Breaking News

বিপুল সম্পদের কারণে নৃশংসতার শিকার হচ্ছে রোহিঙ্গারা!

বিপুল সম্পদের কারণে নৃশংসতার শিকার হচ্ছে রোহিঙ্গারা!
















                          বিপুল সম্পদের কারণে নৃশংসতার শিকার হচ্ছে রোহিঙ্গারা!
দীর্ঘকাল ধরে চলা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নির্মূল অভিযানে নতুন মাত্রা যোগ করেছে রাখাইন রাজ্যের তেল, গ্যাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ। এর সাথে সামগ্রিকভাবে রয়েছে লুটপাটকেন্দ্রিক বৈশ্বিক আধিপত্যবাদের প্রতিযোগিতা। রাখাইন রাজ্যসহ মিয়ানমারের ভৌগোলিক অবস্থানগত গুরুত্ব এবং সম্পদ সম্ভাবনা ঘিরে চলছে এ পৈশাচিক গণহত্যায় সমর্থনের ধারা।


রোহিঙ্গা গণহত্যার পেছনে অনেক বিশ্লেষক কারণ হিসেবে দাঁড় করাতে চেষ্টা করেছেন রাখাইনের প্রাকৃতিক গ্যাস ও মিয়ানমারকেন্দ্রিক বিনিয়োগ সম্ভাবনা। কিন্তু এটি যে রোহিঙ্গা নির্মূলের প্রকৃত কারণ নয় তার সাক্ষ্য বহন করছে ইতিহাস। কারণ রাখাইনের প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে ২০০৪ সালে। আর রোহিঙ্গা নিধন চলছে ১৭৮৫ সালে বর্মিদের আরাকান দখলের পর থেকে। এরপর ১৯৩৮, ১৯৪২, ১৯৭৮ এবং ১৯৯১-৯২ সালেও-রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও নির্মূল অভিযান পরিচালিত হয় যখন সেখানে তেল গ্যাস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ আবিষ্কৃত হয়নি।
অনুসন্ধানে যেটি বেরিয়ে এসেছে তা হলো মূলত জাতিগত ও ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণেই বারবার বর্মিরা রোহিঙ্গাদের গণহত্যা ও নির্মূল অভিযান চালিয়েছে। তবে এটা ঠিক যে, রাখাইনের প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনৈতিক লুটপাটের সম্ভাবনা দেখা দেয়ার পর তাদের গণহত্যা ও নির্মমতার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। যেহেতু লুটেরা বিশ্বের লোভাতুর দৃষ্টি রয়েছে রাখাইনের তেল গ্যাস ও অন্যান্য সম্পদের প্রতি। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছে রোহিঙ্গাদের চিরতরে মিয়ানমার থেকে মুছে ফেলার জন্য। আর শুধু অর্থনৈতিক স্বার্থ, লুটপাটকেন্দ্রিক আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতার কারণে চীন, ভারত ও রাশিয়া প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছে মিয়ানমারের পক্ষে। অপর দিকে বিশ্বমোড়ল খ্যাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য শক্তিধর দেশ যাদের হাতে ছিল এ বর্বরতা রোধ করার ক্ষমতা তারাও নীরব ভূমিকা পালন করছে নানামাত্রিক স্বার্থচিন্তা থেকে।

রাখাইনের সম্পদ লুট ও অসহায় রোহিঙ্গারা
২০০৪ সালে রাখাইনের বঙ্গোপসাগর এলাকায় তিনটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। এতে বিশ্ব গ্যাস মানচিত্রে নতুনভাবে পরিচিতি পায় রাখাইন সমুদ্র এলাকা। দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারতের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি ওএনজিসি এই গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে। ২০১২ সালে বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির পর ব্যাপকভাবে তেল গ্যাস অনুসন্ধান শুরু হয় রাখাইন সমুদ্র এলাকায়।
২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার তেল কোম্পানি দ্বিতীয় গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে রাখাইন সমুদ্রে। একই সাথে যুক্তরাজ্যের শেল অয়েল, যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন, জাপানের মায়েকো, ফ্রান্সের টোটাল অয়েল সেখানে তেল গ্যাস অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে।

