স্ক্যান্ডালের কল্যাণে তারা রাতারাতি বিশ্বতারকা বনে যান।
স্ক্যান্ডালের কল্যাণে তারা রাতারাতি বিশ্বতারকা বনে যান। স্ক্যান্ডাল থেকে উঠে আসা তেমন কিছু তারকা নিয়ে লিখেছেন— তানিয়া তুষ্টি
কিম কার্দেশিয়ান
মার্কিন রিয়েলিটি টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, অভিনেত্রী, সমাজকর্মী, ব্যবসায়ী এবং মডেল হিসেবে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে কিম কার্দেশিয়ান। ভক্তদের কাছে তিনি একটি স্যানসেশানের নাম। বিশেষ করে তার সুঢৌল শারীরিক গঠনও অনেকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। নারী ভক্তদের অনেকেই নিজের দৈহিক গড়ন প্রিয় তারকা কিমের মতো করার প্রত্যয়ে সার্জারিও করিয়ে থাকেন। সহজেই বোঝা যাচ্ছে এই তারকার দর্শকপ্রিয়তা কতখানি শীর্ষে। এমন টপ লেভেলের একজন তারকারও উঠে আসা স্ক্যান্ডালে ভর করে। অথচ মিডিয়াতে কিমের যাত্রা ছিল খুবই সাধারণভাবে। ২০০৩ সালে সাবেক সঙ্গী রে জে-এর সঙ্গে একটি যৌনকর্মের ভিডিওতে জড়িয়ে পড়েন। ভিডিওটি ফাঁস হয় ২০০৭ সালে। সেক্স টেপটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর ভিভিডের নামে কিম মামলা করেন। কিন্তু ভিভিড ঘটনাটি ৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে মিটিয়ে ফেলেন। এত পরিমাণ টাকা এই ধরনের ইস্যু কিনে ফেলার সক্ষমতাও আরেকটি মুখরোচক আলোচনা টেনে আনে। তাকে নিয়ে আলোচনায় আরেকটু যোগ হয় পরিবারসহ রিয়েলিটি শো ‘কিপিং আপ উইথ দ্য কার্দেশিয়ানস’ এ যোগদান। এই শোর মাধ্যমে পুরো পরিবারই স্টার বনে চলে যায়। অবশ্য সবার মাঝে কিম নিজেই বেশি জনপ্রিয় হয়ে টিকে আছেন। এখন পর্যন্ত প্রায়ই নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিডিয়ায় তিনি থাকেন আলোচিত ও সমালোচিত। স্ক্যান্ডাল বা দুর্নাম যাই বলা হোক না কেন তা হয়তো তিনি কবর দিয়ে ফেলেছিলেন নিজেদের কারিকুরিতে। তবু এখন পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় সেটা নিয়ে এখনো যথেষ্ট আলোচনা চলে। কিমের এই তারকাখ্যাতি ব্যক্তিজীবনের অনেক অর্জনে যথেষ্ট সহায়তা করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজের পরিচয়ে কিছু ব্যবসা পরিচালনা করে চলেছেন। এর মধ্যে মোবাইল গেম, মেকআপ পণ্য এবং ২০১৫-এ ছবির বই সেলফিস। সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত টেলিভিশন রিয়েলিটি ব্যক্তিত্বের মধ্যে তিনি সবার উপরে উঠে আসেন।
অ্যান্থনি ওয়েইনার
প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট এজেন্ট অ্যান্থনি ওয়েইনার। হিলারি ক্লিনটনের খুব কাছের লোক। টুইটারে এক নারীর সঙ্গে অ্যান্থনি ওয়েইনারের যৌন কেলেঙ্কারির খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিচিত মহলসহ দলের কাছে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। ২০১৫ সালের জুলাইয়ের দিকে এক নারীর সঙ্গে অ্যান্থনির কিছু আপত্তিকর টুইট আদান-প্রদান হয়েছিল। টুইটারে তিনি ওই নারীকে আপত্তিকর ছবি ও এসএমএস পাঠান। