আশার আলো দেখছে বিএনপি
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে খালেদা জিয়ার
বৈঠকে এক ধরনের আশাবাদ তৈরি হয়েছে বিএনপিতে। দলটি মনে করছে, সংসদের বিরোধী
দল না হওয়া সত্ত্বেও বিএনপির সঙ্গে সুষমার বৈঠকের তাৎপর্য রয়েছে।
তা ছাড়া ভারতীয় কোনো শীর্ষস্থানীয় নেতার মুখে বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক
নির্বাচনের কথা উঠে আসার ঘটনাও এটি প্রথম, যা এ দেশে ভারতের বার্তা বা
অবস্থান বলেই বিবেচনা করেন দলটির নেতারা।
শুধু তাই নয়; ভারত বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে
চায়—সুষমা স্বরাজের এমন বক্তব্য ভারতের আগের সরকারের অবস্থান থেকে সরে আসা
বলেও মনে করে বিএনপি। ফলে ওই বৈঠকের ফলাফল নিয়ে দলটি সন্তুষ্ট বলে খোঁজ
নিয়ে জানা গেছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ মনে করেন, সদ্য সফর করে যাওয়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে বিএনপির খুশি তথা আশাবাদী হওয়ার কারণ রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা এ দেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেছেন। তিনি এ দেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চার ওপরও জোর দিয়েছেন। তাঁর এ বক্তব্য ভারতের আগের অবস্থান থেকে সরে আসারই ইঙ্গিত বহন করে।
আন্তর্জাতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির কিছুটা স্বস্তিবোধ করাটা স্বাভাবিক। কারণ এটি এখন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে যে এবার ভারতও এ দেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে আগ্রহী।
অর্থাৎ ডিম তারা এক ঝুড়িতে রাখতে রাজি নয়। এর অর্থই হলো, আগামীতে সব দল তথা জনগণের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু একটি নির্বাচন ভারত দেখতে চায়; যেটি বিএনপিরও দাবি। বিএনপি নেতাদের মধ্যেও গতকাল স্বস্তির ভাব দেখা গেছে। দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে ভারতের অবস্থান ব্যক্ত করার অর্থই তারা এ দেশে আগামীতে নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকবে। তিনি বলেন, কোনো বিশেষ দলের পক্ষে না থেকে ভারত এ দেশের জনগণের সঙ্গে আছে—এটিই আমাদের কাছে মনে হয়েছে। ফলে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির খুশি হওয়ার কারণ রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীও মনে করেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তাঁদের মতে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলার অর্থ, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে এ দেশে বার্তা দেওয়া।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আগে ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশে সর্বোচ্চসংখ্যক দলকে ভারত নির্বাচনে দেখতে চায়। ’ ওই সময় বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের অবস্থান জানতে চাইলে দেশটির বিশেষ দূত হিসেবে ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফরে আসা সুজাতা সিং ওই মন্তব্য করেন। তিনি তখন বলেন, নির্বাচনটা হতে হবে তফসিল অনুযায়ী। বস্তুত, ওই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন তথা আওয়ামী লীগ সরকারকে ভারতের সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি জনমনে স্পষ্ট হয় বলে অনেকের ধারণা। কেননা বিশ্বের ক্ষমতাধর বলে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তখনকার অবস্থান ছিল ‘সব দলের অংশগ্রহণে’ এ দেশে সুষ্ঠু একটি নির্বাচন। একমাত্র ভারতই তখন সব দলের বদলে ‘সর্বোচ্চসংখ্যক’ দলের কথা বলে। আর এ ঘটনায় ভারতের তখনকার কংগ্রেস সরকারের ওপর প্রচণ্ড রুষ্ট হয় বিএনপি। দলটির কয়েকজন নেতাকে ওই সময় প্রকাশ্যেই ভারতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।
অবশ্য ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে চেষ্টা শুরু করে। ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে বিএনপির পক্ষ থেকে ওই চেষ্টা আরো বাড়ানো হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে এলে তাঁর সঙ্গেও বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। সর্বশেষ রবিবার সোনারগাঁও হোটেলে খালেদা জিয়াসহ বিএনপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন দেশটির বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। যৌথ পরামর্শক কমিশনের সভায় যোগদানের জন্য ঢাকায় এলেও সুষমা স্বরাজের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের সম্ভাবনার বিষয়টি আলোচনায় ছিল গত প্রায় এক মাস ধরেই। খালেদা জিয়া লন্ডনে থাকায় কূটনৈতিক যোগাযোগও অনেকটা সেখানেই সম্পন্ন হয়। তবে খালেদার সঙ্গে সুষমার দেখা হবে কি না এ নিয়ে নানা আলোচনা ঘুরপাক খায় বৈঠকের আগের দিন পর্যন্ত।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি কেন বর্জন করেছে তার কারণ বিস্তারিতভাবে বিএনপি নেতারা সুষমা স্বরাজকে জানান। সূত্র মতে, পরিচয় পর্বের পর প্রথমেই একটি লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন খালেদা জিয়া। বক্তব্যে তিনি বিভিন্ন সময় ভারত সরকারের সঙ্গে ক্ষমতায় থাকাকালে তাঁর সরকারের সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোতে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের দায়িত্ব রয়েছে।
এরপর আলাপচারিতায় সুষমা স্বরাজ জানতে চান—কী কারণে বিএনপি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছে? বিএনপির জনপ্রিয়তার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এমনও বলেন, নির্বাচনে অংশ নিলে ফলাফল তো ভিন্নও হতে পারত।