রাখাইন থেকে তেল গ্যাস চীনে নিয়ে যাওয়ার জন্য সিনো-মিয়ানমার তেল গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণে ২০০৫ সালে মিয়ানমারের সাথে চুক্তি করে চীন। ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী পাইপলাইনের মাধ্যমে সঞ্চালিত গ্যাসের ২০ ভাগ পাবে মিয়ানমার। বাকিটা যাবে চীনে। ২০০৯ সালের ৩১ অক্টোবর পাইপলাইন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালের ২১ অক্টোবর চীনে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। পাইপলাইন দিয়ে বছরে ১২ বিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস সঞ্চালিত হচ্ছে।
আকিয়াব বন্দর থেকে কুনমিং পর্যন্ত তেল ও গ্যাস পাইপলাইন বসাতে চীনকে বিনিয়োগ করতে হয়েছে ২ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ডলার। রাখাইনের সিউ গ্যাসফিল্ড থেকে এ গ্যাস নেয়া হচ্ছে চীনের কুনমিং পর্যন্ত। তেল পাইপ নির্মাণের কাজ শেষ হয় ২০১৪ সালের আগস্টে। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পরীক্ষামূলকভাবে তেল সরবরাহ শুরু হয়। দিনে চার লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল তেল সঞ্চালনের ক্ষমতা রয়েছে এ পাইপলাইনের।

রাখাইন হয়ে মান্দালয়, লাশিয়ো, মুজে দিয়ে এ তেল গ্যাস পাইপলাইন চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং পর্যন্ত পৌঁছে। আকিয়াব থেকে কুনমিং পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য ৭৭১ কিলোমিটার। আর তেল পাইপ লাইন আকিয়াব থেকে কুনমিং হয়ে চীনের গুইজু এবং গুয়াঞ্জি পর্যন্ত পৌঁছার কথা। এর দৈর্ঘ্য দুই হাজার ৮০৬ কিলোমিটার।
গ্যাস সঞ্চালনের জন্য চীন রাখাইনে গ্যাস টার্মিনাল নির্মাণ করেছে।
চীন রাখাইনে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ আরো অনেক প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ চুক্তি করেছে মিয়ানমারের সাথে।

অপর দিকে রাখাইনে চীনা অবস্থানের বিপরীতে ভারতের অন্যতম বৃহত্তম প্রকল্পের নাম হলো ‘কালাদান মাল্টি মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট’। এটি বাস্তবায়নে মোদি সরকার এ পর্যন্ত ৫০ কোটি ডলার ছাড় দিয়েছে। কালাদান প্রকল্প অনুযায়ী ভারতের মিজোরাম থেকে রাখাইনের রাজধানী সিটওয়ে হয়ে কলকাতা পর্যন্ত বিশাল এক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক হবে। এর মাধ্যমে মিজোরামের সাথে বঙ্গোপসাগরের যোগাযোগ স্থাপিত হবে। প্রথমে রাখাইনের রাজধানী সিটওয়ে সমুদ্রবন্দর থেকে কালাদান নদীর মাধ্যমে মিয়ানমারের সিন রাজ্যের পালেটওয়া বন্দরের সাথে নৌ যোগাযোগ স্থাপন হবে। যার দৈর্ঘ্য ১৫৮ কিলোমিটার। এরপর পালেটওয়া বন্দর থেকে সড়ক পথে যোগাযোগ স্থাপন করা হবে মিজোরামের রাজধানী আইজলের সাথে। অপর দিকে সিটওয়ে সমুদ্রবন্দর থেকে সোজা বঙ্গোপসাগর হয়ে যোগাযোগ হবে কলকাতা বন্দরের সাথে। কালাদান প্রকল্পের অধীনে ভারত রাখাইনে সমুদ্রবন্দর নির্মাণেরও উদ্যোগ নিয়েছে।

ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ওএনজিসি রাখাইনে আবিষ্কৃত গ্যাস সিটওয়ে থেকে মিজোরাম, আসাম ও শিলিগুঁড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ পাইপলাইন স্থাপনেরও পরিকল্পনা করে ভারত। ২০১৬ সালে ভারত পরিকল্পনা করে রাখাইনের কালাদান নদীর উজানে এক হাজার একর জমির ওপর বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার। রাখাইনের পাহাড়ি চীনদুইন নদীর ওপর দু’টি বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভারতের ১৮ শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিদ্যুৎ যাবে মনিপুর রাজ্যে। ভারতের আরো বেশ কিছু বিনিয়োগ পরিকল্পনা রয়েছে রাখাইনসহ মিয়ানমারে।
মিয়ানমারও রাখাইনে বৃহত্তর অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের ঘোষণা দেয় ২০১১ সালে। মিয়ানমার বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ‘এশিয়া ফাইনাল ফ্রন্টিয়ার’ কর্মসূচি ঘোষণা করে যার মাধ্যমে রাখাইনে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নামমাত্র মূল্যে দীর্ঘ মেয়াদে জমি লিজ দেয়া হবে।

এসব বিনিয়োগ আকর্ষণসহ ভারত ও চীনের যেসব প্রকল্প রয়েছে রাখাইনে তার জন্য সেখানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপস্থিতি মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার বিপজ্জনক বিবেচনা করে বলে মনে করা হচ্ছে। সে কারণে তারা রোহিঙ্গাদের নির্মূল অভিযান তথা গণহত্যা, ধর্ষণ ও জ্বালাও পোড়াওয়ের মাধ্যমে উচ্ছেদ করার বিষয়ে নির্বিকার রয়েছে এবং প্রকাশ্যে মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। চীন রাখাইন থেকে তেল গ্যাস ক্রয় ছাড়াও মিয়ানমারের শান রাজ্য থেকে মূল্যবান কাঠ সংগ্রহ করে। মিয়ানমারে চীনের শুধু সম্পদকেন্দ্রিক স্বার্থই নয় বরং বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক আধিপত্যের লড়াইও রয়েছে ভারতসহ অনেক দেশের সাথে। তাই মিয়ানমারে রয়েছে চীনের বহুমাত্রিক স্বার্থ।

রাখাইনের প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে রোহিঙ্গাদের নির্মূল করছে মিয়ানমার এ বিশ্লেষণ দাঁড় করাতে চাচ্ছেন যেসব বিশ্লেষক তারা বলছেন রাখাইনে চীনের পাইপলাইন বসানোর সময় সেখানে রোহিঙ্গাসহ আরাকানের মুসলমানরা তীব্র বিরোধিতা করে। চীন ও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে এ পাইপ নির্মাণ ঘিরে। চীনেও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়।
তা ছাড়া পরিবেশবাদীরাও এ পাইপলাইনের তীব্র বিরোধিতা করেছে। এসব কারণে পাইপলাইনের নিরাপত্তা এবং ভারত চীনসহ ভবিষ্যতে মিয়ানমারের ব্যবসায়ীসহ অন্যদের বিনিয়োগ নিরাপদ করার জন্য রাখাইনে অতিরিক্ত সেনাক্যাম্প বসানো হয়েছে। আরো অনেক সেনাক্যাম্প বসাবে মিয়ানমার। সর্বোপরি রাখাইনের সম্পদ লুটপাট সম্পূর্ণ নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য রোহিঙ্গাদের হুমকি ও প্রধান বাধা হিসেবে বিবেচনা করে তাদের সেখান থেকে একেবারে মুছে ফেলার নীতি অবলম্বন করেছে মিয়ানমার।

অবশ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ভিন্ন তথ্য। চীনের তেল গ্যাস পাইপলাইন শুধু রাখাইনে নয় মিয়ানমারের আরো কয়েকটি রাজ্য যথাÑ মান্দালয়, লাশিয়ো ও মুজে হয়ে চীনে প্রবেশ করেছে। রাখাইন ছাড়া অন্য যেসব অঞ্চল দিয়ে এ পাইপলাইন গেছে সেসব অঞ্চলেও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু তাদের ওপর মিয়ানমার গণহত্যা চালায়নি যেমনটা করেছে রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে। গোটা মিয়ানমারের পরিবেশবাদীরাও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। তাদেরও হত্যা করেনি মিয়ানমার। কিন্তু রোহিঙ্গাদের কেন হত্যা করা হচ্ছে। এর কারণ তাদের ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয়।

