লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ঘেরাও করে রেখেছে মিয়ানমারের সেনারা
আরকানের বুচিডং এলাকার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় তামিতে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা
মুসলিমকে ঘেরাও করে রেখেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ ছাড়া ওই রাজ্যের ১৯টি
জেলার হাজার হাজার রোহিঙ্গা সেনাসহ বিভিন্ন বাহিনীর নৃশংসতায় শিকার হয়ে
দুর্গম পাহাড়ি এলাকা, খরস্রোতা নদী, জলাভূমি, ধানক্ষেত পেরিয়ে ছুটছেন
নিরাপদ আশ্রয়ে। যারা জীবন বাঁচাতে নাফ নদীর তীর ও নোম্যান্স ল্যান্ডে জড়ো
হচ্ছেন তাদের ওপর বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা। এতে
অনেকেই হতাহত হচ্ছেন।
গত শনিবার ঈদুল আজহার দিন সীমান্তে এক রোহিঙ্গা দম্পতিকে গুলি করে হত্যা করেছে মিয়ানমারের সৈন্যরা। এই দম্পতি হলেনÑ ঢেঁকিবনিয়া ইউনিয়নের জাফর উল্লাহ (৩০) ও তার স্ত্রী আয়েশা খাতুন (২৬)। গত কয়েকদিন ধরে এ দম্পতি নোম্যান্স ল্যান্ডে ছিলেন। তাদের পরিণতি দেখে অনেক রোহিঙ্গাই প্রাণ বাঁচানোর সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরে ও নাফ নদীতে ঝাঁপ দিচ্ছেন। এদের বেশির ভাগই গন্তব্যে পৌঁছতে না পেরে নাফ নদীতে ডুবে মারা যাচ্ছেন। গত তিন দিনে নাফ নদীর খারাংখালী, মৌলভীবাজার, সাবরাং নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ ও হোয়াইক্যং পয়েন্টে আরো ২৯টি রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সোমবার সকালে নাফ নদী থেকে দুই রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত শনিবার স্থানীয়দের সহয়তায় টেকনাফ থানার পুলিশ শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদীর পয়েন্ট থেকে একটি ও হোয়াইক্যং নাফ নদীর পয়েন্ট থেকে দু’টি লাশ উদ্ধার করে। এর আগে গত শুক্রবার খারাংখালী ও মৌলভীবাজার, শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং ও টেকনাফ সদর পয়েন্টে ২৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদী থেকে আরো ২৩ জন রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে ৫৪ জন রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর লাশ উদ্ধার করা হলো। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছে অসংখ্য নারী ও শিশু। নাফ নদীর পানি ও বাতাসে লাশের পচাগন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।
অপর দিকে নাফ নদীর জলসীমার শূন্যরেখা থেকে সাত হাজার ৯২৯ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড। এর মধ্যে গতকাল সোমবার সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ থেকে দুই হাজার ৩০০ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে কোস্টগার্ড। এ সময় রোহিঙ্গা পরিবহনে ব্যবহৃত ৯টি নৌকাও জব্দ করা হয়। কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার জাফর ইমাম সজিব জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে রাতে দুই হাজার রোহিঙ্গাকে ও শাহপরীর দ্বীপ থেকে ৩০০ রোহিঙ্গাকে আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। এ সময় শাহপরীর দ্বীপ থেকে রোহিঙ্গাদের পরিবহনে ব্যবহৃত ৯টি নৌকা জব্দ করে কোস্টগার্ড। এ ছাড়া গত শনিবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে এক হাজার ৯১ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। গত শুক্রবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত টেকনাফের সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় চার হাজার ৫৩৮ জন রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফের দুই ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এসব রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করার সময় বিজিবি সদস্যরা বাধা দিয়ে তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠান।
সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) আর ওপারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কড়া পাহারায় থাকায় তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনো দিকেই যেতে পারছেন না অসহায় রোহিঙ্গারা। আর বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর নির্বিচার গুলির ভয়। ফলে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তাই সেখান থেকে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ খুঁজছে তারা।
সর্বশেষ তথ্যমতে, আরাকান রাজ্যের মংডু, বুথিদং, রাডিদংসহ রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে মিয়ানমার সরকার সাঁজোয়া বাহিনী মোতায়েন করে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালাচ্ছে। সাঁজোয়া বহরে নতুন করে যুক্ত হয়েছে হেলিকপ্টার গানশিপ, মর্টার শেলবাহী কামান ও মেশিনগান। এসব মারণাস্ত্র নিয়ে অসহায় রোহিঙ্গাদের ওপর সৈন্যরা হামলে পড়ছে। ইতোমধ্যে সৈন্যদের ধ্বংস করে দেয়া গ্রামগুলো থেকে বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে লাশ পচা গন্ধ। এরই মধ্যে ৪০০টি গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। নাফ নদীর সীমান্ত থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে ময়্যু পাহাড় ঘেরা জনবসতি থেকে পালিয়ে আসার সুযোগ নেই রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের। ফলে প্রাণ নিয়ে পালাতেও পারবে না এসব এলাকার রোহিঙ্গারা।