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরই বিশ্ব মিডিয়ায় তিনি আলোচিত ও সমালোচিত হতে থাকেন। তবে পুরো বিষয়টিই নেতিবাচক অর্থে হয়তো দেখার সুযোগ নেই। কারণ তার পরিচয় সবার কাছে স্পষ্ট হয়েছে। সবাই তাকে চিনেছে। অ্যান্থনির এই যৌন কেলেঙ্কারিই প্রথম নয়, এর আগে যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর ২০১১ সালের জুনে তিনি কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন। তারপরই দেশটির বিশিষ্ট টিভি শো উপস্থাপক জেরি স্প্রিঙ্গারের শোতে হাজির হন। সেখানে নিজের সম্পর্কে খোলাখুলি উপস্থাপন করেন। তাতেই জনপ্রিয়তা এত তুঙ্গে ওঠে যে, রাজনীতি থেকে বিদায় তো দূরে থাক, নতুন করে অধিষ্ঠিত হন অপেক্ষাকৃত উচ্চ পর্যায়ে। বলা যেতে পারে স্ক্যান্ডালই তার জন্য ভালো কিছুর সূচনা করে।
অ্যামি ফিশার ও জো
আমেরিকান নাগরিক অ্যামি ফিশার ‘দ্য লং আইল্যান্ড ললিতা’ হিসেবে পরিচিত ১৯৯২ সাল থেকে। সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৭। তখন মেরি জো বুট্টাফুয়োকো নামের এক নারীকে অ্যামি মাথা বরাবর গুলি করেন। কিন্তু সৌভাগ্যবশত সে যাত্রায় তিনি বেঁচে যান। এর পেছনের কারণ হিসেবে পাওয়া যায়, ওই নারীর স্বামী জো বুট্টাফুয়োকোর সঙ্গে অ্যামির প্রেমের সম্পর্ক। তাদের সম্পর্কটি গভীরতর হওয়ায় আর কোনো বাধা মানতে পারছিলেন না কিশোরী অ্যামি। আর সে কারণে মেরি জোকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন। এমন গুরুতর আচরণে অ্যামিকে সাত বছরের জেলও খাটতে হয়। তারপর ১৯৯৯ সালে প্যারোলে মুক্তি লাভ করেন। ঘটনাটি তখন অনেক বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করে। দেশবাসীর কাছে তার পরিচিতিও হয় এত অল্প বয়সে পরকীয়ার জেরে খুনের উদ্যোগ নেওয়ায়। এই পরিচিতিই পরবর্তীতে তিনি কাজে লাগান। হয়ে ওঠেন লেখক ও পর্নোগ্রাফি অভিনেত্রী। কাউকে খুন করতে চাওয়ার মতো এমন বিধ্বংসী-পূর্বক পরিচয়ই মূলত অ্যামিকে খুব সহজে এই জগতে তারকায় পরিণত করে। এদিকে পরকীয়ার জেরে নিজের বউয়ের ওপর হামলা জোকেও বিখ্যাত করে তোলে। তিনি সে সময় খবরের শিরোনামে ওঠে আসেন। একটি গাড়ি কারখানার মালিক হওয়া সত্ত্বেও তাকে এখনো সবাই এক নামে চেনে।
ফারাহ আব্রাহাম
আমেরিকান রিয়েলিটি টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ফারাহ আব্রাহাম। তিনি ব্যাপকভাবে দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেন ২০০৯ সালের রিয়েলিটি টেলিভিশন সিরিজ ‘১৬ অ্যান্ড প্রেগন্যান্ট’-এর মাধ্যমে। এই অনুষ্ঠানের প্রধান বিষয় ছিল প্রতিটি তরুণী মায়ের গর্ভাবস্থা ও গর্ভাবস্থার প্রথম মাসের বাস্তবিক অবস্থা পর্যালোচনা। শোটি দর্শকের মাঝে দারুণভাবে প্রভাব ফেলে। এর পরের বছর আরেকটি রিয়েলিটি শো ‘টিন মম’ নিয়ে হাজির হন। তিনি ছিলেন টিন মম অনুষ্ঠানের একটি মাদার কাস্ট। এটি চার সিজনে শেষ হয় ২০১২ সালে। সেই বছর তিনি ‘মাই টিনেজ ড্রিম এন্ডেড’ নামের একটি বই প্রকাশ করে। বইটি দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের মতে বেস্ট সেলার হয়। এত এত বিশেষ গুণের অধিকারী যে নারী তার জনপ্রিয়তা ও তারকাখ্যাতি কতটা তা খুব সহজেই অনুমেয়। কিন্তু এই তারকারও ওঠে আসার