কপাল খুলছে সাড়ে চারশ’ কর্মকর্তার
এদের মধ্যে রয়েছেন বিসিএস ৯ম, ১৩তম ও ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। আরও আছেন যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অতীতে পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন এমন কর্মকর্তাদের অনেকে। তবে এ যাত্রায় বিসিএস ১০ম ব্যাচের কর্মকর্তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
পদোন্নতি প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান শনিবার যুগান্তরকে বলেন, প্রশাসনের তিনস্তরের পদোন্নতির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই চলছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। কবে নাগাদ পদোন্নতি হতে পারে জানতে চাইলে ড. খান বলেন, ‘চলতি মাসের শেষ দিকে হতে পারে।’ ১০ম ব্যাচকে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় নেয়া হবে কি নাÑ এমন প্রশ্নে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, ‘এটা এখনও ঠিক হয়নি। তাদের ব্যাপারটা একটু দেরি হতে পারে।’
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার অনেকটা হঠাৎ করেই বৈঠকে বসে এসএসবি। এর আগেও কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন বোর্ডের সদস্যরা। এসব বৈঠকে তিনস্তরে সাড়ে ৪০০-এর বেশি কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে বোর্ডের সদস্যরা প্রাথমিকভাবে একমত পোষণ করেছেন। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে আরও কয়েকটি বৈঠকের প্রয়োজন হবে।
সূত্রমতে, ইতিমধ্যে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ১০০ জনের কিছু বেশি কর্মকর্তার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন নবম ব্যাচের অর্ধশত কর্মকর্তার পাশাপাশি অতীতে পদোন্নতিবঞ্চিতদের অনেকে।
উপসচিব পদে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচ, যুগ্মসচিব পদে ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। এই দুই স্তরেও আগে বিভিন্ন কারণে পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন, এমন কিছু কর্মকর্তাকে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় আনা হতে পারে। উপসচিব পদে পদোন্নতির সুপারিশ করতে ২৪তম ব্যাচের ৩৩৩ কর্মকর্তার মধ্যে ২৯০ জনের প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।
এছাড়া ২২তম ব্যাচের লেফট আউটসহ উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য প্রায় ২০০ কর্মকর্তাকে বিবেচনা করা হতে পারে। আর কয়েক জন লেফট আউট কর্মকর্তাসহ ১৩তম ব্যাচের ১৬৫জন যুগ্মসচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে অনেক আগেই। তবে এক্ষেত্রে প্রায় দেড়শ’ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) শেখ ইউসুফ হারুন বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রশাসনে তিন স্তরের পদোন্নতি দিতে কাজ চলছে। আরও কয়েকটি বৈঠক করতে হবে। এবার কতজন পদোন্নতি পাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড বলতে পারবে।’
জানা গেছে, অতিরিক্ত সচিব পদে ১০ম ব্যাচের কর্মকর্তাদের বিবেচনায় নেয়া নিয়ে এসএসবির সদস্যদের মধ্যে ভিন্নমত দেখা দিয়েছে। একপক্ষ ১০ম ব্যাচের পদোন্নতির পক্ষ নিলেও অপরপক্ষ অতীতের বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন। ইতিমধ্যে এ পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন নবম ব্যাচের ৫২ জন ও ১০ম ব্যাচের ১০২ জন যুগ্মসচিব। এছাড়া যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতিবঞ্চিত ১৯৮২ বিশেষ ব্যাচের ১৪ জন, ১৯৮৪ ব্যাচের ৬১ জন, ১৯৮৫ ব্যাচের ১৬০ জন, ১৯৮৬ ব্যাচের ৩২ জনও এ পদে পদোন্নতির দাবিদার।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, এসএসবির একজন প্রভাবশালী সদস্যের নিকটাÍীয় ১০ ব্যাচের কর্মকর্তা হওয়ায় ওই সদস্যসহ আরও দু’একজন সদস্য তাদের পক্ষে অবস্থান নেন। তাদের মতে, এই ব্যাচ ইতিমধ্যে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এর আগে তারা নবম ব্যাচের সঙ্গেই পদোন্নতি পেয়েছেন। তাদের পদোন্নতি দিতে ৮ অক্টোবর জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে একটি অনানুষ্ঠানিক পত্রও দেন বলে জানা গেছে।
অপরপক্ষের যুক্তি ১০ম ব্যাচ যোগ্যতা অর্জন করলেও তা খুব বেশি দিন হয়নি। এ কারণে এ যাত্রায় নবম ব্যাচের সঙ্গে অতীতের বঞ্চিত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে চান তারা। এতে বঞ্চিতদের ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেরিতে হলেও প্রশমিত হবে। প্রশাসনের কাজে গতি ফিরবে। পরে দু’চার মাস পর ১০ম ব্যাচকে পদোন্নতি দেয়া যেতে পারে। বিষয়টি সর্বশেষ এসএসবির বৈঠকেও আলোচনা হয় এবং ১০ম ব্যাচকে পরে পদোন্নতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১০ম ব্যাচের এক কর্মকর্তা যুগান্তরের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বঞ্চিতরা নিশ্চয় কোনো সুনির্দিষ্ট কারণেই এতদিন পদোন্নতি পাননি। এবার হঠাৎ ওইসব কর্মকর্তা কী এমন কাজ করলেন যে, পদোন্নতি দিতে হবে? নাকি অতীতে তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছিল? এর জন্য তো তারা দায়ী নন। যেহেতু তারা অতিরিক্ত সচিব হওয়ার সব যোগ্যতা অর্জন করেছেন তাই তাদের পদোন্নতি স্বাভাবিক ও নির্বিঘ্ন হবে- এটিই তাদের প্রত্যাশা।
সর্বশেষ ২৪ এপ্রিল ২৬৭ জন সিনিয়র সহকারী সচিবকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এর মধ্যে ২২তম ব্যাচেরই ১৯৩ জন কর্মকর্তা ছিলেন। এ ব্যাচের ৫২ জন কর্মকর্তাকে বঞ্চিত করার অভিযোগ ওঠে।
এর আগে গত বছরের ২৭ নভেম্বর প্রশাসনের তিনস্তরে উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে ৫৭০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয় সরকার। এর মধ্যে উপসচিব পদে ২২৭, যুগ্ম সচিব পদে ১৯৫ এবং অতিরিক্ত সচিব পদে ১৪৮ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়।
অভিযোগ আছে, পদোন্নতি দিতে গিয়ে এর দ্বিগুণের বেশি কর্মকর্তাকে সে সময় পদোন্নতিবঞ্চিত করা হয়।
প্রসঙ্গত, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বর্তমানে উপসচিবের নিয়মিত (ডিউটি) ৮৩৫টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক হাজার ৫৫৩ জন। যুগ্ম সচিবের ৪৩০টি স্থায়ী পদের বিপরীতে এ স্তরে কর্মকর্তা আছেন ৭৯৩ জন। অতিরিক্ত সচিবের ১১১টি স্থায়ী পদের বিপরীতে আছেন ৪৪৬ জন।
No comments