বিভিন্ন অঞ্চলের গরুর মাংসের রান্না
নানা অঞ্চলের খাবারে
কিছু বিশেষত্ব থাকে—যা স্বাদে-গন্ধে আনে ভিন্নতা। গরুর মাংসও একেক অঞ্চলে
রান্না করা হয় একেক রীতিতে। সেসব খাবারের সুনামও কম নয়। দেশের বেশ কয়েকটি
অঞ্চলের তেমনই কিছু গরুর মাংসের রান্না নিয়ে এই আয়োজন। রেসিপিগুলো দিয়েছেন
সেই সব এলাকার অভিজ্ঞ রন্ধনশিল্পীরা
সিলেট
রেসিপি দিয়েছেন কাজী তাসলিমা সায়েরা
উপকরণ: গরুর মাংস ৫০০ গ্রাম, টক দই আধা
কাপ, পেঁয়াজ বাটা আধা কাপ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, আদা বাটা আধা টেবিল
চামচ, জিরা গুঁড়া আধা চা-চামচ, কালোজিরা ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা–চামচ,
সাতকরা (ছোট কিউব করে কাটা) ৪ টেবিল চামচ, লবণ, তেল ও কাঁচা মরিচ
পরিমাণমতো।
ফোড়নের জন্য: রসুন ২০ কোয়া, ভাজা শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, পাঁচফোড়ন গুঁড়া ১ চা-চামচ ও সরিষার তেল ৪ টেবিল চামচ।
প্রণালি: তেল, সাতকরা ও কাঁচা মরিচ ছাড়া
বাকি সব উপকরণ দিয়ে মাংস মেখে দুই ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর চুলায় বসিয়ে
মাঝারি আঁচে রান্না করতে হবে। মাংস সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত যদি পানি শুকিয়ে
যায় তাহলে পরিমাণমতো গরম পানি দিয়ে ঢেকে জ্বাল দিতে হবে। মাংস সেদ্ধ হয়ে
এলে পাত্র নামিয়ে নিন। এবার অন্য একটি পাত্রে তেল গরম করে ফোড়নের মসলা ও
সাতকরা দিয়ে কষাতে থাকুন। সাতকরা সেদ্ধ হয়ে এলে মাংসের মধ্যে এই মিশ্রণটুকু
ঢেলে দিন। মাংসের পাত্রটি আবার চুলায় বসিয়ে নেড়ে দিয়ে দুই থেকে তিন মিনিট
রেখে নামিয়ে নিন।
বগুড়া
রেসিপি দিয়েছেন আনোয়ারা বেগম
উপকরণ: গরুর মাংস ১ কেজি, আলু দেড় কেজি,
পেঁয়াজ আধা কেজি, শুকনো মরিচের গুঁড়া পরিমাণমতো, কাঁচা মরিচ ৮ থেকে ১০টি,
আদাবাটা পরিমাণমতো, রসুনবাটা পরিমাণমতো, ধনেবাটা পরিমাণমতো, জিরাবাটা
পরিমাণমতো, কালো এলাচ ৮টি, সাদা এলাচ ১০টি, তেজপাতা ৪টি, লবণ ও হলুদ
পরিমাণমতো, সয়াবিন তেল ২৫০ গ্রাম।
প্রণালি: প্রথমে গরুর মাংস ভালোভাবে
ধুয়ে নিতে হবে। এবার কড়াইয়ে আধা কেজির তিন ভাগের দুই ভাগ পেঁয়াজ কুচি দিন।
এর মধ্যে কাঁচা মরিচ বাদে সব উপকরণ ও পরিমাণমতো পানি দিয়ে ঢেকে দিন। ঢাকনা
উঠিয়ে কিছুক্ষণ পরপর নেড়ে দিন যেন ধরে না যায়। যতক্ষণ মাংস ভালোমতো সেদ্ধ
না হবে, ততক্ষণ প্রয়োজনে আরেকটু পানি দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিতে হবে। মাংস
সেদ্ধ হয়ে একটু তেল ভেসে উঠলেই নামিয়ে নিতে হবে। আলু সেদ্ধ করে আধা ভাঙা
করে নিতে হবে। অন্য একটি হাঁড়ি চুলায় দিয়ে তাতে পরিমাণমতো তেল দেওয়ার পর
একটু ভালোভাবে গরম হলে বাকি পেঁয়াজ কুচি দিয়ে নাড়তে হবে। পেঁয়াজ একটু লালচে
ভাব হলেই তাতে আধা ভাঙা আলু ও সব মসলার উপকরণ ঢেলে একটু একটু পানি দিয়ে
নাড়তে হবে যাতে নিচে ধরে না যায়। কিছুক্ষণ কষানো হলে এই কষানো মাংস আলুর
মধ্যে দিন। এবার আরেকটু কষিয়ে নিতে হবে। তারপর ঘাঁটিটি পাতলা না ঘন হয়েছে,
