রোহিঙ্গা সংকটের ভয়াবহতা
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সে দেশের সামরিক বাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা নির্যাতনকে জাতিগত নিধনের পাঠ্যবইয়ের উদাহরণ (টেক্সটবুক কেস) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রাদ-আল হুসেইন। এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি স্বীকার করে নিল জাতিসংঘ। বস্তুত রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নিপীড়ন মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বাড়ি বাড়ি ঢুকে নারী-শিশু নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে, তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, মেয়েদের তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। এসব ঘটনা কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে ঘটতে পারে না। আন্তর্জাতিক আদালতে এসব অপরাধের বিচার হওয়া উচিত। প্রশ্ন হল, কে নেবে সেই উদ্যোগ? রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত অপরাধের ভয়াবহতা জাতিসংঘ স্বীকার করে নিলেও এ অপরাধের বিচারের জন্য প্রয়োজন আন্তর্জাতিক উদ্যোগ। দুর্ভাগ্যজনকই বলতে হয়, এখন পর্যন্ত এর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কোনো দেশের কূটনীতিক রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনাকে গণহত্যা বলে উল্লেখ করলেও বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর প্রতিক্রিয়া মোটেই জোরালো নয়। বিশেষত মিয়ানমারের দুই নিকট-প্রতিবেশী ভারত ও চীনের প্রতিক্রিয়া সতর্কতামূলক। এ বাস্তবতায় রোহিঙ্গা সংকটের জটিলতা কাটছে না।
জানা গেছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আসন্ন ৭২তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যু জোরালোভাবে তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ধারণা করা হচ্ছে, এ ইস্যুতে সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বেশ উত্তপ্ত থাকবে। তবে আমরা জানি, এ ধরনের সংকট নিরসনে সাধারণ পরিষদের ক্ষমতা সামান্যই। এ সংক্রান্ত ক্ষমতার চাবিটি রয়েছে মূলত নিরাপত্তা পরিষদের হাতে। বস্তুত রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি আসতে হবে নিরাপত্তা পরিষদ থেকেই। তাই নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আমাদের আহ্বান, তারা যেন এমন সিদ্ধান্ত নেয় যাতে মিয়ানমার রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করে এবং বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষত স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ন্যায়সঙ্গত ভূমিকা প্রত্যাশা করি আমরা। এ ব্যাপারে আমাদেরও জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
No comments