Breaking News

বদলে দিবেন সৌদি আরব :প্রিন্স



                                                                       ফাইল ছবি
২০১৫ সালের আগে সৌদি আরবের বাইরে খুব কম লোকই প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম শুনেছিল। ওই বছর তার বাবা সালমান বিন আবদুল আজিজ সৌদির সিংহাসনে আরোহণ করেন। সেই থেকে নানা তৎপরতার মধ্য দিয়ে ৩২ বছর বয়সী প্রিন্স বিন সালমান বিশ্বের শীর্ষ তেল রফতানিকারক দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন।



সৌদি আরবের মন্ত্রিসভা দেশটির চলমান অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে একটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পুনর্গঠন পরিকল্পনায় একমত হয়েছে। ভিশন-২০৩০ নামে পরিচিত এ পরিকল্পনায় আগামী ১৪ বছরে কীভাবে সৌদির অর্থনীতি আবার গড়ে তোলা হবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত বলা হয়েছে। আর এই মহাপরিকল্পনার পুরোভাগে রয়েছেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।

তেল দিয়ে বেশি দিন চলা যাবে না, এটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারেন মোহাম্মদ। এ বোধোদয় থেকে ২০১৬ সালে সৌদি সরকার বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। আর এ মহাপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে তেলনির্ভর অর্থনীতির বাইরে নতুন নতুন শিল্প খাতে বিনিয়োগ ও তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং এ লক্ষ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থিক তহবিল তৈরি করা। তবে সংস্কার পরিকল্পনার পর প্রায় দু’বছর পরও সৌদি কর্মকর্তারা কীভাবে অর্থ সঞ্চয় করতে হবে এবং অর্থনীতি সচল রেখে সামাজিক পরিবর্তনের গতি কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায় সে প্রশ্নের মোকাবেলা করছেন। বিশ্বের সবচেয়ে রক্ষণশীল ধর্মীয় কাঠামোর মধ্যে সামাজিক পরিবর্তন বাস্তবায়ন তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

গত মাসে নিউইয়র্কে ব্ল–মবার্গ গ্লোবাল বিসনেস ফোরামে গোল্ডম্যান স্যাকসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লয়েড ব্ল্যাঙ্কফিন বলেন, ‘দেশটির এটা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। তবে বিশ্বের জন্য এর একটা তাৎপর্য রয়েছে।’ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি সঠিক সমাধান বের করা না গেলে দেশটি একটি গভীর বিপদে পড়বে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদী ঘরানার অর্থনীতির অর্থায়নে সম্পদ ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। এর ফলে সৌদি জনগণ আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে এবং এরই মধ্যে মন্থর অর্থনীতি আরও খারাপের দিকে যাবে। গত সপ্তাহেই দেশটির অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আল জাদান বলেন, জ্বালানি খাতে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি ক্রমেই কমে যেতে পারে। এছাড়া বাজেট ভারসাম্য আনতে আরও সময় লাগতে পারে।

দেশটির বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী, বিশ্লেষক, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী ও সরকারি উপদেষ্টাদের কথা বলে জানা গেছে, তেলের দাম কমে যাওয়ার পর সরকারি ভর্তুকি কমে যাওয়ায় নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে দেশটির ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো। এদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের ব্যবসায় মন্দার জন্য ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের হস্তক্ষেপ ও কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েনকে দায়ী করেছেন।

রাজধানী রিয়াদের একজন ব্যবসায়ী তুর্কি আল রশিদ বলেন, কাতার, ইয়েমেন, সিরিয়া ও ইরাক আঞ্চলিক এসব সমস্যাকে সৌদি অর্থনীতির ‘প্রকৃত হুমকি’ বলে মনে করছেন। তা সত্ত্বেও সৌদি সরকারের সংস্কার পরিকল্পনার ব্যাপারে আশা ছাড়ছেন নে আল রশিদ। তিনি বলেন, ভিশন-২০৩০ কাজে লাগতে পারে। তবে এর সঙ্গে সৌদি সরকারের নেয়া অতীতের সংস্কার পরিকল্পনার ব্যর্থতার কথা স্মরণ করেন তিনি। এখন থেকে ১৫ বছর আগে নেয়া ভিশন-২০২০ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়।

জেদ্দার একজন চশমা ব্যবসায়ী হেলমি নাতো। তিনি জানান, তিন বছর আগে তার কোম্পানির বিক্রয় কমতে শুরু করে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে।’ অর্থনীতির মন্থরতা তাকে একজন সেলিব্রেটি তারকা থেকে একজন বেকুব কৃষকের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে বলে জানান তিনি। রিয়াদের তিনটি কফিশপ ও দুটো রেস্টুরেন্টের মালিক ৩৬ বছর বয়সী দায়ের আল ওতায়বি নিজের কোম্পানি বাঁচিয়ে রাখার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন বলে জানান। তার দোকানগুলোতে বিক্রি ৩৫ শতাংশ কমে গেছে বলে জানান তিনি।

No comments