ভ্রমণ: রহস্যময় আলুটিলা গুহা



ঘুরে আসুন রহস্যময় আলুটিলা গুহা
খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে মাতিরাঙ্গা উপজেলার আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে রয়েছে একটি রহস্যময় গুহা। স্থানীয়রা একে বলে মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা। তবে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে
অবস্থিত বলে আমরা একে আলুটিলা গুহা বলেই চিনি। এটি খাগড়াছড়ির একটি নামকরা পর্যটন কেন্দ্র। খাগড়াছড়ি বেড়াতে এলে সবাই অন্তত একবার হলেও এখানে ঘুরে যায়। এটি একটি চমৎকার পিকনিক স্পট। তাই সারা বছরই এখানে ভিড় লেগে থাকে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়, হৃদয় ছুঁয়ে যায়। দেখলেই মুহূর্তেই মন ভালো হয়ে যাবে।

আলুটিলা খাগড়াছড়ি জেলার সবচেয়ে উঁচু পর্বত। নামে এটি টিলা হলেও মূলত এটি একটি পর্বতশ্রেণি। আলুটিলার আগের নাম ছিল আরবারী পর্বত। এর সর্বোচ্চ উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে ৩০০০ হাজার ফুট। এখান থেকে খাগড়াছড়ী শহরের বেশ কিছুটা অংশ দেখা যায়। শুধু তাই নয়; পাহাড়ের সবুজে আপনার মন জুড়িয়ে যাবে। আকাশ পাহাড় আর মেঘের মিতালী এখানে মায়াবী আবহ তৈরি করেছে। 
আলুটিলার রহস্যময় সুড়ঙ্গে যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে পর্যটন কেন্দ্রের টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। ফটকের দুই পাশে দুটি শতবর্ষী বটবৃক্ষ আপনাকে স্বাগত জানাবে। ফটক দিয়ে পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশের সময় আপনাকে মশাল সংগ্রহ করতে হবে। কারণ রহস্যময় গুহাটিতে একেবারেই সূর্যের আলো প্রবেশ করে না। পর্যটন কেন্দ্রের ফটক দিয়ে প্রবেশ করে ডান পাশের রাস্তা দিয়ে মিনিট খানেক হাঁটলেই চোখে পড়বে একটি সরু পাহাড়ি পথ। পাহাড়ে ঢাল বেয়ে নিচে নেমে গেছে এ পথটি। এ পথটি বেয়ে নিচে নামলেই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে প্রথম চমকটি। হঠাৎ চোখে পড়বে একটি ছোট ঝর্ণা। ঝর্ণার পানি নেমে যাচ্ছে নিচের দিকে ঝিরি বরাবর। তবে এখানে পাহাড়ি লোকজন ঝর্ণার পানি আটকে রাখার জন্য একটি বাঁধ দিয়েছে। তারা এ পানি খাবার ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করে।
আর ফটক থেকে বাম দিকের রাস্তা বরাবর হাঁটলে পাবেন রহস্যময় সেই গুহা। গুহাতে যাওয়ার আগে আপনি পাবেন একটি বিশ্রামাগার ও ওয়াচ টাওয়ার। এর সামনে দিয়ে রাস্তা চলে গেছে আলুটিলার গুহামুখে। আগে পাহাড়ের ঢাল বেঁয়ে নামতে হতো গুহামুখে। কিন্তু এখন পর্যটন কর্পোরেশন একটি পাকা রাস্তা করে দিয়েছে। ফলে খুব সহজেই হেঁটে যাওয়া যায় গুহামুখে।
পাকা রাস্তা শেষ হলে আপনাকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে হবে। প্রায় ৩৫০টি সিঁড়ি বেয়ে নামলে পরে পাওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত সেই গুহা, আলুটিলা গুহা। গুহাটি খুবই অন্ধকার ও শীতল। কোনো প্রকার সূর্যের আলো প্রবেশ করে না তাই মশাল নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। একেবারেই পাথুরে গুহা এটি। গা ছম ছম করা পরিবেশ।