সূত্র মতে, এই পর্যায়ে সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন অনুমতি নিয়ে ৫ জানুয়ারির পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে কী অবস্থা ও প্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল এবং কিভাবে ২০০৮ সালে ক্ষমতা পেয়ে ওই ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাতিল করা হয়েছে তার পুরো ঘটনা তুলে ধরেন।
বিগত জোট সরকারের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ড. মোশাররফের সঙ্গে একই সময় ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সুসম্পর্ক রয়েছে; যা বৈঠক শুরুর পরিচয় পর্বে উল্লেখ করেন সুষমা। তাঁরা দুজনই একসঙ্গে ২০০৩ সালে জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে অংশ নেন। ওই সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ড. মোশাররফ।
সহায়ক সরকারের দাবির যৌক্তিকরা তুলে ধরতে গিয়ে ড. মোশাররফ এ-ও বলেন, অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মাথা থেকেই বেরিয়েছিল, যা বিএনপি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে। ওই ব্যবস্থায় ১৯৯১ সাল থেকে তিনটি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে বর্তমান সরকার গুরুত্বপূর্ণ প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। এ থেকে নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগও বাদ যায়নি। সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে এ সময় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে ‘তিনি অসুস্থ নন এবং জোর করে’ তাঁকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ড. মোশাররফ। প্রধান বিচারপতি যেতে চাননি বলে এ সময় উল্লেখ করেন খালেদা জিয়াও।
বৈঠকে সুষমাকে জানানো হয়, অব্যাহত গণতান্ত্রিক চর্চার কারণে ভারতে নির্বাচন কমিশন যেমন শক্তিশালী, এ দেশে তা নয়। বর্তমান সরকার কমিশনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধার সৃষ্টি করছে; সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করতে চাইছে, যা সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে বাধা। কারণ, এমন ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন দলের একজন মন্ত্রী বা এমপির পদে বহাল থেকেই নির্বাচন করে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থাকছে। অথচ বিরোধী বা অন্য দলগুলোর প্রার্থীর তেমন কোনো সুযোগই থাকবে না। এমন ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ বা সবার জন্য সমান সুযোগ নির্বাচনে থাকবে না। আর এ জন্যই সংসদ ভেঙে বিএনপি নির্বাচন চায় বলে জানান বিএনপি নেতারা।
সব কিছু খুব ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে শুনলেও সুষমা এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে শুধু কূটনৈতিক জবাবে তাঁর দেশের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে ড. আবদুল মঈন খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীও বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন বলে জানা যায়।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ মনে করেন, সদ্য সফর করে যাওয়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে বিএনপির খুশি তথা আশাবাদী হওয়ার কারণ রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা এ দেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেছেন। তিনি এ দেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চার ওপরও জোর দিয়েছেন। তাঁর এ বক্তব্য ভারতের আগের অবস্থান থেকে সরে আসারই ইঙ্গিত বহন করে।
আন্তর্জাতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির কিছুটা স্বস্তিবোধ করাটা স্বাভাবিক। কারণ এটি এখন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে যে এবার ভারতও এ দেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে আগ্রহী।
অর্থাৎ ডিম তারা এক ঝুড়িতে রাখতে রাজি নয়। এর অর্থই হলো, আগামীতে সব দল তথা জনগণের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু একটি নির্বাচন ভারত দেখতে চায়; যেটি বিএনপিরও দাবি। বিএনপি নেতাদের মধ্যেও গতকাল স্বস্তির ভাব দেখা গেছে। দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে ভারতের অবস্থান ব্যক্ত করার অর্থই তারা এ দেশে আগামীতে নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকবে। তিনি বলেন, কোনো বিশেষ দলের পক্ষে না থেকে ভারত এ দেশের জনগণের সঙ্গে আছে—এটিই আমাদের কাছে মনে হয়েছে। ফলে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির খুশি হওয়ার কারণ রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীও মনে করেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তাঁদের মতে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলার অর্থ, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে এ দেশে বার্তা দেওয়া।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আগে ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশে সর্বোচ্চসংখ্যক দলকে ভারত নির্বাচনে দেখতে চায়। ’ ওই সময় বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের অবস্থান জানতে চাইলে দেশটির বিশেষ দূত হিসেবে ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফরে আসা সুজাতা সিং ওই মন্তব্য করেন। তিনি তখন বলেন, নির্বাচনটা হতে হবে তফসিল অনুযায়ী। বস্তুত, ওই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন তথা আওয়ামী লীগ সরকারকে ভারতের সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি জনমনে স্পষ্ট হয় বলে অনেকের ধারণা। কেননা বিশ্বের ক্ষমতাধর বলে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তখনকার অবস্থান ছিল ‘সব দলের অংশগ্রহণে’ এ দেশে সুষ্ঠু একটি নির্বাচন। একমাত্র ভারতই তখন সব দলের বদলে ‘সর্বোচ্চসংখ্যক’ দলের কথা বলে। আর এ ঘটনায় ভারতের তখনকার কংগ্রেস সরকারের ওপর প্রচণ্ড রুষ্ট হয় বিএনপি। দলটির কয়েকজন নেতাকে ওই সময় প্রকাশ্যেই ভারতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।