বাংলাদেশ সীমান্তের পাশের রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসতে পারলেও মংডুর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের রাথিদং ও বুচিডং জেলার রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই। কেননা সেনাবাহিনী দক্ষিণে ধাবিত হয়ে রোহিঙ্গাদের কোণঠাসা করে ফেলছে। এখন তাদের পালানোর একমাত্র জায়গা বঙ্গোপসাগর ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা। আর প্রাণ বাঁচাতে সাগরে ঝাঁপ দিয়েও লাভ নেই। কেননা সাগর পাড়ি দেয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। পাহাড়ে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করলেও সেখানে ওঁৎ পেতে আছে বর্মি সৈন্যরা। কাজেই জলেস্থলে কোথাও নিস্তার নেই রোহিঙ্গা মুসলিমদের। অনেকটা জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘের মতো অবস্থা তাদের। অর্থাৎ অবধারিত মৃত্যু।
সূত্র জানিয়েছেন, বুথিডংয়ের দক্ষিণ-পূর্বের তামি এলাকায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ঘেরাও করে রেখেছে সৈন্যরা। বিভিন্ন রোহিঙ্গাপল্লীতে সৈন্যরা অগ্নিসংযোগ ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর সময় সেসব গ্রামের হাজার হাজার রোহিঙ্গা তামিতে এসে আশ্রয় নেন। এদের সংখ্যা এক লাখ ৩০ হাজার হতে পারে বলে জানিয়েছে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। তারা আরো জানিয়েছে, অবরুদ্ধ রোহিঙ্গাদের তামি থেকে বের হয়ে যাওয়ার কোনো পথ খোলা নেই। চার দিকেই সৈন্য। সপ্তাহখানেক অবস্থানের ফলে সেখানে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। শুধু পানি পান করে তারা বেঁচে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্না আর স্বজন হারানো মা-বোনের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে পরিবেশ। তা ছাড়া, সৈন্যরা তাদের ওপর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে জেনে আতঙ্কে ভেঙে পড়ছেন রোহিঙ্গারা। অনেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার জন্য চলে যেতে চাইলেও পারছেন না।
ইতোমধ্যে আরাকানের মংডু, বুথিদং, রাথিদংসহ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকার গ্রাম-মহল্লা-পাড়াগুলোর বাড়িঘর জনশূন্য হয়ে পড়েছে। পালিয়ে আসা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সৈন্যরা রোহিঙ্গা পুরুষদের কেটে কেটে টুকরো অথবা গলা কেটে আর পিটিয়ে হত্যা করছে। আর নারীদের গণধর্ষণ করছে। অপর দিকে বুথিদং থানার আশপাশ এলাকার রোহিঙ্গা যুবকদের ধরতে ও সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে। গবাদি পশুর পাল লক্ষ্য করেও নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করছে সেনারা। অবশিষ্ট বাড়িগুলোতেও আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে সৈন্যরা। অনেক নারী ও তরুণীকে তুলে নিয়ে গেছে বাড়ি থেকে। প্রাণে বেঁচে আসা রোহিঙ্গারা আরকানে ভয়াবহ বর্বরতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, উগ্রপন্থী ধরার নামে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদেরকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করছে। আবার ঘরে ঘরে অবস্থান করলে সৈন্যরা আগুন ধরিয়ে দেয় ও নির্বিচারে গুলি করে গণহত্যা করছে।
গত শুক্রবার মিয়ানমারের সৈন্যদের হামলায় আহত শিশুসহ আরো আট রোহিঙ্গাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে একটি এনজিওর সহয়তায় উক্ত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে এক শিশুসহ সাতজন গুলিবিদ্ধ ও আরেকজন বিস্ফোরণে দগ্ধ। এরা হল, মো: জাহাঙ্গীর (২২), রহমত উল্লাহ (৮), মো: আনিছ (২৫), আমজাদ হোসেন(২৬), লিয়াকত (৬০), এরশাদ (২২), হাকিম উল্লাহ (২৮) ও বোমা বিস্ফোরণে দগ্ধ নবাব শরীফ (২৮)।
এই আটজনসহ মোট ৩৩ জন রোহিঙ্গা চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ২৬ আগস্ট এবং একজন বুধবার গভীর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
সীমান্তের ওপারের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ঈদের দিন শনিবার সকাল ১০টার দিকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কিছু লোক নিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর একটি দল রাখাইন রাজ্যের ঢেঁকিবুনিয়া এলাকায় ঢুকে বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসায় অভিযান শুরু করে। একপর্যায়ে জনশূন্য কয়েকটি গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঈদের নামাজের সময় এমন ঘটনা ঘটায় অনেকেই নামাজ ছেড়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন। এ সময় রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ চলে আসেন নো ম্যানস