খুব সাবধানে পা ফেলে সামনে এগুতে হয়। কারণ সুড়ঙ্গের ভিতরে কোনো আলো নেই। সুড়ঙ্গের তলদেশ পিচ্ছিল ও পাথুরে। এর তলদেশে একটি ঝর্ণা প্রবাহমান। তাই খুব সাবধানে মশাল বা আলো নিয়ে গুহা পাড়ি দিতে হবে। পা ফসকে গেলেই আহত হতে হবে। তবে অন্য কোনো ভয় নেই। গুহাটি একেবারেই নিরাপদ। 
আলুটিলার এ মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা সত্যিই প্রকৃতির এক আশ্চার্য খেয়াল। দেখতে অনেকটা ভূগর্ভস্থ টানেলের মতো যার দৈর্ঘ প্রায় ৩৫০ ফুট। গুহার ভেতরে জায়গায় জায়গায় পানি জমে আছে, রয়েছে বড় বড় পাথর। রীতিমত রূপ কথার সে গুহার মতোই। গুহাটির এপাশ থেকে ঢুকে ওপাশ দিয়ে বের হতে সময় লাগবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। গুহাটির উচ্চতা মাঝে মাঝে এতটাই কম যে আপনাকে নতজানু হয়ে হাঁটতে হবে।
সবকিছু মিলিয়ে মনে হবে যেন সিনেমার সেই গুপ্তধন খোঁজার পালা চলছে। বিশ্বে যতগুলো প্রাকৃতিক গুহা আছে আলুটিলা সুড়ঙ্গ তার মধ্যে অন্যতম। কিন্তু খুব একটা প্রচার না থাকায় অনেকেই এ সুন্দর ও রহস্যময় গুহাটি দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় খাগড়াছড়িতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে এখানকার জনগণ এ পর্বত থেকেই বুনো আলু সংগ্রহ করে তা খেয়ে বেঁচে থাকতো। তারপর থেকে এই পর্বতটি আলুটিলা নামেই পরিচিতি লাভ করে। এখনো এখানে প্রচুর পরিমাণে বুনো আলু পাওয়া যায়। 
কীভাবে যাবেন :
ঢাকা থেকে শান্তি, শ্যামলী, হানিফ ও অন্যান্য পরিবহনের বাসে খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন। ভাড়া পড়বে ৫২০ টাকা। এ ছাড়াও বিআরটিসি ও সেন্টমার্টিন পরিবহনের এসি বাস খাগড়াছড়ি যায়। 
খাগড়াছড়ি শহর থেকে চাঁন্দের গাড়ি অথবা লোকাল বাসে চড়ে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে যেতে হবে। অথবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করেও যেতে পারবেন। তাই আপনি সাজেক ভ্রমণের প্ল্যান করলে আলুটিলা গুহায় অল্প সময়েই নিউজিল্যান্ড পাড়াটাও ঘুরে আসতে পারেন। এ ছাড়া হাজাছড়া ঝর্ণাও দেখে নিতে পারেন। 
কোথায় খাবেন :
খাগড়াছড়ি শহরের কাছেই পানখাই পাড়ায় ঐতিহ্যবাহী সিস্টেম রেস্তোরাঁর অবস্থান। এখানে খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে পারবেন। যোগাযোগ : ০৩৭১-৬২৬৩৪, ০১৫৫৬৭৭৩৪৯৩, ০১৭৩২৯০৬৩২২।
কোথায় থাকবেন : খাগড়াছড়িতে পর্যটন মোটেলসহ বিভিন্ন মানের থাকার হোটেল আছে।
পর্যটন মোটেল : এটি শহরে ঢুকতেই চেঙ্গী নদী পার হলেই পড়বে। মোটেলের সব কক্ষই ২ বিছানার। ভাড়া এসি ২১০০ টাকা, নন এসি ১৩০০ টাকা। এসি স্যুইট রুম ৩,১০০ টাকা। মোটেলের অভ্যন্তরে মাটিতে বাংলাদেশের মানচিত্র বানানো আছে। তবে পুরো খাগড়াছড়ি জেলায় বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ভোল্টেজ ওঠানামা করায় এসি রুমগুলো নন-এসি হিসেবে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। যোগাযোগ : ০৩৭১-৬২০৮৪৮৫।
হোটেল ইকো ছড়ি ইন : খাগড়াপুর ক্যান্টনমেন্টের পাশে পাহাড়ি পরিবেশে অবস্থিত। এটি রিসোর্ট টাইপের হোটেল। যোগাযোগ : ০৩৭১-৬২৬২৫, ৩৭৪৩২২৫।

No comments