‘তোরা কেমনে আমারে পর করলি’
ছেলে আর ছেলের বউদের অত্যাচারে ঘর ছেড়ে ঠাঁই হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। ছেলেদের
সঙ্গে থাকার কথা বললে আত্মহত্যা করতে চান। তার পরেও ছেলেদের জন্যই মন কাঁদে
তার। ঈদের সময় তার মনে হয় সন্তানদের নতুন কাপড়, জুতা কিনে দেওয়া,
সেমাই-পায়েস তৈরি করার কথা। এসব দিনের কথা ভাবতে ভাবতে চোখ ভিজে যায়
জাহানারার। বলতে থাকেন, ‘তোরা কেমনে আমারে পর করলি?’
ঈদের পরের দিন রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) গাজীপুর জেলার মুনিপুরের গিভেন্সি
বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্মৃতিচারণ করেন কুমিল্লার মুরাদনগর থানার জানঘর
গ্রামের ৬৭ বছরের জাহানারা বেগম।
গিভেন্সি বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র
জাহানারা বেগম চোখের জল মুছে আবার বলতে থাকেন- ‘এই তো সেদিনের কথা। এখনো
মনে পড়ে, ঈদ এলেই বাচ্চাদের নতুন কাপড় পরানো, সেমাই, পায়েস, মাংস রান্না
করা, ঘর গোছানো, নিজের নতুন শাড়ি পরা, আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া -সবই
যেন ছবির মতো চোখে ভাসে। কোনোকিছুই ভুলতে পারি না। একদিন সবই ছিল। এখন আমার
কেউ নেই, আমি একা, কেউ খোঁজও নেয় না।’
সন্তানদের কথা বলতে গিয়েই থেমে যান জাহানারা। বিলাপ করতে থাকেন- ‘তোরা কেমনে আমারে ভুলতে পারলি।’ জাহানারা বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলে আর ছেলের বউদের সঙ্গে সম্পত্তি আর টাকা নিয়ে বিরোধ বাধে। সন্তানরা জোর করে সব জমি লিখে নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।’ নয় সন্তানের জন্য জীবনের সবটুকু উজাড় করা এই নারী সব মায়া ছেড়ে নিজের মতো করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন। সংসারের সব ঘটনা জানিয়ে সহায়তা চান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর।
সন্তানদের কথা বলতে গিয়েই থেমে যান জাহানারা। বিলাপ করতে থাকেন- ‘তোরা কেমনে আমারে ভুলতে পারলি।’ জাহানারা বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলে আর ছেলের বউদের সঙ্গে সম্পত্তি আর টাকা নিয়ে বিরোধ বাধে। সন্তানরা জোর করে সব জমি লিখে নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।’ নয় সন্তানের জন্য জীবনের সবটুকু উজাড় করা এই নারী সব মায়া ছেড়ে নিজের মতো করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন। সংসারের সব ঘটনা জানিয়ে সহায়তা চান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর।
পুনর্বাসন কেন্দ্র বারান্দায় বসে আছেন জাহানারা
কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাহানারা বলেন, ‘বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছিলাম। কিন্তু সেনাবাহিনী থেকে বলা হয়েছিল সন্তানদের কাছে ফেরত যেতে। আমি সন্তানদের কাছে যেতে চাইনি। সন্তানদের কাছে পাঠালে আত্মহত্যা করবো বলে জানিয়েছিলাম। পরে তাদের সহায়তায় পুনর্বাসন কেন্দ্রে আশ্রয় হয় আমার। আমার এক দুঃসম্পর্কের ভাই আমাকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখে যান।’ জাহানারা বলেন, ‘এখানে আসার আগে ছিলাম আমার ছোট ছেলে শামীমের কাছে। ছেলে ও ছেলের বউ আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতো। কাউকে তা জানাইনি। পরে টিভিতে একটি প্রতিবেদন দেখে তারা আমার খোঁজ পায়। তারপর আর ফিরে যাইনি।’
ঈদের সময় সন্তানদের বেশি মনে পড়ে উল্লেখ করে জাহানার বলেন, ‘সন্তানদের কথা সব সময় মনে পড়ে। এক মূহূর্তের জন্যও ভুলতে পারি না। আমি তো ভুলতে পারিনি, তোরা ভুলে গেলি।’ শাড়ীর আঁচলে চোখ মুছতে থাকেন জাহানারা। পুনর্বাসন কেন্দ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে কেমন আছেন জানতে চাইলে জাহানারা বলেন, ‘এখানে আমি খুব ভালো আছি। নিজের মতই আছি। কেউ গালিও দেয় না। স্বাধীন জীবন। আর ছেলেমেয়ের কাছে থাকলে মনে হতো আমি শিকলবন্দি আছি। কেউ ভালো করে কথাও বলতো না।’
স্বামীর স্মৃতিচারণ করে জাহানারা বেগম জানান, ‘একাত্তরে স্বামী সিদ্দিকুর রহমান চাকরি করতেন পশ্চিম পাকিস্তানে। বিমান বাহিনীতে ওয়ারেন্ট অফিসার পদে ছিলেন। ওই সময়ে আমরা থাকতাম পাকিস্তানের করাচিতে। সেখানেই ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে।’
