Breaking News

রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ।



রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স


রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও চরমপন্থী বৌদ্ধদের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়া।

সমুদ্রপথে পালিয়ে আসা বাস্তুহারা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত না পাঠিয়ে তাদের সাময়িক আশ্রয় দেয়া হবে বলে শুক্রবার জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার নৌ বাহিনীর প্রধান। রয়টার্স

২৫ আগস্ট দিবাগত রাতে মিয়ানমারে ৩০টি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গাদের দায়ী করে পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত ৪শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আর প্রাণভয়ে এক লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতে মারা গেছে আরও শতাধিক রোহিঙ্গা।

মালয়েশিয়া মেরিটাইম ইনফোর্সমেন্ট এজেন্সির ডিরেক্টর জেনারেল জুলকিফলি আবু বাকারকে উদ্বৃত করে রয়টার্স জানায়, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে আন্দামান সাগর হয়ে ছোট ছোট নৌকায় করে রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়ায় উপকূলের দিকে আসছে। আগে থেকেই মালয়েশিয়ায় প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশ করেছে। শুরুতে ভাবা হয়েছিল- তাদের মৌলিক প্রয়োজনানুযায়ী কিছু মানবিক সাহায্য-সহায়তা দিয়ে যেকোনোভাবে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মানবিকতার খাতিরেই পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

মালয়েশিয়ায় জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) ৫৯ হাজার নিবন্ধিত শরণার্থী রয়েছে। কিন্তু অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যাটা এর দ্বিগুন। মালয়েশিয়া জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনের অনুসিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেনি। শরণার্থীদের এখানে অবৈধ অভিবাসী হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়।

মালয়েশিয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশী থাইল্যান্ডও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড বর্ডারের কাছে জঙ্গল ক্যাম্পে বেশ কিছু গণকবরের খোঁজ পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে নিহতদের বেশিরভাগই মানবপাচারের শিকার রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর চলমান সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের ৬৩ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট। ২৫ আগস্টই এই ভয়াবহ গণহত্যা শুরু হয়।

মিয়ানমার সরকারের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ গত ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর গত এক সপ্তাহে ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৭০ জন ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’, ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দুজন সরকারি কর্মকর্তা এবং ১৪ জন সাধারণ নাগরিক। মিয়ানমার সরকারের আরো দাবি, ‘বিদ্রোহী সন্ত্রাসীরা’ এখন পর্যন্ত রাখাইনের প্রায় দুই হাজার ৬০০ বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এখনো রাখাইন রাজ্যে থাকা মুসলিমদের মধ্যে মাইকে প্রচার চালাচ্ছে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মায়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর দমন-নিপীড়নে সবসময়ই সোচ্চার ছিলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। তিনি মায়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের উপর হামলা বন্ধের আহবানও জানিয়েছেন। তবে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর দমনপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সহিংসতার বেশির ভাগ খবরই অতিরঞ্জিত বলে মন্তব্য করেছে তারা। তা ছাড়া, রাখাইন রাজ্যে সংঘাত ওই রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে সরকার অভিহিত করেছে।

No comments