Breaking News

রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনে প্রধান বিচারপতি ‘ক্যান্সারের’ কথা নিজেই লিখেছেন

আনোয়ারুল করিম: প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ছুটিতে যাওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার
প্রেক্ষাপটে এক মাসের ছুটি চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো তার আবেদনটি সংবাদমাধ্যমের জন্য প্রকাশ করে দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বুধবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে আনিসুল হক রাষ্ট্রপতিকে লেখা প্রধান বিচারপতির ওই চিঠিটি প্রথমে পড়ে শোনান। পরে টেলিভিশনের ক্যামেরার সামনে ওই চিঠি তিনি তুলে ধরেন এবং গণমাধ্যমকর্মীদের চিঠির ছবি তোলার অনুমতি দেন।
পরে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকের হাত থেকে সাংবাদিকরা প্রধান বিচারপতির ছুটির আবেদনের ছবি তুলে নেন।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্যাডে রাষ্ট্রপতি বরাবরে লেখা ওই চিঠিতে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ” আপনার সদয় অবগতির জন্য আমি গত বেশ কিছুদিন যাবত নানাবিধ শারিরীক সমস্যায় ভুগছি। আমি ইতোপূর্বে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ সময় চিকিৎসাধীন ছিলাম। বর্তমানে আমি বিভিন্ন শারিরীক জটিলতায় ভুগছি। আমার শারিরীক সুস্থতার জন্য বিশ্রামের একান্ত প্রয়োজন। ফলে আমি ৩ অক্টোবর ২০১৭ হতে ১ নভেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত ৩০ দিন তিনি ছুটি ভোগ করতে ইচ্ছুক। এমতাবস্থায়, আগামী ৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর তারিখ পর্যন্ত ৩০ দিনের ছুটির বিষয়ে মহাত্মনের সানুগ্রহ অনুমোদন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।”
গত অগাস্টে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকেই ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষে মঙ্গলবার আদালত খুললে প্রধান বিচারপতির অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের হুমকিও দিয়ে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা।কিন্তু তার আগেই সোমবার বিচারপতি সিনহার ছুটিতে যাওয়ার খবর আসে। সরকারের এক প্রজ্ঞাপণে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি তার এক মাসের ছুটি মঞ্জুর করেছেন এবং এই সময়ে জ্যেষ্ঠ বিচারক মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। অন্যদিকে বিএনপিপন্থিদের নেতৃত্বে থাকা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ‘জরুরি সভা’ করে সরকারের বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ আনে।আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “আপনারা জানেন, জাতি জানে, সারা পৃথিবীর মানুষ জানে, একটি জাজমেন্টের পরে তাকে একটি রাজনৈতিক দল, সরকার বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করছিল। আমরা মনে করি, সেই চাপের অংশ হিসেবে গতকাল তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তিনি ছুটিতে যাননি এবং তাকে বাধ্য করা হয়েছে।”
এর প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবারই বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ছুটিতে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। পূর্ণাঙ্গ রায়ের পরে পর্যবেক্ষণ দেওয়া বা সমালোচনা করা আমাদের অধিকার। আমরা সংক্ষুব্ধ পার্টি হিসেবে এই রায়ের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেব, জাতীয় সংসদে সেটা প্রস্তাব আকারে পাস হয়েছে। সেখানে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেটা পাস হয়েছে। সেই কারণে আমরা আইনি পদক্ষেপ নিশ্চয়ই নেব, তার সাথে মাননীয় প্রধান বিচারপতির অসুস্থতার কোনো নেক্সাস নাই। এর সাথে যদি কেউ কানেক্ট করতে চায় তো আমি মনে করব তাদের একটা দুরভিসন্ধি আছে।”
ছুটি শেষেই বিচারপতি সিনহা কর্মস্থলে ফিরবেন- এমন আশা প্রকাশ করে সেজন্য দোয়া করার কথাও বলেন আনিসুল হক।

No comments