ল্যান্ডে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, ঢেঁকিবুনিয়া ইউনিয়নের চাকমাকাটা গ্রামের ইদ্রিস বাড়ি, ফকিরপাড়া গ্রামের মৌলভী হোসেন আহমদের বাড়িসহ ছয়টি ঘরে আগুন দেয়া হয়। এ ছাড়া মংডুর বলিবাজার, আয়াচর, কিয়ামং, জুম্বাই, নরিক্যাং, শীলখালী, বালুখালী এবং বুথিদং, রাথিদং জেলার কৈয়ারবিল, নাইচং, নাইসাপ্রোসহ বিভিন্ন গ্রামে রোহিঙ্গা বসতিতে আগুন দেয়া হয়। এ সময় এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে সৈন্যরা। নাইচাপ্রো গ্রামের রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, ‘সেনাবাহিনী খুব সকাল থেকে ‘নাইচাপ্রো’ গ্রামে তল্লাশি শুরু করে। ফলে কোরবানি দেয়া দূরের কথা, কেউ ঈদের নামাজও পড়তে পারিনি। অন্যদের মতো স্বজনদের নিয়ে সীমান্তের ওপারের একটি নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছি। সুযোগ পেলেই সীমান্তে চলে যাবো।’ একই গ্রামের আর এক রোহিঙ্গা নারী জানিয়েছেন, ‘ঈদের দিন খুব ভোরে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নো ম্যানস ল্যান্ডে এসেছি। ভয়ভীতি নিয়েও এত দিন গ্রামেই ছিলাম। তবে রাতে তার গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। তাই আজ চলে এসেছি।’
উখিয়ার পালংখালীর ইউপি সদস্য মোজাফফর আহমদ বলেন, ঈদের দিন সকাল থেকেই রাখাইন রাজ্যে দফায় দফায় গোলাগুলির শব্দ শুনেছি। বেলা ৩টার দিকেও এমন শব্দ শুনেছি। এ সময় সীমান্তের ওপারে রোহিঙ্গাদের চিৎকারও শোনা গেছে। রাখাইনের সীমান্ত এলাকায় ধোঁয়াও দেখেছি।’
প্রসঙ্গত, গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে একটি পুলিশ পোস্টে হামলা চালায় সে দেশের একটি বিদ্রোহী গ্রুপ। এতে ১২ পুলিশ সদস্যসহ রোহিঙ্গারা হতাহত হন। এ ঘটনার পর পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে শুরু করেন রোহিঙ্গারা। নাফ নদীর স্থলসীমানা পার হয়ে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা। গত বছরের ৯ অক্টোবরের পরও রাখাইন রাজ্যে একইরকম হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আসেন প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম। এরপর আন্তর্জাতিক মহল নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে মিয়ানমার সরকারের ওপর, কিন্তু এর কোনো তোয়াক্কা না করে আরকানে ফের সেনা মোতায়েন করলে বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সে দেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এতে উগ্রপন্থী ধরার নামে গত সপ্তাহের শুক্রবার থেকে পুরো আরকান রাজ্য জুড়ে চলছে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা।
এ দিকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারাও জামায়াতে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেননি। তবে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা জামায়াতে ঈদের নামাজ আদায় করেছে। তবে কোনো পশু কোরবানি করতে পারেননি তারা। উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে চরম খাদ্য সঙ্কট চলছে। পালিয়ে আসার সময় তারা যে সহায় সম্পদ এনছিলেন সেগুলো সীমান্তের দুর্বৃত্তরা লুট করেছে। অনেকই অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ইতোমধ্যে বালুখালি ক্যাম্পে অনাহারে মারা গেছেন এক রোহিঙ্গা নারী। দুই হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শিশু পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্যাম্পের বাসিন্দারা।
৩ দিনে ৩১ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার : টেকনাফের নাফ নদী থেকে আরো দুই রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে লাশ দু’টি উদ্ধার করা হয়। এর আগে ঈদের দিন বিকেলে টেকনাফের হোয়াইক্যং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন নাফ নদীতে ২১ জন রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা ডুবে যায়। এতে মা ও মেয়ে মারা যায়। চারটি শিশু নিখোঁজ রয়েছে। এ সময় মুমূর্ষ একটি শিশুকে কুতুপালং এনজিও পরিচালিত হাসপাতালে ভর্তি এবং মা-মেয়ের লাশ হোয়াইক্যংয়ে দাফন করা হয়েছে। একই দিনে শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদীর মোহনা থেকে এক রোহিঙ্গা নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উখিয়ার রেজু আমতলী সীমান্তে আরো এক রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়। অপর দিকে শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে নাফ নদীর খারাংখালী, মৌলভীবাজার, গোদারপাড়া, সাবরাং, শাহপরী দ্বীপ জালিয়াপাড়া ও টেকনাফ সদরের বেড়িবাঁধের নিকট থেকে পৃথকভাবে ২৬ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুর লাশ উদ্ধার করে টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রণয় চাকমা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, তার এবং হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে লাশগুলো উদ্ধার করে যথাযথ মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। এর আগে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ থেকে পৃথকভাবে ২৩ নারী ও শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে গত বুধবার থেকে এখন পর্যন্ত নাফ নদী থেকে ৫৪ জন রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