মিয়ানমারের সেনা সরকারের অধীনে চীনের মতো পরাশক্তির নির্মিত পাইপলাইনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন করার মতো শক্তি সামর্থ্য কোনোটাই ছিল না রোহিঙ্গাদের। কারণ দীর্ঘকাল ধরে হত্যা, ধর্ষণ জ্বালাও পোড়াওসহ নানা ধরনের নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলকনীতির কারণে রোহিঙ্গারা একটি নেতৃত্বহীন, শক্তিহীন, প্রতিরোধহীন অসহায় জাতিতে পরিণত হয়েছে বহুকাল আগে। সুতরাং তারা গ্যাসপাইপ লাইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে এবং রাখাইনের সম্পদ লুটে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এ অভিযোগ ভিত্তি পায় না। বরং বলা যায় যে, ভারত, চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ রাখাইনসহ মিয়ানমারের সম্পদ আহরণ এবং বিনিয়োগ স্বার্থের কারণে তাদের নিরবতা ও মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান রোহিঙ্গা নির্মূল ত্বরান্বিত করেছে এবং মিয়ানমার এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জোরেশোরে রোহিঙ্গা নির্মূলের কাজে নেমেছে।

প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে শুধু যেসব রোহিঙ্গার জমিজমা অধিগ্রহণ করা হয়েছে কিন্তু উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পায়নি, যেসব রোহিঙ্গা তাদের জীবন-জীবিকা হারিয়েছে তারাই কিছু মিছিল-সমাবেশ করেছে। এ ছাড়া সাগর দূষণের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল জীবিকা হারানো অনেক মৎস্যজীবী। এমনকি অভিযোগ রয়েছে পাইপলাইনে কাজ করা স্থানীয় শ্রমিকদের উপযুক্ত মজুরি থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। তারাও প্রতিবাদ করে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৩ সালেও তারা প্রতিবাদ করেছে ক্ষতিপূরণের দাবিতে। মিয়ানমারের সংবাদপত্রই এসবের সাক্ষ্য বহন করছে। এমনকি গত বছরও রাখাইনের কিয়াকি পিউ জেলার শতাধিক বাসিন্দা রাস্তায় মিছিল করেছে তাদের জমি অধিগ্রহণের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে। পাইপলাইন নির্মাণ শেষে তার মধ্য দিয়ে গ্যাস চীনে সরবরাহ শুরু হয়েছে সেই ২০১৩ সালে আর এখনো জমির ক্ষতিপূরণ পায়নি রাখাইনের অনেকে। ২০১৬ সালের ১১ এপ্রিল কিয়াকি পিউ জেলায় শতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত বিক্ষোভ করে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের দাবিতে। তারা জানান, তিনটি গ্রামে এক হাজার বর্গকিলোমিটার ফার্মল্যান্ড ক্ষতি হয়েছে যার ক্ষতিপূরণ তারা আজো পায়নি। স্থানীয় নারিনজারা পত্রিকায় এ বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবাদকারীরা অভিযোগ করেন, ১১০ জন ক্ষতিগ্রস্ত আজ পর্যন্ত কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি।

মিয়ানমারের পক্ষে রাশিয়ার প্রকাশ্য অবস্থানের কারণও তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ। মিয়ানমার রাশিয়া থেকে হেলিকপ্টার গানশিপ, মিগ ২৯সহ প্রচুর অস্ত্র কিনছে। রাশিয়া ইয়াঙ্গুনে মিগ কোম্পানির অফিস খুলেছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাশিয়ার সাথে চুক্তি করেছে মিয়ানমার ২০১৩ সালে। তেল গ্যাস আবিষ্কারের কারণে ইয়াঙ্গুনে রাশিয়ার কোম্পানি গ্যাজপ্রম অফিস খুলেছে।

ইউরোপ-প্রবাসী মিয়ানমারের নাগরিক নে সান লুইন লিখেছেনÑ রাখাইনে কিয়াক পিউ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নে চীনের সাথে এক হাজার কোটি ডলারের চুক্তি হয়েছে মিয়ানমারের। তবে এ প্রকল্পই যে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণের একমাত্র কারণ, তা নয়। রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি বা ভাষাও কোনো সমস্যা নয় এখানে। রোহিঙ্গাদের মূল সমস্যা তাদের ধর্মীয় পরিচয়। দেশ থেকে সব মুসলিম মুছে ফেলতে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

No comments