দেখে পরিমাণমতো পানি দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নামিয়ে নিন। শেষে কাঁচা মরিচগুলো
হাঁড়ির মধ্যে দিয়ে দিন। একটু ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন।
চট্টগ্রাম
রেসিপি দিয়েছেন জোবাইদা আশরাফ
উপকরণ: প্রথম ধাপের জন্য: গরুর রানের মাংস ৪ কেজি
(হাড়-চর্বি ছাড়া), পেঁয়াজবাটা ৪ টেবিল চামচ, আদাবাটা ৪ চা-চামচ, রসুনবাটা
৪ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ৪ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ৪ চা-চামচ, ধনে গুঁড়া ৪
চা-চামচ, তেজপাতা ৪টি, লং, এলাচি, দারুচিনি ৪টি করে, সয়াবিন তেল ১ কাপ, লবণ
পরিমাণমতো, পানি পরিমাণমতো ও গরুর চর্বি ১ কেজি।
দ্বিতীয় ধাপের জন্য: পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচ কুচি ১
টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, টালা জিরা গুঁড়া ২ টেবিল চামচ,
টালা ধনে গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, গরমমসলা গুঁড়া ১ চা-চামচ, টালা রাঁধুনী
গুঁড়া আধা চা-চামচ, টালা গোলমরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, সরিষার তেল ২ টেবিল
চামচ, লেবুর রস স্বাদমতো, লবণ স্বাদমতো, টমেটো কুচি আধা কাপ ও কাটা শসা
পরিমাণমতো।
প্রণালি: গরুর রানের মাংস চর্বি এবং হাড়
ছাড়া নিয়ে প্রতিটি টুকরা ৫০০ গ্রামের মতো নিতে হবে। ধুয়ে পানি ঝরাতে হবে।
প্রথম ধাপের সব উপকরণ (চর্বি ছাড়া) মেখে রান্না করে নিতে হবে। এভাবে
প্রতিদিন দুই বেলা করে তিন দিন জ্বাল দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে মসলা থেকে
মাংস তুলে নিন। অন্য ডেকচিতে চর্বি জ্বাল দিয়ে রাখতে হবে কোরবানির দিন
থেকে। চর্বি গলে তেল বের হবে। আরেকটা ডেকচিতে এই তেল নিয়ে তুলে রাখা মাংস
জ্বাল দিতে হবে। চর্বির তেলে যেন মাংস ডোবা থাকে। এভাবে গরমকাল হলে
প্রতিদিন বা তিন দিন, শীতকাল হলে কয়েক দিন পরপর জ্বাল দিয়ে এই মাংস তিন-চার
মাস সংরক্ষণ করা যায়। ছেঁচা মাংস করার সময় এই মাংসের চার টুকরা নিয়ে ছোট
ছোট কুচি করে আবার পাটা বা হামানদিস্তায় ছেঁচে নিতে হবে। এবার দ্বিতীয়
ধাপের সব উপকরণ (লেবুর রস ছাড়া) মেখে আবার গরম করে ডিশে ঢেলে ওপরে লেবুর
রস, কাঁচা পেঁয়াজ কুচি, শসা, ধনেপাতা, কাঁচা মরিচ দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
বরিশাল
রেসিপি দিয়েছেন মলি রহমান
উপকরণ: গরুর মাংস ৫০০ গ্রাম, দেশি বুটের
ডাল (ছোলা ছাড়া) ৫০০ গ্রাম, পেঁয়াজ কুচি ২ কাপ, লবঙ্গ ৭টি, বড় এলাচি ৩টি,
তেজপাতা ৩টি, দারুচিনি ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার, গরম মসলার গুঁড়া ১ চা-চামচ,
গোলমরিচ ৫টি, কাঁচা মরিচ ৮টি, আদা, জিরা ও রসুনবাটা একসঙ্গে এক টেবিল চামচ,
শুকনা মরিচের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, হলুদ ১ টেবিল চামচের চার ভাগের এক ভাগ
এবং লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: প্রথমে ডাল ভালোভাবে ধুয়ে দুই
ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর গরুর মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে সব মসলা দিয়ে মেখে
রাখতে হবে। তেল গরম হলে এর মধ্যে মাংস ছেড়ে দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। মাংস
আধা সেদ্ধ হয়ে এলে সামান্য পানি দিয়ে ভেজানো ডাল দিয়ে দিতে হবে। কষানো হয়ে
এলে প্রয়োজনমতো পানি দিয়ে ঢেকে কম আঁচে রান্না করতে হবে। পানি ফুটে উঠলে
এর মধ্যে কাঁচা মরিচ দিয়ে দিতে হবে। মাংস পুরোপুরি সেদ্ধ হলে ঝোল ঘন থাকা
অবস্থায় ঢাকনা তুলে ওপরে এক চা-চামচ ভাজা জিরার গুঁড়া, দুই টেবিল চামচ
বেরেস্তা ও লেবুর স্লাইস দিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন সুস্বাদু গরুর
মাংসের ডাল।
জামালপুর
রেসিপি দিয়েছেন রাশেদা আক্তার
উপকরণ: গরুর মাংস ২ কেজি, চালের গুঁড়া
২৫০ গ্রাম, পেঁয়াজ কুচি ৩ কাপ, রসুনবাটা ২ টেবিল চামচ, আদাবাটা দেড় টেবিল
চামচ, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, মরিচের গুঁড়া ৩ টেবিল চামচ, হলুদের গুঁড়া ২
টেবিল চামচ, ধনে গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, রান্ধুনি শয্ ১ চা-চামচ, জিরার
গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, মৌরির গুঁড়া ২ চা-চামচ, সাদা এলাচি ৮-৯টি, দারুচিনি
৪-৫টি, তেজপাতা ৩-৪টি, লবণ পরিমাণমতো ও পানি ৩ লিটার।
প্রণালি: মাংস কেটে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
এবার একটি পাত্রে মাংস নিয়ে এতে (দেড় কাপ) পানি পেঁয়াজ কুচিসহ সব মসলা
একসঙ্গে মাখিয়ে পাত্রটি ঢেকে চুলায় বসিয়ে বেশি তাপে কষাতে হবে। ১৫-২০ মিনিট
কষানো হলে তাতে পানি ঢেলে ঢেকে দিতে হবে। মাংস সেদ্ধ হলে চালের গুঁড়া
ঠান্ডা পানি দিয়ে গুলে ধীরে ধীরে নাড়তে হবে ভালো করে মিশে না যাওয়া
পর্যন্ত। মিশে ঘন হয়ে উঠলে তাতে বাকি (দেড় কাপ) পেঁয়াজ কুচি, সামান্য রসুন
কুচি, আস্ত জিরা এবং দারুচিনি ও এলাচি দিয়ে বাগার দিয়ে চুলা থেকে নামিয়ে
নিতে হবে। বেরেস্তা দিয়ে পরিবেশন করতে পারেন।
রংপুর
রেসিপি দিয়েছেন মাসুমা মুক্তা
উপকরণ: গরুর মাংস ১ কেজি, মিষ্টি কুমড়া
আধা কেজি, জিরা বাটা ২ চা-চামচ, আদা বাটা ২ চা-চামচ, রসুন বাটা ২ চা-চামচ,
সয়াবিন তেল ১ কাপ, লবণ স্বাদমতো, পেঁয়াজ (কুচি করা) ৮টি, ছোট এলাচি বাটা
৬টি, লবঙ্গ ৬টি, গোলমরিচ ৭টি, দারুচিনি ৩ টুকরো, হলুদ ২ চা-চামচ, শুকনা
মরিচ গুঁড়া ২ চা-চামচ ও কাঁচা মরিচ ৫টা।
প্রণালি: এক কেজি মাংস (চিবানো যায় এমন
হাড়সহ) ধুয়ে পানি ঝরাতে হবে। তেল ও পেঁয়াজ বাদে সব উপকরণ দিয়ে মাংস মেখে
আধা ঘণ্টা রাখতে হবে। অন্য¨ একটি পাত্রে তেল গরম করে পেঁয়াজ ভেজে তুলে
রাখতে হবে। এবার ওই তেলে মেখে রাখা মাংস দিয়ে কষিয়ে নিতে হবে। মাংস সেদ্ধ
হওয়ার পর সেখানে টুকরো টুকরো মিষ্টি কুমড়া ছেড়ে দিতে হবে। এরপর পরিমাণমতো
পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। পানি কমে এলে পেঁয়াজ ভাজা বেরেস্তা ও কাঁচা মরিচ
দিয়ে একটু দমে রাখতে হবে।
No comments