ঈদের দিন শনিবার সন্ধ্যায় হোয়াইক্যং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন নাফ নদীতে নৌকা ডুবে মারা যাওয়া স্ত্রী ও মেয়ের লাশসহ আসা মিয়ানমারের মংডু থানাধীন মাংগালার পালংখালী গ্রামের সৈয়দ উল্লাহ (৬৩) জানান, সকাল ১০টার দিকে দুইটি নৌকায় করে ২৮ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। কুমিরখালী অতিক্রম করার পর ২১ জন রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাটি ডুবে যায়। খোঁজাখুঁজির পর তার স্ত্রী ফাতেমা খাতুন (৬০) এবং মেয়ে মিনারা আক্তারের (২২) লাশ পাওয়া গেলেও সাথে থাকা নিকটাত্মীয় চার শিশুর লাশ পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ চার শিশুর মধ্যে তিনজনই একই পরিবারের। এরা হলোÑ মৃত রমজান হাকিমের ছেলে মো: তুহাদ (৮), আসমত আরা (৬), জরিদা বেগম (৪)। নিখোঁজ অপর শিশু হলো নুরুল ইসলামের ছেলে নুর কাবা (৫)। এ ঘটনায় মুমূর্ষ ও অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে আনা শিশু সুফাইরা বেগমকে (৮) কুতুপালং এনজিও পরিচালিত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় দু’টি লাশ এবং মুমূর্ষ ও অজ্ঞান একটি শিশু নিয়ে রোহিঙ্গার দলটি টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন নাফ নদীর পাড়ে পৌঁছলে স্থানীয় লোকজন বিজিবি ও পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ ও বিজিবি পৌঁছে এদের উদ্ধার করে স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তফা লালু চৌধুরীর নিকট হস্তান্তর করেন। পরে মা-মেয়ের লাশ দাফন করা হয়।
টেকনাফে এক রোহিঙ্গা নারীর মৃত্যু : টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারী এক রোহিঙ্গা নারী মারা গেছেন। তার নাম মহমুদা বেগম (৪৫)। স্বামীর নাম জালাল আহমদ। তিনি মিয়ানমারের মংডু থানার বাসিন্দা।
জানা যায়, মাহমুদা বেগম পরিবারের সাথে বাংলাদেশে এসে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উঞ্চিপ্রাং সরকারি প্রাইমারি স্কুলে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে তাকে নিকটবর্তী রইক্ষংয়ে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে গতকাল দুপুরে তিনি মারা যান।
হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির আইসি উপপুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ মহির উদ্দিন খান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। মহিলার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
৩ ট্রলার ধ্বংস ও ৩২ দালালকে সাজা : টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে আর্থিক সুবিধা নিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহযোগিতা করার দায়ে ৩২ জন দালালকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। একজনকে ১৫ দিনের, তিনজনকে এক মাসের এবং ২৮ জনকে ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া শাহপরীর দ্বীপে বিক্ষুদ্ধ জনতা তিনটি ট্রলার পুড়িয়ে দিয়েছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক এবং টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রণয় চাকমা ১-৩ সেপ্টেম্বর পৃথকভাবে এই দণ্ডাদেশ প্রদান করেন।
১৫ দিনের দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন শাহপরীর দ্বীপের মাঝেরপাড়ার নুর হোসেনের ছেলে মো: শরীফ (৩০)।
এ ছাড়া শাহপরীর দ্বীপের আবুল হোসেনের ছেলে মোস্তাক আহমদ (৪২), মৃত ওমর আলীর ছেলে মো: ফয়েজ (৩৫) এবং কালা মিয়ার ছেলে মো: হাছান (২২) কে এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
ছয় মাস করে বিনাশ্রম দণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মৃত আমির হোসেনের ছেলে মো: হাসান (৩৩), হোয়াইক্যং উঞ্চিপ্রাং নুরুল ইসলামের ছেলে মো: বাবুল (৩৫), চন্দনাইশ গাছবাড়িয়া উত্তর কাশিমপুর মৃত সুলতান আহমদের ছেলে আবু তালেব (৫৬), রাউজান আজিমপুর মৃত আজিজুল হকের ছেলে হাসানুল হক (৩৮), টেকনাফের হ্নীলার মৌলভীবাজার এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মো: রফিক (২৫), হোয়াইক্যং পশ্চিম মহেশখালীয়াপাড়ার মো: শরীফের ছেলে আজিজুল হক (২১), টেকনাফ পৌরসভার পুরান পল্লানপাড়ার মকবুল আহমদের ছেলে ছৈয়দ হোসেন (২৪), শাহপরীর দ্বীপের আলী হোছেনের ছেলে কামাল হোছেন (৪৫), কবির আহমদের ছেলে দিল মোহাম্মদ (২৫), মৃত মকবুল আহমদের ছেলে নুর আহমদ (৫৮), মৃত ছিদ্দিক আহমদের ছেলে আবুল কাসেম (৪৮), মৃত আবুল হাসেম ভুইয়ার ছেলে আলী হোসেন (৪৫), মৃত আলী হোসেনের ছেলে কাদের হোসেন (৪৫), সুনা মিয়ার ছেলে হারুনুর রশিদ (২৫), হাবিবুল্লাহর ছেলে সানাউল্লাহ (১৯), মৃত সুলতান আহমদের ছেলে নুরুল হোসেন (৫৫), নুরুল আলমের ছেলে মো: রফিক (৩২), টেকনাফ সদর ইউনিয়নের উত্তর লম্বরী গ্রামের হাবিবুল্লাহর ছেলে ছৈয়দ কাসেম (৫৫), জাফর আলমের ছেলে শাহাবুদ্দিন (১৯), মৃত মিরাজের ছেলে আবদুল আমিন (২৪), হামিদুল হকের ছেলে গফুরুল ইসলাম (২২), সেন্টমার্টিনদ্বীপ পুর্বপাড়া কালা মিয়ার ছেলে মো: হোসেন (৫১), শামসুল ইসলামের ছেলে মো: হারুন (৩২), দক্ষিণপাড়ার মো: হাশেমের ছেলে রফিক আহমদ (৩৫), হ্নীলা ইউনিয়নের পূর্ব লেদা গ্রামের মাস্টার হাফেজ আহমদের ছেলে শাহীন উদ্দিন (২৬), নবী হোছেনের ছেলে আবদুল্লাহ (২৪), আমির হামজার ছেলে আবুল হোছেন (২১)।