পেছনে রয়েছে সেক্স স্ক্যান্ডাল। আর সেই স্ক্যান্ডালই নাকি তাকে বিখ্যাত করেছে। নতুন কাজের ব্যাপকভাবে স্বীকৃতি পেতে সহায়তা করেছে। ২০১২ সালে তিনি যখন টিন মম শো-এর সমাপ্তি টানেন তার পরই তাকে নিয়ে শুরু হয় নানা গল্পকথার। তিনি এতটাই আলোচনায় ওঠে আসেন যে, শো-এর বাকি চরিত্রগুলো কেমন যেন ম্রিয়মাণ হতে থাকে। তবে এই আলোচনা প্রশংসাসূচক নয়। সেটি ছিল ফারাহর একটি সেক্স টেপ। টেপটি তৈরি হয় পর্নোস্টার জেমস ডিনের সঙ্গে। এরপর সেটি হয়ে ওঠে মানুষের কাছে খুবই আকর্ষণের বিষয়। এটিই সম্ভবত মিডিয়াতে প্রথম যেখানে কারও নামে প্রচার হওয়া স্ক্যান্ডাল কারও এত বেশি খ্যাতি এনে দিতে পারে। এই সেক্স টেপের তার মূল যৌনকর্মের অংশটি তাকে সবার কাছে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দিতে থাকে।
জেরি স্প্রিঙ্গার
ব্রিটিশ আমেরিকান টেলিভিশন প্রেজেন্টার জেরি স্প্রিঙ্গার। এত অল্প কথায় তার পরিচয় দেওয়া সম্ভব হলেও তার জনপ্রিয়তার ব্যাপ্তি অনেক বেশি। তার গুণের খাতা খোলা হলে দেখা যাবে তিনি আইনজীবী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, খবর পাঠক, অভিনেতা এবং সংগীত ব্যক্তিত্ব। তিনি ট্যাবলয়েড টকশো ‘জেরি স্প্রিঙ্গার-এর হোস্টিং করছেন ১৯৯১ সাল থেকে। এই অনুষ্ঠানটি তাকে বিশ্ব মিডিয়ায় এক নামে পরিচিত করিয়ে দেয়। ১৯৭০ সালে রাজনীতিতে তিনি কংগ্রেস দলের অনুসারী ছিলেন। রাজনীতিতে থাকা অবস্থায় তিনি সাংবাদিকতাও করেন। এ ছাড়াও এরই মাঝে অভিনয় জীবন, সংগীত সাধনা সবই চলে। খুব অল্প দিনের কথা যখন জেরি স্প্রিঙ্গার সিনসিনাটি রাজ্যের মেয়র ছিলেন, তিনি তখন পাশের একটি ম্যাসেজ বাজে একটি বাস্তবতার শিকার হন। সেখানে তিনি একটি কলঙ্কজনক চেক রচনা করেন। চেকটির জনসম্মুখে প্রকাশ রীতিমতো মানহানিকর। জেরির ক্ষেত্রেও ঘটল ঠিক সেটাই। পারলারে হঠাৎ একদিন রেইড হলো। অন্যান্য তথ্য প্রমাণাদির সঙ্গে পুলিশ জেরির লেখা সেই চেকটি উদ্ধার করে। চেকটি ছিল মূলত ‘যৌনকর্মী’ সার্ভিসের জন্য। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে নিজেই একটি সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭৪ সালের এই ঘটনায় একটি প্রেস কনফারেন্স ডেকে জেরি কারও আদেশের অপেক্ষা না করে দায়িত্ব থেকে অবসর নেন। জেরির এমন আত্মপক্ষ সমর্পণ জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়। এরই প্রতিফলন ঘটে ১৯৭৫ সালের রাজ্যটির মেয়র নির্বাচনে। তাকে দ্বিতীয়বারের মতো আবার নির্বাচন করে সে এলাকার জনগণ। এক কথায় এই স্ক্যান্ডাল তাকে সুপারস্টার বনে নিয়ে যায়। অথচ এমন কোনো ঘটনা সাধারণত মানুষের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে ধূলিস্যাৎ করে দেয়। যাই হোক, তিনি সিনসিনাটির দ্বিতীয় মেয়াদের মেয়র হলেও খুব ভালো অবদান রাখতে সক্ষম হন তা কিন্তু নয়। তার পরই তিনি একটি টেলিভিশন শো করতে শুরু করেন। দিন গড়াতে থাকে জনপ্রিয়তার পাল্লা ভারী করে। এক সময় তিনিই হয়ে যান সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। যা তার টপ ভায়োলেন্স ও নগ্নতাকে ছাপিয়ে যায়।
Post Comment
No comments