জাহানারা বেগম বলেন, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার তিন মাস আগে আমরা ছুটিতে বাংলাদেশে আসি। ছুটি শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয় যুদ্ধ। স্বামী নিখোঁজ হন। স্বাধীনতার পরে তার খোঁজ মেলে। ওই সময়ের কথা মনে হলে এখনো আমার গা শিউরে ওঠে। পাকিস্তানি আর্মিরা বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে থাকতো। দেখলেই গুলি চালাতো। এর মধ্যেই ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে রেশন তুলতে যেতাম। শুধু বাচ্চাদের জন্য তিনবেলা ঠিকমতো খাবারের জন্য জীবন বাজি রেখে গেছি ক্যান্টনমেন্টে। আজ সেই সন্তানরাই আমাকে ভুলে গেছে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাহানারা বলেন, ‘বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছিলাম। কিন্তু সেনাবাহিনী থেকে বলা হয়েছিল সন্তানদের কাছে ফেরত যেতে। আমি সন্তানদের কাছে যেতে চাইনি। সন্তানদের কাছে পাঠালে আত্মহত্যা করবো বলে জানিয়েছিলাম। পরে তাদের সহায়তায় পুনর্বাসন কেন্দ্রে আশ্রয় হয় আমার। আমার এক দুঃসম্পর্কের ভাই আমাকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখে যান।’ জাহানারা বলেন, ‘এখানে আসার আগে ছিলাম আমার ছোট ছেলে শামীমের কাছে। ছেলে ও ছেলের বউ আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতো। কাউকে তা জানাইনি। পরে টিভিতে একটি প্রতিবেদন দেখে তারা আমার খোঁজ পায়। তারপর আর ফিরে যাইনি।’
ঈদের সময় সন্তানদের বেশি মনে পড়ে উল্লেখ করে জাহানার বলেন, ‘সন্তানদের কথা সব সময় মনে পড়ে। এক মূহূর্তের জন্যও ভুলতে পারি না। আমি তো ভুলতে পারিনি, তোরা ভুলে গেলি।’ শাড়ীর আঁচলে চোখ মুছতে থাকেন জাহানারা। পুনর্বাসন কেন্দ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে কেমন আছেন জানতে চাইলে জাহানারা বলেন, ‘এখানে আমি খুব ভালো আছি। নিজের মতই আছি। কেউ গালিও দেয় না। স্বাধীন জীবন। আর ছেলেমেয়ের কাছে থাকলে মনে হতো আমি শিকলবন্দি আছি। কেউ ভালো করে কথাও বলতো না।’
স্বামীর স্মৃতিচারণ করে জাহানারা বেগম জানান, ‘একাত্তরে স্বামী সিদ্দিকুর রহমান চাকরি করতেন পশ্চিম পাকিস্তানে। বিমান বাহিনীতে ওয়ারেন্ট অফিসার পদে ছিলেন। ওই সময়ে আমরা থাকতাম পাকিস্তানের করাচিতে। সেখানেই ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে।’
জাহানারা বেগম বলেন, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার তিন মাস আগে আমরা ছুটিতে বাংলাদেশে আসি। ছুটি শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয় যুদ্ধ। স্বামী নিখোঁজ হন। স্বাধীনতার পরে তার খোঁজ মেলে। ওই সময়ের কথা মনে হলে এখনো আমার গা শিউরে ওঠে। পাকিস্তানি আর্মিরা বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে থাকতো। দেখলেই গুলি চালাতো। এর মধ্যেই ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে রেশন তুলতে যেতাম। শুধু বাচ্চাদের জন্য তিনবেলা ঠিকমতো খাবারের জন্য জীবন বাজি রেখে গেছি ক্যান্টনমেন্টে। আজ সেই সন্তানরাই আমাকে ভুলে গেছে।’
যুগান্তর প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলছেন জাহানারা
আফসোস করে জাহানারা বলেন, ‘স্বামী আমার জন্য অনেক কিছু রেখে গেলেও আমি চলি
বয়স্কভাতা নিয়ে। তা দিয়ে ভালমতো চলে না। কষ্ট করেই দিন কাটাতে হয় এই
বয়সে।’
জাহানারা বেগম বলেন, ‘যখন সেনাবাহিনীর সহায়তা চেয়েছিলাম, তখন তারা আমাকে আমার ছেলেদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্যও বলেছিল। আমি করিনি। কার নামে মামলা করবো, নিজে না খাইয়ে বড় করেছি তাদের জন্য।’ প্রশ্ন করেন জাহানারা।
জাহানারা জানান, নয় সন্তানের মধ্যে তার চার ছেলে-আলী, আমিনুল, হূমায়ুন ও শামীম। এদের মধ্যে আলী মারা গেছেন, আমিনুল বাংলাদেশ বেতার, হুমায়ুন সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে ও শামীম বিজি প্রেসে চাকরি করেন। পাঁচ মেয়ে- জাহান, পারভীন, রেখা, লাকী ও মিনা। এদের মধ্যে পারভীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা।
জাহানারা বেগম বলেন, ‘যখন সেনাবাহিনীর সহায়তা চেয়েছিলাম, তখন তারা আমাকে আমার ছেলেদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্যও বলেছিল। আমি করিনি। কার নামে মামলা করবো, নিজে না খাইয়ে বড় করেছি তাদের জন্য।’ প্রশ্ন করেন জাহানারা।
জাহানারা জানান, নয় সন্তানের মধ্যে তার চার ছেলে-আলী, আমিনুল, হূমায়ুন ও শামীম। এদের মধ্যে আলী মারা গেছেন, আমিনুল বাংলাদেশ বেতার, হুমায়ুন সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে ও শামীম বিজি প্রেসে চাকরি করেন। পাঁচ মেয়ে- জাহান, পারভীন, রেখা, লাকী ও মিনা। এদের মধ্যে পারভীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা।
No comments