চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের কুলি থেকে শত কোটি টাকার মালিক ইউসুফ
ব্যাংকের টাকাসহ সব মিলিয়ে দেড়শ’ থেকে ২শ’ কোটি টাকার সম্পদের মালিক ইউসুফ। এরপরও বর্তমানে তার পরিচয় দেয়ার মতো কোনো পেশা নেই। জানা গেছে, ইউসুফের রাতারাতি ভাগ্য পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে মাদক ব্যবসা।
পুলিশ সূত্র জানায়, কুমিল্লার দিনমজুর চারু মিয়ার অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন ছেলে ইউসুফ ২০০০ সালের দিকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে এসে কুলির কাজ নেন। বাবার সহযোগী হিসেবে কাজের পাশাপাশি রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ছিঁচকে চুরি ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে কুলির কাজ নিলেও পরে তা ছেড়ে দিয়ে ২০১০ সালে মাদক ব্যবসা শুরু করেন।
নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে মাদক বিক্রির মাধ্যমে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হন। চট্টগ্রামের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের অন্যতম একজন ইউসুফ।
তার বিরুদ্ধে মাদক, খুনসহ নানা অভিযোগে প্রায় দেড় ডজন মামলা রয়েছে। জেলও খেটেছেন একাধিকবার। বর্তমানে কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতারে হন্যে হয়ে খুঁজছে। পরিবারে দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় ইউসুফ।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের শীর্ষে রয়েছে ইউসুফ। তার প্রকাশ্য কোনো পেশা নেই। মাদক ব্যবসাই তার একমাত্র পেশা।
বর্তমানে তার ২টি এলিয়ন ব্র্যান্ডের প্রাইভেট কার, ৬টি কাভার্ডভ্যান, ৩টি টাটা ট্রাক, কদমতলী পোড়া মসজিদ সংলগ্ন সাত গণ্ডা জমির ওপর নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন এবং কদমতলী জাহাঙ্গীরের বাড়িতে ১টি ফ্ল্যাট, হালিশহর এক্সেস রোডে চার গণ্ডা জমি, পটিয়া উপজেলার ধলঘাটে এক দাগে সাতকানি ধানি জমি, পটিয়া সদরে ছয় গণ্ডা জমি এবং বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা রয়েছে।
সিআইডির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফেনী, কুমিল্লা, টেকনাফ সীমান্ত এলাকা থেকে ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা পাইকারী দরে এনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাদক বিক্রেতার কাছে ইউসুফ বিক্রি করে।
ইউসুফের মাদক ব্যবসার সহযোগীদের মধ্যে রয়েছে- বাইট্টা নাছির, সালেহ আহমদ, খালেক, টেক্সি জসিম, ইছাহাক, মতিন, রানা, টিপু, বেলাল ওরফে সোর্স বেলাল, মজিদ, লোকমান ওরফে লেংড়া লোকমান, জাহাঙ্গীর, ক্যাশিয়ার মুসলিম, শাকিল, ওয়াসিম, মাঈন উদ্দিন, শাহাবউদ্দিন, টুনা, মানিক, নাঈম, আসলাম, জীবন, ইকবাল, কালা লিটন, বিপ্লব, ফ্যাক্স লিটন, জামাই জসিম, পারুলী, গালকাটা পারুলী, বেগুনী, শিরিন ও আরজু।
২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলস্টেশনে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে সোনার দোকানের দুই কর্মচারীর কাছ থেকে ২০৫ ভরি সোনা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অন্যতম সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ী মো. ইউসুফ। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা (সিআইডি)। ওই মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতারের চেষ্টা করছে সংস্থাটি।
এদিকে সিআইডির এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, ইউসুফের সম্পদের বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকার অর্থসহ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যা প্রতিবেদন আকারে পুলিশের ঊর্ধŸতন কর্মকর্তাদেরও অবহিত করা হয়েছে। এসব সম্পত্তির বাইরে তার আরও সম্পদ থাকতে পারে বলেও মনে করছেন ওই কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, ‘ইউসুফ চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী।
তার বিরুদ্ধে প্রায় দেড় ডজন মামলা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের জন্য একাধিকবার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। আশা করি শিগগিরই আমরা তাকে গ্রেফতার করতে পারব।
সিআইডি প্রতিবেদনে শত কোটি টাকার সম্পদের হিসাব উঠে আসার বিষয়টি সঠিক নয় দাবি করে শুক্রবার মো. ইউসুফ যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি আগে কুলি ছিলাম না কী ছিলাম এটা বড় কথা নয়। আমার এত টাকার সম্পদ নেই। এই রিপোর্ট সিআইডি দিয়ে থাকলে তারা আমার ব্যাপারে মিথ্যে রিপোর্ট দিয়েছে।
একসময় আমি মাদক ব্যবসা করলেও গত তিন বছর এ ব্যবসার ধারেকাছেও নেই। এখন আমি বৈধ পথে আয় করি। আমার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মহিনী ট্রান্সপোর্ট, মহিনী পোলট্রি ফার্ম, গরুর খামার ও মাছের খামার রয়েছে।’
No comments