গত শনিবার ঈদুল আজহার দিন সীমান্তে এক রোহিঙ্গা দম্পতিকে গুলি করে হত্যা করেছে মিয়ানমারের সৈন্যরা। এই দম্পতি হলেনÑ ঢেঁকিবনিয়া ইউনিয়নের জাফর উল্লাহ (৩০) ও তার স্ত্রী আয়েশা খাতুন (২৬)। গত কয়েকদিন ধরে এ দম্পতি নোম্যান্স ল্যান্ডে ছিলেন। তাদের পরিণতি দেখে অনেক রোহিঙ্গাই প্রাণ বাঁচানোর সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরে ও নাফ নদীতে ঝাঁপ দিচ্ছেন। এদের বেশির ভাগই গন্তব্যে পৌঁছতে না পেরে নাফ নদীতে ডুবে মারা যাচ্ছেন। গত তিন দিনে নাফ নদীর খারাংখালী, মৌলভীবাজার, সাবরাং নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ ও হোয়াইক্যং পয়েন্টে আরো ২৯টি রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সোমবার সকালে নাফ নদী থেকে দুই রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত শনিবার স্থানীয়দের সহয়তায় টেকনাফ থানার পুলিশ শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদীর পয়েন্ট থেকে একটি ও হোয়াইক্যং নাফ নদীর পয়েন্ট থেকে দু’টি লাশ উদ্ধার করে। এর আগে গত শুক্রবার খারাংখালী ও মৌলভীবাজার, শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং ও টেকনাফ সদর পয়েন্টে ২৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদী থেকে আরো ২৩ জন রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে ৫৪ জন রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর লাশ উদ্ধার করা হলো। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছে অসংখ্য নারী ও শিশু। নাফ নদীর পানি ও বাতাসে লাশের পচাগন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।
অপর দিকে নাফ নদীর জলসীমার শূন্যরেখা থেকে সাত হাজার ৯২৯ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড। এর মধ্যে গতকাল সোমবার সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ থেকে দুই হাজার ৩০০ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে কোস্টগার্ড। এ সময় রোহিঙ্গা পরিবহনে ব্যবহৃত ৯টি নৌকাও জব্দ করা হয়। কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার জাফর ইমাম সজিব জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে রাতে দুই হাজার রোহিঙ্গাকে ও শাহপরীর দ্বীপ থেকে ৩০০ রোহিঙ্গাকে আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। এ সময় শাহপরীর দ্বীপ থেকে রোহিঙ্গাদের পরিবহনে ব্যবহৃত ৯টি নৌকা জব্দ করে কোস্টগার্ড। এ ছাড়া গত শনিবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে এক হাজার ৯১ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। গত শুক্রবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত টেকনাফের সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় চার হাজার ৫৩৮ জন রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফের দুই ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এসব রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করার সময় বিজিবি সদস্যরা বাধা দিয়ে তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠান।
সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) আর ওপারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কড়া পাহারায় থাকায় তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনো দিকেই যেতে পারছেন না অসহায় রোহিঙ্গারা। আর বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর নির্বিচার গুলির ভয়। ফলে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তাই সেখান থেকে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ খুঁজছে তারা।
সর্বশেষ তথ্যমতে, আরাকান রাজ্যের মংডু, বুথিদং, রাডিদংসহ রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে মিয়ানমার সরকার সাঁজোয়া বাহিনী মোতায়েন করে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালাচ্ছে। সাঁজোয়া বহরে নতুন করে যুক্ত হয়েছে হেলিকপ্টার গানশিপ, মর্টার শেলবাহী কামান ও মেশিনগান। এসব মারণাস্ত্র নিয়ে অসহায় রোহিঙ্গাদের ওপর সৈন্যরা হামলে পড়ছে। ইতোমধ্যে সৈন্যদের ধ্বংস করে দেয়া গ্রামগুলো থেকে বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে লাশ পচা গন্ধ। এরই মধ্যে ৪০০টি গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। নাফ নদীর সীমান্ত থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে ময়্যু পাহাড় ঘেরা জনবসতি থেকে পালিয়ে আসার সুযোগ নেই রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের। ফলে প্রাণ নিয়ে পালাতেও পারবে না এসব এলাকার রোহিঙ্গারা।
