যুবলীগ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা, সিলেট টার্মিনালে গুলিবর্ষণ
এবার প্রকাশ্য আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে টার্মিনালে রেস্টুরেন্ট দখলের ঘটনায় সিলেট
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিন কামরানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আর ওই
মামলায় আসামি করা হয়েছে শ্রমিকদের হামলায় গুরুতর আহত শাহীনকে। শাহীন
বর্তমানে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হামলার ঘটনায় সিলেটের
পরিবহন শ্রমিকরা বুধবার
সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয়। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে তারা ধর্মঘট স্থগিত করে। এরপর শুক্রবার সিলেট জেলা মিতালী পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইজ উদ্দিন দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলা করেছেন।
ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সিলেট জেলা যুবলীগের
সাধারণ সম্পাদক মহসিন কামরানকে। এছাড়া মামলায় যুবলীগ নেতা সোহেল খান, দুলাল
আহমদ, সাহেদ আহমদ ও গুরুতর আহত হওয়া ছাত্রলীগ নেতা শাহীনকে আসামি করা
হয়েছে। দক্ষিন সুরমা থানার ওসি খায়রুল ফজল গতকাল বিকেলে জানিয়েছেন- পরিবহন
শ্রমিক নেতাদের এজাহারের দাখিলের প্রেক্ষিতে থানায় মামলা রেকর্ড হয়েছে।
অবৈধভাবে প্রবেশ করে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় এ মামলা দায়ের করা হয় বলে জানান
তিনি। পুলিশ এখন আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছে। সিলেট জেলা পরিবহন
শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমদ ফলিক জানিয়েছেন- পরিবহন
মালিক সংগঠনের নেতা কালাম চেয়ারম্যান লিজ নিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় টার্মিনাল
এলাকায় রেস্টুরেন্ট করেছেন। এটি নিয়ে আদালতে বিবদমান দুই পক্ষের মামলা
চলছে। যদি আইনিভাবে কালাম ছাড়া অন্য কেউ এই রেস্টুরেন্টের মালিকানা পায়
তাহলে তো আইনিভাবে সেটি দখল করার কথা। তা না করে তারা অস্ত্র নিয়ে হামলা
করে রেস্টুরেন্ট দখলের চেষ্টা করলে এ ঘটনা ঘটে। তিনি অভিযোগ করেন- ওই দিন
রেস্টুরেন্টে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিন কামরানের নেতৃত্বে যারা হামলা
করেছিল তাদের সবার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। এবং তারা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে
ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এতে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালায়।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি খায়রুল ফজল ঘটনার পর টার্মিনাল এলাকায় ছুটে
যান। দেখেন কয়েকশ’ শ্রমিক বিক্ষুব্ধ রয়েছে। এই সময় দেখতে পান শ্রমিকরা
ছাত্রলীগ নেতা শাহীনকে লাঠিসোটা দিয়ে আঘাত করছে। সেখানে পৌঁছে ওসি শাহীনকে
ঝাপটে ধরেন। এবং শ্রমিকদের অনুরোধ করেন শ্রমিকদের শান্ত থাকার কথা বলেন।
ওসি বলেন- স্থানীয় শিরুল মিয়া নামের এক ব্যক্তির সহযোগিতায় তিনি শাহীনকে
উদ্ধার করে দ্রুত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে
টানা দুই দিন চিকিৎসা প্রদান করলেও জ্ঞান ফিরেনি শাহীনের। সিলেটের
ডাক্তাররা জানান- শাহীনের অবস্থা গুরুতর। এরপর বুধবার বিকেলে শাহীনকে বিশেষ
ব্যবস্থায় ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল বিকেলে তার অবস্থার অবনতি হলে এপেলো
হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এদিকে- টার্মিনাল এলাকায় শ্রমিকদের উপর
হামলার প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট শুরু
করে। তাদের ধর্মঘটের কারনে অচল হয়ে পড়ে সিলেটের যাতায়াত ব্যবস্থা। দুর্ভোগ
নেমে আসে যাত্রীদের মধ্যে। ওই দিনই সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার গোলাম
কিবরিয়া পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
গ্রহনের আশ্বাস দিলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। মামলা প্রসঙ্গে গতকাল
বিকেলে সিলেট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিন কামরান মানবজমিনকে
জানিয়েছেন- হাইকোর্টের নির্দেশে তাজমহল রেস্টুরেন্টের বৈধ মালিক হচ্ছেন
মিসবাউ উদ্দিন তালুকদার। কিন্তু গত ৫ মাস ধরে ফলিক ও কালাম সিন্ডিকেট কোনো
ভাড়া না দিয়ে জোরপূর্বক রেস্টুরেন্টটি দখলে রেখেছে। তারা কোনো ভাড়া দেয়নি।
ঘটনার দিন মিসবাহের পক্ষে কয়েকজন ভাড়া তুলতে গিয়েছিলেন। এ সময় ফলিক ও কালাম
চক্রের সদস্যরা লাঠিসোটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। তিনি
দাবি করেন- টার্মিনালে ওই চক্র বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র জমা রেখেছে।
তারা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলা করে উল্টো দোষ দিয়েছে আমাদের ওপর।
সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয়। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে তারা ধর্মঘট স্থগিত করে। এরপর শুক্রবার সিলেট জেলা মিতালী পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইজ উদ্দিন দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলা করেছেন।
No comments