Breaking News

মুমিনুল কেন দলে নেই!

কাল দল ঘোষণার পর থেকে সাধারণ্যে যে প্রশ্নটা ঘুরছে, সেটা বিস্ময়ের সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছে দেশের ক্রিকেট-বিশেষজ্ঞদেরও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দলে মুমিনুল হক নেই! টানা ১১ টেস্টে ফিফটি করার কীর্তি যাঁর, টেস্টে যাঁর রানের গড় ৪৬.৮৮, সেই ব্যাটসম্যানের কিনা জায়গা হয় না ১৪ জনের দলেও! জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, কোচ থেকে শুরু করে সবাই হতবাক মিনহাজুল আবেদীনের নির্বাচক কমিটি আর কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের এমন সিদ্ধান্তে।


বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেনের সংশয়, মুমিনুলের সঙ্গে এমন আচরণ তাঁর আত্মবিশ্বাসটাই টলিয়ে দেবে, ‘একজন প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানকে আমরা তিলে তিলে ধ্বংস করছি। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলেও হয়তো সে আগের মতো ভালো খেলতে পারবে না।’ গাজী আশরাফের সঙ্গে একমত জাতীয় দলের সাবেক সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, ‘আমার তো মনে হয় এরপর দ্বিতীয় টেস্টের দলে নিলেও সে ঠিকমতো পারফর্ম করতে পারবে না।’

এ দুজনের মতো জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদও মুমিনুলকে বাদ দেওয়ার কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না, ‘ওর টেস্ট গড় প্রায় ৪৭, এটা তো তাকে কেউ দিয়ে দেয়নি! মুমিনুলকে এটা অর্জন করতে হয়েছে। টেস্টে মুমিনুল থাকবে না, এটা অবিশ্বাস্য।’ দল নির্বাচনে হাথুরুসিংহের একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক এই প্রধান নির্বাচক, ‘বাংলাদেশ দলের মধ্যে এখন জাতীয় দলের আবহ নেই। এটা চলছে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের মতো। যখন যা খুশি তখন তাই করতে চাচ্ছি আমরা। শুধু কোচের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে একজন খেলোয়াড় বাদ যাচ্ছে বা দলে আসছে। এটা কখনোই ভালো কিছু বয়ে আনবে না।’

কিন্তু কোচই যদি সব করবেন, তাহলে নির্বাচকদের কাজটা কী? ফারুক তো বলছেন, তাঁরা আদৌ কোনো কাজই করছেন না, ‘নির্বাচকেরা যে কোনো কাজ করেন না, এটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। নির্বাচকেরা হয়ে গেছেন রাবার স্ট্যাম্পের মতো। একটা দল দিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা ওই দলটাকে অনুমোদন করেন, আর কিছুই না। আমার প্রশ্ন, বিসিবির তাহলে এত টাকা দিয়ে নির্বাচক রাখার দরকার কী? এই টাকাটা অন্য কোনো ভালো কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।’

গাজী আশরাফেরও ধারণা, হাথুরুসিংহের ব্যক্তিগত অপছন্দের শিকার হচ্ছেন মুমিনুল, ‘কোনো কারণে হয়তো মুমিনুলের খেলা কোচের মনঃপূত হয়নি। সে কারণেই তার প্রতি এমন আচরণ।’ কিন্তু যদি সত্যি সত্যিই তাঁর ব্যাটিং নিয়ে হাথুরুসিংহের কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে, সেটা ঠিক করার দায়িত্বও কোচের বলেই মনে করেন বিসিবির সাবেক এই পরিচালক, ‘হাথুরুসিংহে যখন দলের দায়িত্ব নেন তখন দেশে ও দেশের বাইরে মুমিনুল ছিল আমাদের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে তার উৎকর্ষ আরও বাড়ল না কেন? মাঝে শুনলাম ও নাকি অফ স্পিন খেলতে পারে না। তো সেটা তাকে শেখানোর দায়িত্ব কার? মুমিনুলের ব্যাটিং আগের চেয়ে খারাপ হয়ে গেলে তার দায় কোচকেও নিতে হবে।’
বিকেএসপির সাবেক কোচ সালাহউদ্দিনকে মুমিনুলের ‘মেন্টর’ বলা যায়। ছাত্রের দল থেকে বাদ পড়ার প্রতিক্রিয়ায় তাঁর সরাসরি প্রশ্ন, ‘ওর খেলায় যদি সমস্যা থাকে তাহলে কোচ আছেন কেন? কোচকে তো কাউকে বাদ দেওয়ার জন্য আনা হয়নি। কোচের কাজ কাউকে বাদ দেওয়া নয়। কারও সমস্যা থাকলে সেটা দূর করা।’ তবে মুমিনুলের ব্যাটিংয়ে সে রকম কোনো সমস্যা আছে বলেও মনে করেন না সালাহউদ্দিন, ‘টেস্টে বাংলাদেশে মুমিনুলের গড় সবচেয়ে বেশি। ওর ধারেকাছে কেউ নেই। প্র্যাকটিস ম্যাচেও সে রান করেছে। তা ছাড়া বাংলাদেশ দল সর্বশেষ টেস্ট খেলেছে পাঁচ মাস আগে। কাউকে দলে নেওয়া বা বাদ দেওয়ার পেছনে তাই ফর্ম বিবেচনা করার সুযোগই নেই।’
হাথুরুসিংহে আসার পর মুমিনুল পুরোপুরিই টেস্ট খেলোয়াড় হয়ে গেছেন। তাতে জাতীয় দলের সঙ্গে তাঁর অনুশীলনের সুযোগও গেছে কমে। লম্বা বিরতি দিয়ে যখনই টেস্ট আসে, তিনি পড়ে যান রান করার চাপে। অনেক দিন পরপর এসে এই চাপ নিয়ে খেলা কতটা কঠিন, খেলোয়াড়ি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে সেটা বোঝেন গাজী আশরাফ, ফারুক, সালাহউদ্দিনরাও। আর বোঝেন বলেই তাঁদের শঙ্কা—মুমিনুলের মতো প্রতিভা না এভাবেই শেষ হয়ে যায়!

No comments