বাংলাদেশ সীমান্তের পাশের রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসতে পারলেও মংডুর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের রাথিদং ও বুচিডং জেলার রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই। কেননা সেনাবাহিনী দক্ষিণে ধাবিত হয়ে রোহিঙ্গাদের কোণঠাসা করে ফেলছে। এখন তাদের পালানোর একমাত্র জায়গা বঙ্গোপসাগর ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা। আর প্রাণ বাঁচাতে সাগরে ঝাঁপ দিয়েও লাভ নেই। কেননা সাগর পাড়ি দেয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। পাহাড়ে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করলেও সেখানে ওঁৎ পেতে আছে বর্মি সৈন্যরা। কাজেই জলেস্থলে কোথাও নিস্তার নেই রোহিঙ্গা মুসলিমদের। অনেকটা জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘের মতো অবস্থা তাদের। অর্থাৎ অবধারিত মৃত্যু।
সূত্র জানিয়েছেন, বুথিডংয়ের দক্ষিণ-পূর্বের তামি এলাকায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ঘেরাও করে রেখেছে সৈন্যরা। বিভিন্ন রোহিঙ্গাপল্লীতে সৈন্যরা অগ্নিসংযোগ ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর সময় সেসব গ্রামের হাজার হাজার রোহিঙ্গা তামিতে এসে আশ্রয় নেন। এদের সংখ্যা এক লাখ ৩০ হাজার হতে পারে বলে জানিয়েছে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। তারা আরো জানিয়েছে, অবরুদ্ধ রোহিঙ্গাদের তামি থেকে বের হয়ে যাওয়ার কোনো পথ খোলা নেই। চার দিকেই সৈন্য। সপ্তাহখানেক অবস্থানের ফলে সেখানে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। শুধু পানি পান করে তারা বেঁচে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্না আর স্বজন হারানো মা-বোনের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে পরিবেশ। তা ছাড়া, সৈন্যরা তাদের ওপর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে জেনে আতঙ্কে ভেঙে পড়ছেন রোহিঙ্গারা। অনেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার জন্য চলে যেতে চাইলেও পারছেন না।
ইতোমধ্যে আরাকানের মংডু, বুথিদং, রাথিদংসহ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকার গ্রাম-মহল্লা-পাড়াগুলোর বাড়িঘর জনশূন্য হয়ে পড়েছে। পালিয়ে আসা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সৈন্যরা রোহিঙ্গা পুরুষদের কেটে কেটে টুকরো অথবা গলা কেটে আর পিটিয়ে হত্যা করছে। আর নারীদের গণধর্ষণ করছে। অপর দিকে বুথিদং থানার আশপাশ এলাকার রোহিঙ্গা যুবকদের ধরতে ও সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে। গবাদি পশুর পাল লক্ষ্য করেও নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করছে সেনারা। অবশিষ্ট বাড়িগুলোতেও আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে সৈন্যরা। অনেক নারী ও তরুণীকে তুলে নিয়ে গেছে বাড়ি থেকে। প্রাণে বেঁচে আসা রোহিঙ্গারা আরকানে ভয়াবহ বর্বরতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, উগ্রপন্থী ধরার নামে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদেরকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করছে। আবার ঘরে ঘরে অবস্থান করলে সৈন্যরা আগুন ধরিয়ে দেয় ও নির্বিচারে গুলি করে গণহত্যা করছে।
গত শুক্রবার মিয়ানমারের সৈন্যদের হামলায় আহত শিশুসহ আরো আট রোহিঙ্গাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে একটি এনজিওর সহয়তায় উক্ত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে এক শিশুসহ সাতজন গুলিবিদ্ধ ও আরেকজন বিস্ফোরণে দগ্ধ। এরা হল, মো: জাহাঙ্গীর (২২), রহমত উল্লাহ (৮), মো: আনিছ (২৫), আমজাদ হোসেন(২৬), লিয়াকত (৬০), এরশাদ (২২), হাকিম উল্লাহ (২৮) ও বোমা বিস্ফোরণে দগ্ধ নবাব শরীফ (২৮)।
এই আটজনসহ মোট ৩৩ জন রোহিঙ্গা চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ২৬ আগস্ট এবং একজন বুধবার গভীর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
সীমান্তের ওপারের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ঈদের দিন শনিবার সকাল ১০টার দিকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কিছু লোক নিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর একটি দল রাখাইন রাজ্যের ঢেঁকিবুনিয়া এলাকায় ঢুকে বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসায় অভিযান শুরু করে। একপর্যায়ে জনশূন্য কয়েকটি গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঈদের নামাজের সময় এমন ঘটনা ঘটায় অনেকেই নামাজ ছেড়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন। এ সময় রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ চলে আসেন নো ম্যানস ল্যান্ডে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, ঢেঁকিবুনিয়া ইউনিয়নের চাকমাকাটা গ্রামের ইদ্রিস বাড়ি, ফকিরপাড়া গ্রামের মৌলভী হোসেন আহমদের বাড়িসহ ছয়টি ঘরে আগুন দেয়া হয়। এ ছাড়া মংডুর বলিবাজার, আয়াচর, কিয়ামং, জুম্বাই, নরিক্যাং, শীলখালী, বালুখালী এবং বুথিদং, রাথিদং জেলার কৈয়ারবিল, নাইচং, নাইসাপ্রোসহ বিভিন্ন গ্রামে রোহিঙ্গা বসতিতে আগুন দেয়া হয়। এ সময় এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে সৈন্যরা। নাইচাপ্রো গ্রামের রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, ‘সেনাবাহিনী খুব সকাল থেকে ‘নাইচাপ্রো’ গ্রামে তল্লাশি শুরু করে। ফলে কোরবানি দেয়া দূরের কথা, কেউ ঈদের নামাজও পড়তে পারিনি। অন্যদের মতো স্বজনদের নিয়ে সীমান্তের ওপারের একটি নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছি। সুযোগ পেলেই সীমান্তে চলে যাবো।’ একই গ্রামের আর এক রোহিঙ্গা নারী জানিয়েছেন, ‘ঈদের দিন খুব ভোরে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নো ম্যানস ল্যান্ডে এসেছি। ভয়ভীতি নিয়েও এত দিন গ্রামেই ছিলাম। তবে রাতে তার গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। তাই আজ চলে এসেছি।’
উখিয়ার পালংখালীর ইউপি সদস্য মোজাফফর আহমদ বলেন, ঈদের দিন সকাল থেকেই রাখাইন রাজ্যে দফায় দফায় গোলাগুলির শব্দ শুনেছি। বেলা ৩টার দিকেও এমন শব্দ শুনেছি। এ সময় সীমান্তের ওপারে রোহিঙ্গাদের চিৎকারও শোনা গেছে। রাখাইনের সীমান্ত এলাকায় ধোঁয়াও দেখেছি।’
প্রসঙ্গত, গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে একটি পুলিশ পোস্টে হামলা চালায় সে দেশের একটি বিদ্রোহী গ্রুপ। এতে ১২ পুলিশ সদস্যসহ রোহিঙ্গারা হতাহত হন। এ ঘটনার পর পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে শুরু করেন রোহিঙ্গারা। নাফ নদীর স্থলসীমানা পার হয়ে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা। গত বছরের ৯ অক্টোবরের পরও রাখাইন রাজ্যে একইরকম হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আসেন প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম। এরপর আন্তর্জাতিক মহল নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে মিয়ানমার সরকারের ওপর, কিন্তু এর কোনো তোয়াক্কা না করে আরকানে ফের সেনা মোতায়েন করলে বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সে দেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এতে উগ্রপন্থী ধরার নামে গত সপ্তাহের শুক্রবার থেকে পুরো আরকান রাজ্য জুড়ে চলছে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা।
এ দিকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারাও জামায়াতে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেননি। তবে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা জামায়াতে ঈদের নামাজ আদায় করেছে। তবে কোনো পশু কোরবানি করতে পারেননি তারা। উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে চরম খাদ্য সঙ্কট চলছে। পালিয়ে আসার সময় তারা যে সহায় সম্পদ এনছিলেন সেগুলো সীমান্তের দুর্বৃত্তরা লুট করেছে। অনেকই অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ইতোমধ্যে বালুখালি ক্যাম্পে অনাহারে মারা গেছেন এক রোহিঙ্গা নারী। দুই হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শিশু পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্যাম্পের বাসিন্দারা।
৩ দিনে ৩১ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার : টেকনাফের নাফ নদী থেকে আরো দুই রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে লাশ দু’টি উদ্ধার করা হয়। এর আগে ঈদের দিন বিকেলে টেকনাফের হোয়াইক্যং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন নাফ নদীতে ২১ জন রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা ডুবে যায়। এতে মা ও মেয়ে মারা যায়। চারটি শিশু নিখোঁজ রয়েছে। এ সময় মুমূর্ষ একটি শিশুকে কুতুপালং এনজিও পরিচালিত হাসপাতালে ভর্তি এবং মা-মেয়ের লাশ হোয়াইক্যংয়ে দাফন করা হয়েছে। একই দিনে শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদীর মোহনা থেকে এক রোহিঙ্গা নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উখিয়ার রেজু আমতলী সীমান্তে আরো এক রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়। অপর দিকে শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে নাফ নদীর খারাংখালী, মৌলভীবাজার, গোদারপাড়া, সাবরাং, শাহপরী দ্বীপ জালিয়াপাড়া ও টেকনাফ সদরের বেড়িবাঁধের নিকট থেকে পৃথকভাবে ২৬ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুর লাশ উদ্ধার করে টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রণয় চাকমা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, তার এবং হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে লাশগুলো উদ্ধার করে যথাযথ মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। এর আগে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ থেকে পৃথকভাবে ২৩ নারী ও শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে গত বুধবার থেকে এখন পর্যন্ত নাফ নদী থেকে ৫৪ জন রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
