑ এমন অনুভূতিগুলো কমে যায়। এক ছাদের নিচে দিনের পর দিন থাকতে থাকতে দুজন দুজনের অস্থিমজ্জা সবকিছুই জেনে যায়। তখন আকর্ষণ কমে যাওয়াটা স্বাভাবিক।’ ২০০৬ সালের ৩ আগস্ট ভালোবেসে সংসার শুরু করেছিলেন তাহসান ও মিথিলা। অভিনয় ও গানের এই জুটি সবার কাছে ছিলেন তারকা দম্পতি হিসেবে জনপ্রিয়। ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল জন্ম নেয় তাদের একমাত্র সন্তান আইরা। বছর দুয়েক ধরে এই শিল্পী দম্পতির সংসারজীবন ভালো যাচ্ছিল নাÑ এমন গুঞ্জন ছিল। চলতি বছরের ২০ জুলাই দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দেন। মিথিলা বলেন, ‘আমাদের বিবাহিত জীবন দীর্ঘ ১১ বছরের। ১৪ বছর ধরে একজন আরেকজনকে চিনি। বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত আসলে হঠাৎ করে নিইনি। আমাদের বোঝাপড়ায় অনেক দিন ধরে সমস্যা হচ্ছিল। ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব প্রকট ছিল। জীবন নিয়ে শুরুতে এক ধরনের পরিকল্পনা ছিল, সময়ের সঙ্গে তা বদলে গেছে। তার পরও এত বছরের সম্পর্ক তো আর সহজে কেউ ভেঙে ফেলতে চায় না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কারণ আমাদের একটি সন্তান আছে। দুই বছর ধরে আলাদা থাকলেও সন্তান আর সংসারের কথা ভেবে আমরা একসঙ্গে কাজ করে ভালো থাকার চেষ্টা করেছি। শেষ পর্যন্ত আমরা বুঝতে পেরেছি, সম্পর্কটা আর টিকবে না।’ সন্তান আইরা নিয়ে আপনার কী ভাবনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে মিথিলা বলেন, ‘আইরা আমার কাছে ছিল। বলতে গেলে আমি একাই ওকে বড় করেছি। ওর বাবা দেখা করতে আসে। সামনের দিনগুলোয় তারও অবদান থাকবে। আর এই বোঝাপড়াটা আমাদের মধ্যে থাকবে। তা ছাড়া এমন না যে, আমাদের মুখ দেখাদেখি বা কথা বলা বন্ধ। আমাদের সন্তানের জন্য আমরা যোগাযোগ করি। আইরার জন্মদিন আমরা একসঙ্গে পালন করি।’ সবশেষে পাঠক ও ভক্তদের উদ্দেশে মিথিলা বলেন, ‘আমাদের দেশে বিবাহবিচ্ছেদ খুব নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। বিচ্ছেদ কখনো সুখের হয় না। মিডিয়ায় কাজ করলেও আমরা তো মানুষ। আমাদেরও আবেগ-অনুভূতি আছে। আমাদেরও পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সমাজ নিয়ে থাকতে হয়। এখন যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, তা আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্টকর। এ কারণে মানুষের কাছ থেকে আমরা এখন স্বাভাবিক মানবিকতা প্রত্যাশা করছি। তাদের জন্যই তো আমরা মিডিয়ায় কাজ করি।’

No comments