Breaking News

গুম, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ।


গুম, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ। এসব অপরাধে জড়িত কিছু সদস্যের শাস্তি হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে কিছু অভিযোগের সুরাহা হলেও পাঁচ বছর ধরে ঝুলে আছে ১৫৬টি অভিযোগ। তবে পুলিশ সদর দফতরের দাবি, অভিযোগের তালিকা ধরে তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই এগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি নিষ্পত্তি না হওয়া অভিযোগের একটি তালিকা কমিশনের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। কমিশন সচিব স্বাক্ষরিত ওই তালিকায় ১৫৬টি অভিযোগের মধ্যে ২০১২ সালের চারটি, ২০১৩ সালের ১০টি, ২০১৪ সালের ৫৩টি, ২০১৫ সালের ৭৩টি এবং ২০১৬ সালের ১৬টি অভিযোগ রয়েছে।
 
তালিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সর্বোচ্চসংখ্যক অভিযোগ রয়েছে গুমের। এর সংখ্যা ২৭টি। ২৪টি অভিযোগ পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের। পুলিশি হয়রানির অভিযোগ রয়েছে ২০টি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ক্রসফায়ারের অভিযোগ রয়েছে ১২টি। ৭টি অভিযোগ রয়েছে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর। সঠিক তদন্ত না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে ৪টি। জমি ও সম্পত্তি দখলের অভিযোগ রয়েছে ৪টি। ৪টি অভিযোগ রয়েছে চাঁদাবাজির। ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে ২টি করে। এ ছাড়া ঘুষ, অর্থ
 
লুটপাট, গ্রেফতারের পর অস্বীকার ও ভূমি দখলের অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
 
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক যুগান্তরকে বলেন, পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য মানবাধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে তাদের বিরুদ্ধে নিষ্পত্তি না হওয়া অভিযোগের বিষয়ে জানানো হয়। তখন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিষ্পত্তি না হওয়া অভিযোগের একটি তালিকা দেয়ার অনুরোধ জানান। এরপরই অভিযোগগুলোর একটি তালিকা দেয়া হয়।
 
চেয়ারম্যান বলেন, তালিকা পাঠানোর পর এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকেও অভিযোগগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে। আমরা ধারণা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হবে।
 
মানবাধিকার কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, কমিশনে পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা, গুম, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ জমা পড়ে। মানবাধিকারের স্বার্থে পুলিশের বিরুদ্ধে আসা এসব অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করা হয়। অধিকাংশ অভিযোগ পুলিশ তদন্ত করে প্রমাণ পায় না বলে আমাদেরকে জানায়। তবে কিছু অভিযোগের বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করে।
 
নিষ্পত্তি না হওয়া এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, সেগুনবাগিচায় পিন্টুর গ্যারেজ থেকে ফখরুল ইসলাম নামের এক যুবককে র‌্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে হত্যা করা। যশোর শহরে চাঁদা না দেয়ায় সালমান শিকদার ওরফে বিকি নামের এক ব্যবসায়ীর পায়ে পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি করার অভিযোগ। সাভার থানার ওসির বিরুদ্ধে চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীর হাত ভেঙে দেয়ার অভিযোগ। পুলিশ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন এবং থানায় মামলা না নেয়ার অভিযোগ। এ ছাড়া বিবাদীর কাছ থেকে অর্থ নিয়ে ওসির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ, মিরপুর মডেল থানার এসআই ইমানুর হোসেনের বিরুদ্ধে বাড়ি দখল ও ক্রসফায়ারের হুমকির অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৯ জন অরাজনৈতিক ব্যক্তিসহ ১৫ জনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার অভিযোগ, গাজীপুরে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মামুন আহমেদ নামে এক ব্যবসায়ীকে হত্যার অভিযোগ ইত্যাদি।
 
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস যুগান্তরকে বলেন, নিষ্পত্তি না হওয়া অভিযোগের তালিকা ইতিমধ্যে আমাদের হাতে এসেছে। ওই তালিকা ধরে তদন্তের কাজও শুরু হয়েছে। আশা করছি, চলতি বছরের মধ্যেই ১৫৬টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। তিনি জানান, তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। কোনো পুলিশ সদস্য যাতে অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে সে জন্য শাস্তির পাশাপাশি নানামুখী কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়েছে।
 
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের শুধু নিন্মপদস্থদের ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেয়া হয়। উচ্চপদস্থদের ক্ষেত্রে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে ওইসব অভিযোগগুলোর নিষ্পত্তিও হয় না। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নিষ্পত্তি না হওয়া অভিযোগগুলোর মধ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগসহ ৩৭ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা সবাই এএসআই থেকে এএসপি পদমর্যাদার। এদের মধ্যে এএসপি রয়েছেন তিনজন, ওসি ১৪ জন, পরিদর্শক তিনজন, এসআই ১৩ জন এবং এএসআই রয়েছেন চারজন। এসব কর্মকর্তার মধ্যে ২০১৬ সালে পিঠ মোড়া দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে একজন এএসপির বিরুদ্ধে। একই বছরে লক্ষ্মীপুরে সন্তোষ কর্মকার নামের এক ব্যক্তিকে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে ওই জেলার তৎকালীন এএসপির বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালে নির্যাতন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন মাদারীপুরের সার্কেল এএসপির বিরুদ্ধে।
 
নিষ্পত্তি না হওয়া এসব অভিযোগের মধ্যে ভুক্তভোগী এক পরিবারের সঙ্গে যুগান্তরের পক্ষ থেকে যোগযোগ করা হয়। ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার উত্তর কয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়া হয় জাফর ইকবাল (২৫) নামের এক যুবককে। জাফরের মা আনোয়ারা বেগম যুগান্তরকে বলেন, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জাফরকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর আর তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় থানায় জিডি করতে গেলেও জিডি নেয়নি পুলিশ। পরে আমরা আদালতে মামলা করি। আদালত থেকে মামলার তদন্তভার দেয়া হয় পুলিশকে। চার মাস পর পুলিশ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। কিন্তু ওই প্রতিবেদনে জাফরকে অপহরণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও কারা অপহরণ করেছে বা কী কারণে অপহরণ করা হয়েছে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। পরে মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য পাঠানো হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে। বর্তমানে পুলিশের বিশেষায়িত এ ইউনিট ওই মামলার তদন্তকাজ পরিচালনা করছে।
সুত্রঃ প্রথম আলে।
 

No comments