ঈদের দিন শনিবার সন্ধ্যায় হোয়াইক্যং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন নাফ নদীতে নৌকা ডুবে মারা যাওয়া স্ত্রী ও মেয়ের লাশসহ আসা মিয়ানমারের মংডু থানাধীন মাংগালার পালংখালী গ্রামের সৈয়দ উল্লাহ (৬৩) জানান, সকাল ১০টার দিকে দুইটি নৌকায় করে ২৮ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। কুমিরখালী অতিক্রম করার পর ২১ জন রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাটি ডুবে যায়। খোঁজাখুঁজির পর তার স্ত্রী ফাতেমা খাতুন (৬০) এবং মেয়ে মিনারা আক্তারের (২২) লাশ পাওয়া গেলেও সাথে থাকা নিকটাত্মীয় চার শিশুর লাশ পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ চার শিশুর মধ্যে তিনজনই একই পরিবারের। এরা হলোÑ মৃত রমজান হাকিমের ছেলে মো: তুহাদ (৮), আসমত আরা (৬), জরিদা বেগম (৪)। নিখোঁজ অপর শিশু হলো নুরুল ইসলামের ছেলে নুর কাবা (৫)। এ ঘটনায় মুমূর্ষ ও অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে আনা শিশু সুফাইরা বেগমকে (৮) কুতুপালং এনজিও পরিচালিত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় দু’টি লাশ এবং মুমূর্ষ ও অজ্ঞান একটি শিশু নিয়ে রোহিঙ্গার দলটি টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন নাফ নদীর পাড়ে পৌঁছলে স্থানীয় লোকজন বিজিবি ও পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ ও বিজিবি পৌঁছে এদের উদ্ধার করে স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তফা লালু চৌধুরীর নিকট হস্তান্তর করেন। পরে মা-মেয়ের লাশ দাফন করা হয়।
টেকনাফে এক রোহিঙ্গা নারীর মৃত্যু : টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারী এক রোহিঙ্গা নারী মারা গেছেন। তার নাম মহমুদা বেগম (৪৫)। স্বামীর নাম জালাল আহমদ। তিনি মিয়ানমারের মংডু থানার বাসিন্দা।
জানা যায়, মাহমুদা বেগম পরিবারের সাথে বাংলাদেশে এসে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উঞ্চিপ্রাং সরকারি প্রাইমারি স্কুলে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে তাকে নিকটবর্তী রইক্ষংয়ে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে গতকাল দুপুরে তিনি মারা যান।
হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির আইসি উপপুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ মহির উদ্দিন খান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। মহিলার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
৩ ট্রলার ধ্বংস ও ৩২ দালালকে সাজা : টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে আর্থিক সুবিধা নিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহযোগিতা করার দায়ে ৩২ জন দালালকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। একজনকে ১৫ দিনের, তিনজনকে এক মাসের এবং ২৮ জনকে ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া শাহপরীর দ্বীপে বিক্ষুদ্ধ জনতা তিনটি ট্রলার পুড়িয়ে দিয়েছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক এবং টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রণয় চাকমা ১-৩ সেপ্টেম্বর পৃথকভাবে এই দণ্ডাদেশ প্রদান করেন।
১৫ দিনের দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন শাহপরীর দ্বীপের মাঝেরপাড়ার নুর হোসেনের ছেলে মো: শরীফ (৩০)।
এ ছাড়া শাহপরীর দ্বীপের আবুল হোসেনের ছেলে মোস্তাক আহমদ (৪২), মৃত ওমর আলীর ছেলে মো: ফয়েজ (৩৫) এবং কালা মিয়ার ছেলে মো: হাছান (২২) কে এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
ছয় মাস করে বিনাশ্রম দণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মৃত আমির হোসেনের ছেলে মো: হাসান (৩৩), হোয়াইক্যং উঞ্চিপ্রাং নুরুল ইসলামের ছেলে মো: বাবুল (৩৫), চন্দনাইশ গাছবাড়িয়া উত্তর কাশিমপুর মৃত সুলতান আহমদের ছেলে আবু তালেব (৫৬), রাউজান আজিমপুর মৃত আজিজুল হকের ছেলে হাসানুল হক (৩৮), টেকনাফের হ্নীলার মৌলভীবাজার এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মো: রফিক (২৫), হোয়াইক্যং পশ্চিম মহেশখালীয়াপাড়ার মো: শরীফের ছেলে আজিজুল হক (২১), টেকনাফ পৌরসভার পুরান পল্লানপাড়ার মকবুল আহমদের ছেলে ছৈয়দ হোসেন (২৪), শাহপরীর দ্বীপের আলী হোছেনের ছেলে কামাল হোছেন (৪৫), কবির আহমদের ছেলে দিল মোহাম্মদ (২৫), মৃত মকবুল আহমদের ছেলে নুর আহমদ (৫৮), মৃত ছিদ্দিক আহমদের ছেলে আবুল কাসেম (৪৮), মৃত আবুল হাসেম ভুইয়ার ছেলে আলী হোসেন (৪৫), মৃত আলী হোসেনের ছেলে কাদের হোসেন (৪৫), সুনা মিয়ার ছেলে হারুনুর রশিদ (২৫), হাবিবুল্লাহর ছেলে সানাউল্লাহ (১৯), মৃত সুলতান আহমদের ছেলে নুরুল হোসেন (৫৫), নুরুল আলমের ছেলে মো: রফিক (৩২), টেকনাফ সদর ইউনিয়নের উত্তর লম্বরী গ্রামের হাবিবুল্লাহর ছেলে ছৈয়দ কাসেম (৫৫), জাফর আলমের ছেলে শাহাবুদ্দিন (১৯), মৃত মিরাজের ছেলে আবদুল আমিন (২৪), হামিদুল হকের ছেলে গফুরুল ইসলাম (২২), সেন্টমার্টিনদ্বীপ পুর্বপাড়া কালা মিয়ার ছেলে মো: হোসেন (৫১), শামসুল ইসলামের ছেলে মো: হারুন (৩২), দক্ষিণপাড়ার মো: হাশেমের ছেলে রফিক আহমদ (৩৫), হ্নীলা ইউনিয়নের পূর্ব লেদা গ্রামের মাস্টার হাফেজ আহমদের ছেলে শাহীন উদ্দিন (২৬), নবী হোছেনের ছেলে আবদুল্লাহ (২৪), আমির হামজার ছেলে আবুল হোছেন (২১)।
No comments