১৫০ জেএসসি পরীক্ষার্থী নিয়ে নৌকাডুবি, ২ লাশ উদ্ধার

 


আলোকিত মানুষ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা করেছিল কুসুমকোমল দেড়শ মুখ। কিন্তু আলোকিত মানুষ হওয়া দূরে থাক, তারা যে প্রাণে বেঁচে আছে, সেটিই ঢের। তবে এর মধ্যে দুই সহপাঠীকে হারাতে হয়েছে তাদের। এ ঘটনায় শোকে কাতর
হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। শুধু তা-ই নয়, এ শোক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশজুড়ে। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায়। গতকাল বীরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির দেড়শ শিক্ষার্থী নদী পারাপারের সময় তাদের বহন করা নৌকাটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় দুই জেএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার কৃষ্ণনগর এলাকায় তিতাস নদে এ ঘটনা ঘটে।
 নিহত দুই পরীক্ষার্থী হচ্ছেÑ নাদিরা আক্তার ও সোনিয়া আক্তার। নাদিরা বীরগাঁওয়ের বাইশমোজা গ্রামের সৈয়দ হোসেনের মেয়ে এবং সোনিয়া নজরদৌলত গ্রামের শিশু মিয়ার মেয়ে। লাশ দুটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
 বীরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য জহির রায়হান দাবি করেছেন, নৌকাডুবির ঘটনায় পাঁচ পরীক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছে।
এদিকে নৌকাডুবির কারণে যেসব পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারেনি, তাদের জন্য ফের পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মহিউদ্দীন খান। তিনি বলেন, বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় নিয়ে এসব পরীক্ষার্থীর জন্য ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্য বিষয়ের পরীক্ষা শেষে বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকালে বীরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী নৌকাযোগে থানাকান্দি থেকে কৃষ্ণনগরের দিকে রওনা হয়। তাদের পরীক্ষার আসন পড়েছিল কৃষ্ণনগর আবদুল জব্বার স্কুল অ্যান্ড কলেজে। থানাকান্দি থেকে কৃষ্ণনগরের দিকে যাওয়ার সময় তিতাস নদে পুঁতে রাখা একটি বাঁশের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নৌকাটি উল্টে যায়। স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় নাদিরা ও সোনিয়াকে কৃষ্ণনগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং পরবর্তী সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসা ও কর্মকর্তা আজহারুর রহমান জানান, হাসপাতালে আনার আগেই শিক্ষার্থী দুজন মারা গেছে। নবীনগর থানার ওসি আসলাম শিকদারও একই তথ্য জানিয়েছেন। এর পর পরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল খালেক, জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শামসুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চিত্ত রঞ্জন পাল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালেহীন তানভীর গাজী, ওসি আসলাম শিকদার। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে দাফন-কাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। বীরগাঁও স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজির হোসেন বলেন, নিহত দুই শিক্ষার্থী নম্র, বিনয়ী ও মেধাবী ছিল। তাদের মৃত্যুতে অন্য ছাত্রছাত্রীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালেহীন তানভীর গাজী বলেন, নৌডুবির শিকার অবশিষ্ট শিক্ষার্থীরা সুস্থ রয়েছে এবং পরীক্ষা দিয়েছে। স্কুলে মেডিক্যাল টিম নিয়োজিত আছে। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গতকাল ১ নভেম্বর থেকে সারা দেশে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বীরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার ২৯৮ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। এই ২৯৮ জন গতকাল সকালে থানাকান্দি থেকে দুটি নৌকাযোগে কৃষ্ণনগরের দিকে রওনা দেয়।

No comments