অবশ্য ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে চেষ্টা শুরু করে। ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে বিএনপির পক্ষ থেকে ওই চেষ্টা আরো বাড়ানো হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে এলে তাঁর সঙ্গেও বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। সর্বশেষ রবিবার সোনারগাঁও হোটেলে খালেদা জিয়াসহ বিএনপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন দেশটির বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। যৌথ পরামর্শক কমিশনের সভায় যোগদানের জন্য ঢাকায় এলেও সুষমা স্বরাজের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের সম্ভাবনার বিষয়টি আলোচনায় ছিল গত প্রায় এক মাস ধরেই। খালেদা জিয়া লন্ডনে থাকায় কূটনৈতিক যোগাযোগও অনেকটা সেখানেই সম্পন্ন হয়। তবে খালেদার সঙ্গে সুষমার দেখা হবে কি না এ নিয়ে নানা আলোচনা ঘুরপাক খায় বৈঠকের আগের দিন পর্যন্ত।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি কেন বর্জন করেছে তার কারণ বিস্তারিতভাবে বিএনপি নেতারা সুষমা স্বরাজকে জানান। সূত্র মতে, পরিচয় পর্বের পর প্রথমেই একটি লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন খালেদা জিয়া। বক্তব্যে তিনি বিভিন্ন সময় ভারত সরকারের সঙ্গে ক্ষমতায় থাকাকালে তাঁর সরকারের সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোতে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের দায়িত্ব রয়েছে।
এরপর আলাপচারিতায় সুষমা স্বরাজ জানতে চান—কী কারণে বিএনপি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছে? বিএনপির জনপ্রিয়তার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এমনও বলেন, নির্বাচনে অংশ নিলে ফলাফল তো ভিন্নও হতে পারত।
সূত্র মতে, এই পর্যায়ে সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন অনুমতি নিয়ে ৫ জানুয়ারির পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে কী অবস্থা ও প্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল এবং কিভাবে ২০০৮ সালে ক্ষমতা পেয়ে ওই ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাতিল করা হয়েছে তার পুরো ঘটনা তুলে ধরেন।
বিগত জোট সরকারের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ড. মোশাররফের সঙ্গে একই সময় ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সুসম্পর্ক রয়েছে; যা বৈঠক শুরুর পরিচয় পর্বে উল্লেখ করেন সুষমা। তাঁরা দুজনই একসঙ্গে ২০০৩ সালে জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে অংশ নেন। ওই সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ড. মোশাররফ।
সহায়ক সরকারের দাবির যৌক্তিকরা তুলে ধরতে গিয়ে ড. মোশাররফ এ-ও বলেন, অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মাথা থেকেই বেরিয়েছিল, যা বিএনপি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে। ওই ব্যবস্থায় ১৯৯১ সাল থেকে তিনটি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে বর্তমান সরকার গুরুত্বপূর্ণ প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। এ থেকে নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগও বাদ যায়নি। সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে এ সময় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে ‘তিনি অসুস্থ নন এবং জোর করে’ তাঁকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ড. মোশাররফ। প্রধান বিচারপতি যেতে চাননি বলে এ সময় উল্লেখ করেন খালেদা জিয়াও।
বৈঠকে সুষমাকে জানানো হয়, অব্যাহত গণতান্ত্রিক চর্চার কারণে ভারতে নির্বাচন কমিশন যেমন শক্তিশালী, এ দেশে তা নয়। বর্তমান সরকার কমিশনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধার সৃষ্টি করছে; সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করতে চাইছে, যা সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে বাধা। কারণ, এমন ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন দলের একজন মন্ত্রী বা এমপির পদে বহাল থেকেই নির্বাচন করে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থাকছে। অথচ বিরোধী বা অন্য দলগুলোর প্রার্থীর তেমন কোনো সুযোগই থাকবে না। এমন ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ বা সবার জন্য সমান সুযোগ নির্বাচনে থাকবে না। আর এ জন্যই সংসদ ভেঙে বিএনপি নির্বাচন চায় বলে জানান বিএনপি নেতারা।
সব কিছু খুব ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে শুনলেও সুষমা এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে শুধু কূটনৈতিক জবাবে তাঁর দেশের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে ড. আবদুল মঈন খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীও বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন বলে জানা যায়।
No comments